বাংলাদেশের দক্ষিণে ছায়াঘেরা সুন্দর এক গ্রাম। সে গ্রামের মানুষ খুব সহজ সরল। গ্রামে ঢোকার পথে ছিল বিশাল বড় বড় তিনটা তালগাছ। সেই গাছগুলোতে বাস করত একদল ভূত। গ্রামের মানুষকে ভয় দেখিয়ে তারা আনন্দ পেত। কেবল রাতের বেলা নয়, দিনের বেলাতেও সেই তালতলা দিয়ে একাকি হাঁটতে মানুষ ভয় পেত। দু'দিন আগেও হারু মাঝির ছেলে মাছ নিয়ে বাজারে যাচ্ছিল। পথে ভূতের হাসি শুনে ভয়ে মাছ ফেলে দৌড়াতে শুরু করল। কিছুদূর গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। দিনে দুপুরে তার জ্ঞান ফেরানো নিয়ে গ্রামে কত হৈ চৈ হলো। সে তুলনায় খাল ভূতেরা অনেক ভালো। তারা সব সময় নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কখনো কোনো মানুষকে তারা ভয় দেখায় না। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ভূতের নাম শুনলেই ভয় পায়। কিন্তু একজন ছিল খুব সাহসী। নাম তার জলিল পাটোয়ারী। তাল ভূতের উৎপাতে তিনি খুবই বিরক্ত। কীভাবে ভূতের ভয় থেকে সবাইকে রক্ষা করবেন সেটাই ভাবতে থাকেন। জলিল পাটোয়ারী গ্রামের প্রধান নন কিন্তু বুদ্ধি ও সাহসে সবার ওপরে। ১০ গ্রামের বিচার- সালিশে সবাই তাকে ডাকে এবং তার পরামর্শ মেনে চলে।
একদিন রাতে পাশের গ্রাম থেকে সালিশ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন জলিল পাটেয়ারী। একই পাড়ার রহিম ও ফজল তার সঙ্গে ছিল। তালতলার কাছাকাছি আসতেই তারা শুনতে পেল তালগাছের উপর থেকে ভেসে আসছে হাসির শব্দ। খসখস করে নড়ছে তালপাতা। রহিম আর ফজল ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু জলিল পাটোয়ারী এতটুকু ভয় পেলেন না। জোর গলায় বললেন, তোরা এত খুশি কেন রে ? একটা ভূত খোলা গলায় বলল, আমাদের ছেলে হয়েছে। তাই সবাই এত খুশি। আপনি খালপাড় দিয়ে যাওয়ার সময় খালভূতদের খবর দেবেন। তারা যেন ছেলেকে দেখতে আসে। জলিল পাটোয়ারী বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, খবর দেব; কিন্তু আমার একটা কথা তোমাদের রাখতে হবে।
ভূতেরা বলল, কি কথা?
তিনি ভাবলেন, এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। আজই এদের অত্যাচার থেকে বাঁচার বুদ্ধি বের করতে হবে। তোমরা তালগাছে বাস কর, ঠিক আছে- থাকো কিন্তু মানুষকে ভয় দেখাতে পারবে না। যদি এই কথা মানো তাহলে এখনই শপথ করো। আর যদি না মানো তাহলে গ্রামবাসীরা সব তালগাছ কেটে ফেলবে। তখন ছেলে নিয়ে কোথায় থাকবে?
এবার ভূতেরা ভয় পেল। তারা একবাক্যে বলল, আমরা শপথ করছি আর কাউকে ভয় দেখাব না। জলিল পাটোয়ারী পেছনে তাকিয়ে দেখলেন রহিম আর ফজল দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। হাতের লাঠিটা ঘুরিয়ে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন খালপাড়ের দিকে। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। জোছনার মাঝে নিজেকে বেশ সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল তার। খালপাড়ে আসতেই দেখলেন চাঁদের আলোয় ভূতেরা নাচ করছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তিনি মজা দেখলেন। তারপর চিৎকার করে বললেন, ও খালভূতেরা! নাচন থামাও। খুশির খবর আছে। তোমাদের তালভূতের ছেলে হয়েছে। ওরা তোমাদের সবাইকে যেতে বলেছে। খালভূতেরা নাচতে নাচতে তালতলার দিকে এগিয়ে চলল। খুশি মনে জলিল পাটোয়ারীও নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন।