ওরা তিনজন তিন প্রজন্মের। ভূতং ফুতুং চুতুং। ভূতংয়ের ছেলে ফুতং।
ফুতংয়ের ছেলে চুতং। একই সঙ্গে চলাফেরা ওদের। দেখতেও একই রকম মনে হয় দূর থেকে। কারণ, এরা তো একই বংশধর। ভূত রাজ্যে ভূতং, ফুতং ও চুতংদের পরিচিতিটাও বেশ ভালো। না চেনে এমন ভূত রাজ্যে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এরা যেমন সাহসী তেমন শক্তিশালী। অন্য প্রাণীদের কথা বাদই দিলাম, অন্য ভূতরা পর্যন্ত দেখলে ওদের ভয় করে। কারণ ওরা যেটা একবার টার্গেটকরে ওটা করেই ছাড়ে। তাই এদের সঙ্গে কেউ কখনো লাগতে আসে না ভুলেও। ভূতংয়ের বয়স সেঞ্চুরি ছুঁবে কিছুদিন পর। এই বয়সের ভূত, ভূত রাজ্যে আর নেই।
প্রাণিকুলকে ভয় দেখানোর জুড়ি নেই ভূতংয়ের। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে ভয় দেখানো ভূতংয়ের যেন নিত্য পেশা। না হলে ভূতংয়েরনাকি ঘুমও আসে না। একদিন ভূতং নাতি চুতংকে সঙ্গে নিয়ে শ্মশান খোলার জঙ্গলে যায় ভয় দেখাতে। চুতংকে বলে ও আদরের নাতি তুই আমার
সঙ্গেই থাকবি। আমি যেমন করি তুইও তেমন করবি। পারবি তো ? কেন পারব না, অবশ্যই পারব।
আমাদের ভয় করে না এমন মনুষ্য জাতি এই তলস্নাটে নেই। দেখবি ভয়ের চোটে মানুষ কান্না করে দেবে। চুতং জিজ্ঞাস করে দাদুকে, আচ্ছা দাদু, মানুষকে ভয় লাগিয়ে আমাদের কী লাভ? নাতি, এটা তুই বুঝবি না। আরও বড় হলে জানতে পারবি। তোর বাবা ফুতংও ছোট বয়সে এমন জিজ্ঞাস করত। সোজা কথায় বলি ভূতদের কাজই হলো মানুষকে ভয় দেখানো।
আচ্ছা থাক, যেই কাজে এসেছি অই কাছ ঠিকমতো করতে হবে, বুঝলি? নাতি চুতং বলে ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পর ফুতংও চলে এলো এদের সঙ্গে যোগ দিতে। যখন ঘন অন্ধকারে চোখ জোড়া নখগুলো মাথার শিং বিশালাকৃতি করে প্রদর্শন করে। তখন হঠাৎ করে কোনো মানুষ সামনে পড়লে ভয় না পাওয়ার উপায় থাকে না কারো।
ওরে মানুষ ভাইরে
একলা যদি পাইরে,
মজা তোরে দেখাব
ভয় কারে কয় শেখাব,
ভয়ের ছোটে ওরে মানুষ
হারাবি জ্ঞান হবি বেহুঁশ।
ফুতং গান গাইতে গাইতে আসছে শ্মশান খোলার জঙ্গলে। এসে বাবা ভূতংয়ের আয়োজন দেখে রীতিমত খুশি ফুতং। ছেলে চুতংকে জিজ্ঞাস করে, কিরে? তোর দাদুর কাছ থেকে ভয়ের কলাকৌশল শিখছিস তো? সায় দেয় চুতং মাথা নেড়ে।
এবার পালা ভয় দেখানো। জঙ্গলঘেঁষা রাস্তার মাঝখানে তিনজন তিন বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারো শিং লম্বা। কারো নখ লম্বা। আবার কারো ফুটবলের মতো চোখ। যে যার মতো করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। তিনজনেই একই সুরে নাগা নাগা শব্দে গান ধরে।
তোরা কে আসবি আজ আয়রে
দাঁড়িয়ে আছি ঠাঁয়,
আমরা কেমন ভূতের জাতি
বুঝবি রে ভয় পায়।
এমন সময় এক বুড়ো লোক বাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে আসছে।
সেইও রাতের অন্ধকারে ভয় তাড়ানোর গান ধরছে। আর হাঁটছে নিজের খেয়ালে।
মনের মাঝে সাহস আছে
ভয় করি না পেত্নি ভূত,
সামনে পড়লে বুঝতে পারবি
কেমন মহান ভূতের পুত?
ওমা, ভূতের নাতি বুড়ো লোকের গান শুনে নিজেই ভয় পেয়ে গেল। দাদু ভুতংকে জিজ্ঞাস করে, দাদু কি গান করছে শুনতে পাচ্ছ? দাদু বলে ধু্যত, আমরা মানুষকে ভয় দেখায় আর তুই উল্টো মানুষকে ভয় পাচ্ছস?
আমাদের ভূত জাতির মান সম্মান বলে কিছু থাকবে? তুই থাকবি পেছনে আমরা থাকব সামনে। যখন ভয় লাগাব তখন দেখবি ওর কী অবস্থা হয়। ভয়ে কাপড়চোপড় পর্যন্ত নষ্ট করে দিবে। মনে রাখিস আমরা ভূত জাতি। আমাদের নাম শুনেও মানুষরা ভয় পায়।
ধীরে ধীরে বুড়ো লোকটি শ্মশান খোলার দিকে আসছে। ভূতং, ফুতং ও চুতং যে যার মত ভেঙ্গাচ্ছে আর অঙ্গভঙ্গি করছে। বুড়ো লোকটি আওয়াজ শোনে বুঝতে পারলো ভূতের খপ্পরে পড়ছে আজ। কিছু একটা করতে হবে। না হলে ঘাড় চেপে ধরবে ভূতের দল।
ভূতং যায় লোকটির সামনে আর ফুতং ও চুতং জোরে জোরে অঙ্গভঙ্গি করে নাচছে। বুড়ো লোকটি ভূতের দল ভারী হওয়াতে মনে মনে ভয় পেয়ে গেল। তবুও মনের জোরে বলছে এই ভূতের দল, সামনে আসবি না কইলাম। আমি ভূত টুত ভয় করি না। ভূতং বলে ভয় করস না? আয় তাহলে সামনে। মজা দেখাই।
বুড়োটি সত্যি এবার ভয় পেয়ে গেল। এই সুযোগে ভূতং, ফুতং ও চুতং তিনজনই বুড়োকে ঘিরে ধরে নেচে গেয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কেউ চুল টানছে, কেউ কাতু কতু দিচ্ছে, কেউ আবার চিমটি মারছে বড় বড় নখ দিয়ে। বুড়ো লোকটি আর পারছে না নিজেকে স্থির রাখতে। সত্যি সেই ভূতের পালস্নায় পড়ছে আজ।
কোনো এক সময় বুড়োর আর হুঁশ থাকে না। নড়া চড়া না দেখে চুতং ভূতংকে বলে দাদু লোকটি মনে হয় মরে গেছে? দেখছিস এবার? ভয় কারে কয়? এই খুশিতে ভূতং, ফুতং ও চুতং নাচতে নাচতে ভূত রাজ্যের দিকে চলে গেল। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে এলো বুড়ো লোকটির। বুঝতে পারল তাকে রাতে ভূতে ধরেছে।