গল্প

ইঁদুরের ফাঁদে বিড়াল

ইঁদুররা বিড়াল দেখলেই খুপরির মুখে এসে বসে এবং কয়েকটা ইঁদুর একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুপরির গভীরে, তা দেখে শিকাররত বিড়ালও তাদের পেছনে পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গর্তের গভীরে এবং ফাঁদে আঁটকে যায়, ওপরে ওঠার আর পথ খুঁজে পায় না কোনো বিড়াল

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অপু চৌধুরী
লোকালয়ের কাছাকাছি খুপরিতলার ঘন বন, পাশে নদীও রয়েছে একটি। পুরো বনটি ইঁদুর ছাড়াও নানারকম প্রাণীর বসবাসের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। শহর থেকে বড় বড় গাড়িতে করে ভালো ভালো ময়লা খাবার এনে রেখে যাওয়া হয় সেখানে। সব সময় খাবারের সুঘ্রাণে মৌ মৌ করতে থাকে এই খুপরিতলার গ্রাম। নানারকম গাছপালা, ফুল-ফল আর ছোট বড় অনেক খুপরি অর্থাৎ গর্ত থাকায় দূরদূরান্ত থেকে বহু ইঁদুর এখানে এসে সুখীর নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছে। যার ফলে, লোকালয়ের বাসাবাড়িতে ধীরে ধীরে ইঁদুর কমে যেতে থাকে, কমে যেতে থাকে ইঁদুরের উৎপাতও; আর তাই বিড়ালদের কদরও কমে যেতে থাকে সেখানে। গেরস্তরা আগের মতো খাবার দেয় না বিড়ালদের। খাদ্যের অভাবে তারা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। একদিন বেশ কিছু বিড়াল আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা বনে চলে যাবে, বনে গিয়ে তাদের ভাগিনা-বাঘের সঙ্গে থাকবে, বাঘ মানেতো বনের রাজা, যাদের মামা-মাসী হলো এই বিড়াল। সুতরাং, বনে গেলে কোনো অভাব যেমন থাকবে না ভয়ও থাকবে না। কথামতো একদিন সকালে সব বিড়াল বনের বাঘের গুহার মুখে উপস্থিত। বাঘ গুহার ভেতরে থেকে কারো আগমন আঁচ করতে পেরে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, জিজ্ঞেস করে, -তোমরা কারা? কোত্থেকে এসেছ? কেন এসেছ? বিড়াল ভয় পেয়ে গেলেও নিরুপায় হয়ে বলতে থাকে। \হ-বাবা, আমরা তোমার মামা-মাসী, লোকালয় থেকে এসেছি, বিপদে পড়ে তোমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি। - হুম..ম..ম, আমিতো বনের রাজা, বনেতো সবাই আমাকে ভয় পায়, তোমরা কি আমাকে ভয় পাও না? এত সাহস কোত্থেকে পেলে তোমরা? কথা নেই, বার্তা নেই অথচ সরাসরি গুহার মুখেই চলে এলে। - বাবারে, আমরাও তোমাকে ভীষণ ভয় পাই, কিন্তু আমরা যে তোমার মাসী-মামা! আমরা কি এতটুকু সাহায্য তোমার কাছ থেকে পেতে পারি না? -ঠিক আছে কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি বলো, তোমরা কী চাও! বিড়ালরা সবিস্তারে সব কথা খুলে বলল, বাঘ হুঙ্কার দিয়ে হেসে ওঠে, বলে.... - হুম....ম...