শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
গল্প

মিজানের মাটির ব্যাংক

এই দুর্যোগে পাশে থাকতে চায় মিজান। এই ভেবে স্কুল থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে তার সেই মাটির ব্যাংকটি নিয়ে আসে। তার দীর্ঘদিনের জমানো টাকাগুলো বন্যার্ত মানুষের জন্য হাসি মুখে ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দেয়। মিজানের এমন মানবপ্রেম ও দানশীলতা দেখে সবাই খুশি হয়
ইরফান তানভীর
  ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মিজানের মাটির ব্যাংক

ছোট্ট ছেলে মিজান। বয়স সবে আট। এ বছর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। মিজান বয়সে ছোট হলেও মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় অনেক এগিয়ে। স্কুলে সবাই ওর মেধার প্রশংসা করে। ক্লাসে প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে। পড়ালেখায়ও বেশ মনোযোগী। সহপাঠীরা ক্লাসের পড়া না শিখলেও প্রতিদিন ক্লাসের পড়া শিখে স্কুলে যায় মিজান। ফলে টিচাররা ওর প্রতি সন্তুষ্ট।

বাড়ি থেকে মিজানের স্কুল অনেকটা দূরে। প্রায় দুই কিলোমিটারের পথ। পুরো পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়- যা ওর জন্য অনেক কষ্টসাধ্য। একটা সাইকেল হলে অনেক ভালো হতো। মিজানের বন্ধু আশিক। আশিকের সাইকেল আছে। মিজান ও আশিক দু'জনের মাঝে অনেক মিল। টিফিনের সময় প্রায়ই মিজান স্কুল মাঠে ওর বন্ধুর সাইকেল চালায়। আশিকের সাইকেল দিয়ে মিজান সাইকেল চালানো শিখেছে। এখন মিজানের মনে খুব ইচ্ছে একটা সাইকেল কিনার। মিজানের কিশোর মন বারবার তাড়া করে বাবাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলতে কিন্তু মিজান মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তাই বাবাকে বলতে গিয়েও বলতে পারে না।

মিজান মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল এখন থেকে মাটির ব্যাংকে টাকা সঞ্চয় শুরু করবে। ফলে একদিন অনেক টাকা হবে তার। সেই টাকা দিয়ে সে একটি সাইকেল কিনবে। সাইকেলে করে স্কুলে যাবে। বন্ধুদের দেখাবে। ভারি মজা হবে তখন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।

পরদিন সকালে স্কুলে যাবে মিজান। যাওয়ার আগে ওর আব্বু কিছু টাকা দিল ওকে। টিফিনের জন্য। যথারীতি পায়ে হেঁটে স্কুলে গেল মিজান।

আজ টিফিনের সময় কিছু খেল না মিজান। স্কুল শেষে একটি মাটির ব্যাংক কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরল। সযত্নে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখল ব্যাংকটিকে।

এরপর থেকে প্রতিদিন টিফিন না খেয়ে টাকা জমাতে লাগল। মিজান মেধাবী ছাত্র হওয়ার সবাই খুব আদর করে। মিজানের মামারা কিংবা খালামনিরা বেড়াতে এলে ওর খুব প্রশংসা করে। যাওয়ার বেলায় তারা মিজানকে আদর করে হাতে টাকা গুঁজে দেয়। সেই টাকা মিজান মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখে। এভাবে অনেক টাকা জমা হলো মিজানের ব্যাংকে।

মিজান একদিন স্কুলে গিয়ে মিসদের কাছে শুনতে পায় ভারত থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের প্রায় আটটি জেলা পস্নাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি। ফলে, মানুষসহ গবাদি পশুও পানিতে ভাসছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবা হারিয়েছে। এই বন্যার কারণে চরম আকার ধারণ করেছে মানুষের দুর্ভোগ।

বন্যার্ত মানুষের জন্য স্কুল মাঠে গণত্রাণ গ্রহণ কর্মসূচি দিয়েছেন টিচাররা। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ও এলাকাবাসীসহ সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই ত্রাণ দিচ্ছে। পিছিয়ে নেই শিশুরাও। ছোট্ট শিশুরা কেউ কেউ নিয়ে আসছে নিজেদের খেলনাপাতি। যে বন্যার্ত শিশুরা তাদের খেলনাপাতি হারিয়েছে তাদের জন্য। মিজান ভাবল সেও কিছু দান করবে বন্যার্ত মানুষের জন্য। তাদের এই দুর্যোগে পাশে থাকতে চায় মিজান। এই ভেবে স্কুল থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে তার সেই মাটির ব্যাংকটি নিয়ে আসে। তার দীর্ঘদিনের জমানো টাকাগুলো বন্যার্ত মানুষের জন্য হাসি মুখে ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দেয়। মিজানের এমন মানবপ্রেম ও দানশীলতা দেখে সবাই খুশি হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে