দাদুর ডাকে মামাবাড়ি চলল তারা। দাদু জোর দিয়ে ডেকেছেন, আসতেই হবে। কড়া হুকুম!
বাবার অফিস একটা পর্ব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ছুটি থাকায় শুক্র ও শনিসহ তিন দিনের ছুটি। রাতের ট্রেনে তারা যাত্রা শুরু করল।
সারারাত ভ্রমণ।
ভোরে তারা স্টেশনে নামল। আগে থেকে যোগাযোগ হওয়াতে একটা অটোরিকশা দাঁড়িয়েছিল ওদের জন্য। আরাধ্যা ভালোমতো জায়গা পেলেও অমৃতার চোখে আধো আধো ঘুম। অটোরিকশা চেপে এসে নামল তারা দাদুর বাইরের উঠানে। পূর্বাকাশে লাল আভা দেখা দিয়েছে। আরাধ্যার দুষ্টুমিতে অমৃতার আধো ঘুম পালিয়েছে। তারা টুপ করে অনেকটা লাফিয়ে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়ল। দাদু-দিদা, মামা-মামি আর মামার ছেলে অনো উঠানে দাঁড়িয়েছিল। দেখা মাত্রই সবার মুখে আনন্দের হাসি। প্রায় দেড় বছর পর আসা। যার সঙ্গে যার মিল তারা তারা হয়ে গেল দল। মানে আরাধ্যা অমৃতা অনোর সঙ্গে মিলিয়ে গেল। তবে আরাধ্যা থমকে দাঁড়াল। যেন ভালো করে পরখ করার চেষ্টা করছে। হঁ্যা, শিউলি ফুলের ঘ্রাণ। অমৃতা কৌতূহলে বলল, কি দিদি, অমন করছ যে!
আরাধ্যা বলল, শুঁকে দেখ, কি ঘ্রাণ! অমৃতা নাক দিয়ে নতুন করে টেনে বলল, হঁ্যা, তাইতো!
অনোই ওদের অনেকটা টেনে এনে বাইরের ঘরের আড়ালে পড়া শিউলির গাছটার নিচে দাঁড় করিয়ে বলল, এই দ্যাখ!
দুজনই বলে উঠল- ওয়াও, কি দারুণ! আরাধ্যা বলল, এত ফুল!
আরাধ্যা অমৃতা যেন পাগল হয়ে যায়! তারা গপাগপ ফুল কুড়াতে লাগল। জামার কোঁচড় ভরে বাড়িতে ঢুকল। সহোৎসাহে মাকে ডেকে বলল, এই দেখো!
মা দেখে আনন্দ পেলেও রাগল যে জামায় দাগ লাগবে! বাবা বলল, ঠিক আছে যাও ওগুলো রেখে দাও। জামা পরিবর্তন করে খেলতে যেও।
মামি আদর করে বলল, তোমরা হাত মুখ ধুয়ে এসো তো দেখি! আর অনোকে বলল, খাওয়া না হলে কিন্তু এদের কোত্থাও নিয়ে যাবে না!
দাদু বলল, তার আগে সবাই আমার সঙ্গে চল। সবাই তার পিছে পিছে চলল। থামল একটা তালগাছের নিচে। দাদুর মুখে আনন্দের ঢেউ খেলছে। কারণ এ তালগাছ যে তারই লাগানো। আর তিনিই দেখতে পেলেন ফল। পেকেছে প্রায়। বললেন, তোমাদের দেখাবো বলে পাড়িয়ে নেইনি। আরাধ্যার বাবা বলল, তাল নিয়ে প্রচলিত কথাটি খাটল না! আরাধ্যা বলল, মানে!
ওর বাবা বলল, শোনা যায়, যে তাল গাছ লাগায় সে নাকি সে গাছের তাল খেতে পারে না। মানে তার জীবনে নিজে লাগানো গাছ নাকি তাল ধরার উপযুক্ত হয়ই না!
ওর মা বলল, আর এইটি যিনি লাগিয়েছেন তিনিই খেতে পারলেন।
মা-বাবা বিশ্রাম নিলেও আরাধ্যা ও অমৃতাকে বেঁধে রাখে কে! অনোসহ বেরিয়ে পড়েছে। বেশ কিছু ছোট বড় গাছসহ ঝোপজঙ্গল এ গাঁয়ে রয়েছে এখনো। ওরা সে ঝোপের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা দিয়ে চলল। একটা গাছে ঝুলে থাকা লাল, হলদেটে, সবুজ ফলের মত দেখে আরাধ্যা কৌতূহলে দাঁড়াল। দেখিয়ে বলল, ও মা কি ফল... এসব! অমৃতা তাকিয়ে বলল, ওয়াও!
অনো বলল, হায়রে চেনোই না এসব! আরে মাকাল ফল, মাকাল ফল। দেখতে যতটা সুন্দর ভেতরটা ততটাই উল্টো! মানে ভাঙলে যে গন্ধ বের হয়!
তারা যেন খুঁজে খুঁজে আরও খানিকটা কৌতূহলে তাকাতে থাকল। অনোই টেনে নিয়ে চলল।
এবার অমৃতার চোখে পড়ল সাদা সাদা ফুল। বলল, দিদি দেখো কি সুন্দর সাদা ফুল! আরাধ্যা দেখতে দাঁড়াল। দেখে বলল, দারুণ তো! ওর ডালে খুঁজে পেয়ে সে বলল, দেখ ছোট ছোট শসা!
অনো এটার নাম বলতে না পারলেও ওগুলো যে শসা নয় জানালো। বরং পাশ দিয়ে একজন বিলে যাচ্ছিলেন তিনি বললেন, ওর নাম তেলাকুচা। জঙ্গলে হয়। পাকলে লাল হয়। পাখি খায়।
তারা আবার চলল। কিছুদূর গিয়েই থমকে দাঁড়াল আরাধ্যা অমৃতা। শাপলা, পানা, চাঁদমালা ফুল দিয়ে ভরে আছে বিলটি। আরও একটু এগোলো।
চক্ষুস্থির তাদের! দুজনকে দারুণ উৎফুলস্নতায় পেয়েছে, এত ফুল! অমৃতা একটা শাপলা ফুল নিতে চাইল। কিন্তু অনো না বলল। বোঝালো আমরা মাকে না বলে এসেছি, শাপলা ফুল দেখে বুঝতে পারবে! বরং বাবা-মা'কে বলে আরেকবার আসব। তখন নেব।
তিন দিন তারা থাকল। নতুন গাছের তাল দিয়ে বানানো পিঠা, কেক খেল। শাপলা ফুল নিয়েছে। শাপলার ডাটা ভেঙে ভেঙে বিশেষ পদ্ধতিতে মালাও বানিয়ে পড়েছিল তারা। আর শাপলার ফল মানে ভ্যাট নিয়ে তা ফুটিয়ে খৈ করে খেয়েছে।