গল্প
তেঁতুলগাছের ভূত
সাজিদ কাজটা তুমি ভালো করনি। ভয় দেখানো ভালো মানুষের কাজ নয়। তাছাড়া, এসব গাছের গুহার ভেতরে বিষধর সাপ থাকে। আর কোনো দিন এমন কাজ করবে না। সাজিদ মুখে কিছু বলল না, কেবল মাথা নেড়ে সায় জানাল
প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
উজাড় বাড়ি আসলে উজাড় নয়। একটা সময় গভীর জঙ্গলে ছাওয়া ছিল। এই বাড়ির নাম শোনামাত্রই এখনো মানুষের গা ছমছম করে ভয়ে। যদিও আগের মতন ঝোপঝাড় এখন আর নেই। তবে এখনো যে পরিমাণ গাছগাছালি আছে, তাও একেবারে কম নয়। বিশেষ করে নাম না জানা কয়েকটি বড় বড় গাছ। এদের ডালপালাগুলোও এত বিশাল যে, মাঝারি আকারের গাছের চেয়ে বড় এবং মোটা। এখনো এই উজাড় বাড়িতে এমন কয়েকটি জায়গা আছে, যেখানে সূর্যের আলোকেও অনেক কষ্ট করে প্রবেশ করতে হয়। সেই উজাড় বাড়ির উত্তর পাশে একটি তেঁতুলগাছ আছে। ইয়া বড়সড়। সেই তেঁতুলগাছের তলায় একটা ধানী জমি। সেই জমিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ডাকসই খেলে। মাগরিবের আজান হলেই যে যার বাড়িতে ফিরে যায়।
\হপ্রতিদিনের মতন আজও সবাই সেখানে খেলাধুলা করছে। তাদের আনন্দের যেন আর সীমা নেই। কখন যে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে কেউ খেয়াল করেনি। এমন সময় তেঁতুলগাছের ভেতর থেকে একটি আচানক আওয়াজ বেরিয়ে এলো। আর সেই আওয়াজটা হলো, তেঁতুল... তেঁতুল... তেঁতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে...! এই ভয়ংকর কথাগুলো সবার আগে যার কানে ঢুকল, তার নাম ঐশী। ঐশী তখন চিৎকার করে বলল, সবাই খেলা বন্ধ কর। আমি তেঁতুলগাছের ভেতর একটি ভয়ানক আওয়াজ শুনেছি। সঙ্গে সঙ্গে সবাই খেলা বন্ধ করে ঐশীকে ঘিরে ধরে বলল, তুমি কী শুনেছ? তাড়াতাড়ি বল! আমাদের আর তর সইছে না। এমন সময় আরও জোরেশোরে সেই আওয়াজটি আবার স্পষ্ট শোনা গেল।
তেঁতুল... তেঁতুল... তেঁতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে...!
ইউশা বলল, এটা নিশ্চয়ই ভূতের গলার আওয়াজ। আমি ইউটিউবে ভূতের গল্প শুনেছি। একদম সেইরকম কণ্ঠস্বর। ভূতেরা সব সময় কাঁপাকাঁপা গলায় কথা বলে। এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। সবাই চল... আমরা বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু ছোট্ট মেয়ে আরশি বলল, আমি ওসব ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করি না। বাবা বলেছেন, ভূত বলতে আসলে কিছুই নেই। ওরা কেবল গল্পেই থাকে, বাস্তবে থাকে না। আরশির কথায় সায় জানিয়ে পড়শি বলল, এটাই সঠিক কথা। আমিও শুনেছি। তখন ইউশা বলল, তাহলে তোমরা থাক, আমি চলে গেলাম। এই বলে ইউশা বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। এমন সময় ঐশী বলল, চলো আমরা দাদাভাইকে নিয়ে আসি। দাদাভাই অনেক জ্ঞানী আর সাহসী মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই এই রহস্যের একটা কিনারা করতে পারবেন। সবাই তখন সমস্বরে বলল, সেটাই ভালো হবে। সবাই চলো... চলো...। যাওয়ার সময় সবাই আবার শুনতে পেল তেঁতুল... তেঁতুল... তেঁতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে...!
যাক অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ঐশীর দাদাভাই আবদুল হামিদ সাহেবকে নিয়ে ফিরে এলো। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সবকিছু শোনে ঐশীর দাদাভাই জিজ্ঞেস করলেন, আওয়াজটা কি তেঁতুলগাছের কান্ড থেকে এসেছে নাকি শাখা-প্রশাখা থেকে? অন্য কেউ জবাব দেওয়ার আগেই আরশি বলল, আমার যতটা মনে হয়েছে আওয়াজটা তেঁতুলগাছের গোড়ার দিক থেকেই এসেছে। আরশির কথা শেষ হতে না হতেই আবার সেই আওয়াজটি শোনা গেল। এখন আরও স্পষ্ট এবং পরিষ্কার। তেঁতুল... তেঁতুল... তেঁতুল বড় টক রে, তোদের সবাইকে চিবিয়ে খেতে আমার বড় শখ রে...! ঐশীর দাদাভাই বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছি। তেঁতুলগাছের গোড়ার দিকে একটা বিশাল গুহা আছে। সেখান থেকেই আওয়াজটা এসেছে। ঐশী আমার টর্চলাইটটা দাও তো বোন। ঐশী দাদাভাইয়ের হাতে টর্চলাইটটি দিয়ে মনে মনে গৌরব বোধ করল।
সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল তেঁতুলগাছের ভূত ধরার অ্যাকশন। আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। চারপাশে সুনসান নীরবতা। সবাই বিড়ালের মতো পা টিপে টিপে তেঁতুলগাছের সেই গুহাটার মুখের সামনে এসে দাঁড়াল। ঐশীর দাদাভাই সঙ্গে সঙ্গে গুহার ভেতরে টর্চ জ্বালিয়েই হেসে উঠলেন। বললেন, আরে... সাজিদ যে! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয় বলছি। সাজিদ ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে এলো। মাটির দিকে মুখ। সবাই হা হা করে হাসতে লাগল। ঐশীর দাদাভাই বললেন, সাজিদ কাজটা তুমি ভালো করনি। ভয় দেখানো ভালো মানুষের কাজ নয়। তাছাড়া, এসব গাছের গুহার ভেতরে বিষধর সাপ থাকে। আর কোনো দিন এমন কাজ করবে না। সাজিদ মুখে কিছু বলল না, কেবল মাথা নেড়ে সায় জানাল।