আচ্ছা মা, তুমি প্রতিদিন সকালবেলা এই মুরগির খাঁচায় একটা করে ডিম রেখে যাও। ডিম রেখে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর, মা মুরগিটা এই ডিমের উপরে বসে এবং আর একটা ডিম দিয়ে কক্-কক্ শব্দ করে জানান দিয়ে চলে যায়। এরপর তুমি এসে একটার বদলে দুটো ডিম তুলে নিয়ে যাও। এরকমের কাজ কী কারণে কর? ডিম দিলে ডিম পাওয়া যায়, ডিমের বদলে অন্যকিছুও তো দিতে পারতে?
সাত বছর বয়সের মেয়ে পিংকির, বয়সের তুলনায় পাকামিটা একটু বেশি। এই অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে হতচকিয়ে উঠে মা! অবাক দৃষ্টিতে, পড়া না পড়ে আসা কোনো স্কুলছাত্রী যেমন, তার শিক্ষকের সামনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে, সেরকমই অবস্থাটা হয় প্রথমে মায়ের। তবে খুব দ্রম্নতই নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভেবে নেয়, কোনো অবস্থাতেই মেয়ের কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, অবশ্যই যতটা সম্ভব নির্ভুল উত্তর দিতে হবে। এতে নিশ্চয়ই ওর জানার আগ্রহ থেকে বুদ্ধির বিকাশ হবে।
-বোকা মেয়ে, মুরগিটা তো ডিম দেয়, অন্যকিছু দিলে তো ডিম দেবে না।
-তুমি একটা ডিম দিলে, মুরগিটিও একটি ডিম দেবে। দুটো করে দিলেই তো হয়, তাহলে মুরগিটিও প্রতিদিন দুটো করে ডিম দিত। এরপর তিনটে দিলে তিনটা, চারটে দিলে চারটা, যত বেশি ডিম দেবে ততই তো বেশি ডিম পাওয়া যাবে। কী বোকা তুমি...
মেয়ের কথা শুনে হাসতে-হাসতে অস্থির অবস্থা মায়ের, কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে, আরে বাবা মুরগি তো প্রতিদিন একটির বেশি ডিম দিতে পারে না।
-কেন পারে না আম্মু?
-এ নিয়মটা আলস্নাহ তায়ালাই করে দিয়েছেন। একদিনে একটার বেশি ডিম, সে দিতে পারবে না তো।
-একটার জন্য একটা ডিম মুরগির খাঁচায় দেওয়ার নিয়ম কি আলস্নাহ তায়ালা করে দিয়েছেন।
-আরে না, এ নিয়মটা মানুষের তৈরি করা নিয়ম।
-কেন আম্মু, না দিলে কী হয়?
-তা কিছু হয় না। তবে, খাঁচায় এভাবে ডিম দিয়ে না রাখলে, মুরগিটা যেখানে সেখানে ডিম দেবে। যা হয়তো খুঁজে পাওয়া কখনো খুব কষ্টকর হয়। আর ডিম দিয়ে রাখলে মুরগিটা বুঝতে পারে, গতদিনে যে ডিমটি দিয়েছিল, সেটিই এটি এবং নিজের ডিম ভেবে নির্দিষ্ট জায়গায় আরও একটা ডিম দিয়ে যায়।
-কিন্তু একটা ডিম কেন? ও তো ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ডিম দিয়েছে! ওগুলো মুরগিটা খুঁজে না কেন?
এবারে মা সত্যি-সত্যিই বিরক্ত হয়। ভাবে, এত কথা বলে মেয়েটা! ওকে না থামালে দেখছি, প্রশ্ন করা শেষ হবে না। বলে এই মেয়ে, তুমি কি আমাকে কাজ করতে দেবে না? এবার থামবে...?
-বলো না আম্মু, অন্য ডিমগুলো খুঁজে না কেন?
-আরে বোকা মেয়ে, মুরগি তো তোমার মতো অংক বুঝে না, তাই ওরা গুনতেও পারে না। হয়েছে? এবারে দয়া করে থামো, আমাকে কাজ করতে দাও ঠিকমতো।
খিলখিল করে হাসতে থাকে মেয়ে পিংকি। বলে, মুরগিগুলো মূর্খ হয়, না আম্মু?
হালকা একটু ধমকের সুরে মা বলে উঠে, তুমি কি যাবে এখন?
-কী মজা, কী মজা, মুরগিগুলো কী মূর্খ। আমি ওদের অংক শেখাব, অংক শিখলে ওদের আর ডিম, কেউ খেতে পারবে না। কী মজা, কী মজা... বলতে বলতে বাড়ির বাইরে ছুটে যায় পিংকি।