ম, এ সহায়তাটুকু করা যাবে; তোমরা খুপরিতলায় যাও। ওখানে ইদানীং খুব ইঁদুরের সংখ্যা বেড়েছে, ওরা খুব ভালো ; আমি কোথাও আঁটকে গেলে এরা দল বেঁধে এসে মুক্ত করে দেয়। আমাকে খাদ্য শিকারেও সহায়তা করে। ওখানে ভালো ভালো খাবারও আসে শহর থেকে। তোমরা ইচ্ছে করলে ওখানে স্থায়ী ভাবে থাকতে পার। বাঘের কথা শুনে বিড়ালরা মহাখুশিতে খুপরিতালায় চলে যায়, তারা দেখতে পায় শহরের বাসাবাড়ির ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবারের পাহাড় হয়েছে এখানে, আর তা খেয়ে খেয়ে ইঁদুরেরা খুব নাদুস-নুদুস হয়ে গেছে। বিড়াল বুঝতে পারে বাসাবাড়িতে ইঁদুর কমে যাওয়ার কারণ। তাই তারা ফন্দি করে সময়ে-সুযোগে ইঁদুর পলস্নীর ঘরে ঘরে হানা দিতে শুরু করে। প্রতিদিনই কয়েকটা করে ইঁদুর ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এই বিড়ালরা। বিড়াল আতঙ্কে অতিষ্ঠ ইঁদুররা বাঘের কাছে নালিশ জানাতে গিয়ে ছড়া কেটে কেটে বলতে থাকে, -খুপরিতলার ইঁদুর পলস্নীর \হশুনতে দুখের কথা \হবনের রাজা গুহা মশায় \হভাঙুন নিরবতা! সঙ্গে সঙ্গে গুহার ভেতর থেকে বাঘও ছড়ায় ছড়ায় বলতে থাকে- কি হয়েছে খুপরিতলার বদ ইঁদুরের দল এই সকালে তোদের এত কীসের কোলাহল? ইঁদুররা বিড়ালের নানা অপকীর্তি ও অত্যাচারের কথা খুলে বললে বাঘ খুব কষ্ট অনুভব করে কিন্তু সেই মুহূর্তে কিছু করার নেই তার, কারণ বিড়াল একদিকে তার মামা-মাসী; অন্যদিকে, খুপরিতলার ইঁদুর পলস্নীতে থাকার জন্য তাদের পথ বাতলে দিয়েছে সে নিজেই। মহা চিন্তায় চিন্তিত বাঘ উপায় খুঁজতে শেয়ালকে ডেকে পাঠাল। শেয়ালের পরামর্শ মতে বাঘ ইঁদুরদের পথ বাতলে দিলে, ইঁদুররা সবাই খুপরিতলার বড় বড় এবং খাড়া গভীর খুপরি অর্থাৎ গর্তগুলোর সামনে গিয়ে জমায়েত হয়। এরকম প্রতিটা গভীর খুপরির মুখে ইঁদুররা বাসা বেঁধে থাকতে শুরু করে। গভীর খাড়া গর্তগুলোর নিচে পাশাপাশি ছোট ছোট আরো গর্ত বা খুপরি থাকায় ইঁদুররা সহজে যাতায়াত করতে পারলেও বিড়ালের মতো বড় কেউ তাতে যাতায়াত করতে পারে না। সে সুযোগকে ফাঁদে পরিণত করতে ইঁদুররা বিড়াল দেখলেই খুপরির মুখে এসে বসে এবং কয়েকটা ইঁদুর একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুপরির গভীরে, তা দেখে শিকার রত বিড়ালও তাদের পেছনে পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে গর্তের গভীরে এবং ফাঁদে আঁটকে যায়, ওপরে ওঠার আর পথ খুঁজে পায় না কোনো বিড়াল। কঠিন দুর্ভাগ্য ডেকে আনে জীবনে, ইঁদুর ধরার চিন্তা ভুলে গিয়ে তারা জীবন বাঁচানোর পথ খুঁজতে মিঞ মিঞ করে ইঁদুরের কাছেই সাহায্য চাইতে থাকে। ততক্ষণে ইঁদুরগুলো আবার খুপরির মুখে উঠে এসে বিড়ালকে উদ্দেশ্য করে ব্যঙ্গ করে ছড়া কাটতে থাকে: বাঘের স্বজন হুলো বিড়াল গর্তে কাটাও রাত গর্ততো নয় শেয়াল মামার পাতান মরণ ফাঁদ।