গল্প
গুপ্তধন উদ্ধার
মিথ্যা কথা বলা এবং অন্যকে খারাপ দেখানো বড় ভুল। বন্ধুদের মধ্যে বিশ্বাস রাখা খুবই জরুরি। বন্ধুত্ব হলো এমন একটি সম্পর্ক, যেখানে সততা ও সম্মান থাকা উচিত।
প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আবু সাইদ
পঞ্চম শ্রেণির টুটুল খুবই খুশি ছিল। আজ সে তার নতুন পেন্সিল, নতুন খাতা আর টিফিনের জন্য ২০ টাকা নিয়ে স্কুলে এসেছে। স্কুলে গিয়ে সবাইকে দেখাতে তার মন চাইছিল। কিন্তু দুপুরের খাবারের পর সে দুঃখজনক এক ঘটনার সম্মুখীন হলো। তার ব্যাগ থেকে সবকিছু গায়েব!
টুটুলের চোখে পানি চলে এলো। সে চিন্তা করছিল তার শ্যামবর্ণের চেহারায় যেন কালো মেঘের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হলো। সে তার সব বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, 'আমার জিনিসগুলো কে নিয়েছে?'
সবাই বলল, 'আমরা তো নিইনি।'
টুটুল খুব দুঃখ পেল। সে মনে মনে ভাবল, 'আমি এখন কী করব? নতুন পেন্সিলটা দিয়ে কত সুন্দর করে ছবি আঁকতাম!' ঠিক তখনই তার এক বন্ধু, মিঠু বিদু্যৎ চমকের মতো আশার আলো নিয়ে তাকে বলল, "চিন্তা করিস না টুটুল, আমরা একসঙ্গে এই রহস্যের সমাধান করব।' টুটুলের মন তখন সন্ধ্যা প্রদীপের মতো কিছুটা আলোকিত হলো।
সবাই মিলে একটা দল গঠন করল। তারা নিজেদের নাম দিল 'গুপ্তধন উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দল'। দলের প্রধান হলো মিঠু। সে বলল, 'আমাদের প্রথমে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে। হয়তো কেউ একটু মজা করতে এগুলো নিয়েছে।'
তারা সবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কিন্তু কেউই স্বীকার করল না।
মিঠু ভাবল, 'এভাবে না হলে অন্য কৌশল ব্যবহার করতে হবে।' সে বলল, 'আমরা সবার ব্যাগ চেক করব। হয়তো কেউ ভুলে এগুলো নিয়ে ফেলেছে।' সবাই মিলে সবার ব্যাগ চেক করল, কিন্তু কিছু পেল না। মিঠু হতাশ হয়ে পড়ল। তখন তার মাথায় আরেকটি বুদ্ধি এলো। সে বলল, 'আমরা সবার কাছে একই রকম একটি প্রশ্ন করব। যে সবচেয়ে বেশি ঘাবড়াবে, সেই সন্দেহভাজন।'
তাদের প্রশ্ন ছিল, 'তোমার কাছে কি কোনো নতুন জিনিস আছে?'
সবাই সাধারণভাবে উত্তর দিল। কিন্তু যখন তারা মিহিরের কাছে প্রশ্ন করল, সে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। কারণ মিহির ছিল লাজুক ও ভীরু প্রকৃতির। মিঠু মিহিরকে ভালোভাবে লক্ষ্য করল, মিহির যেন কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে।
সবাই মিলে মিহিরকে আবার প্রশ্ন করতে লাগল। মিহির ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো। কিন্তু পরে যখন তার ব্যাগ সম্পূর্ণভাবে চেক করা হলো, তখন জিনিসগুলো পাওয়া গেল। সে ভয়ে বলল, 'আমি ভুল করেছি। আর কখনো এমন কাজ করব না।'
টুটুল তার সব জিনিস ফিরে পেয়ে খুশি হলো। সে মিহিরকে ক্ষমা করে দিল। কিন্তু মিঠু মনে মনে একটু অস্বস্তি অনুভব করল। সে ভাবল, 'আমি কেন এমনটা করলাম? মিহির তো নিরীহ একটা ছেলে।'
পরে মিঠু বুঝতে পারল যে, সে আসলে মিহিরকে খারাপ দেখাতে চেয়েছিল। তার জন্য মিঠুর মন খারাপ হলো। সে টুটুলের কাছে গিয়ে সব সত্যি কথা বলে দিল। টুটুল প্রথমে রেগে গেলেও, মিঠুর অনুতপ্ত মুখ দেখে তাকে ক্ষমা করে দিল।
এই ঘটনার পর থেকে সবাই শিখল যে, মিথ্যা কথা বলা এবং অন্যকে খারাপ দেখানো বড় ভুল। বন্ধুদের মধ্যে বিশ্বাস রাখা খুবই জরুরি। বন্ধুত্ব হলো এমন একটি সম্পর্ক, যেখানে সততা ও সম্মান থাকা উচিত।