বাংলার দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা বিদায় হলে প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে একগুচ্ছ সাজানো রূপ নিয়ে হাজির হয় ভাদ্র আশ্চিনের শরৎ। মেঘ মুক্ত আকাশ দেখেই বোঝা যায় শরৎ এসেছে তার মনোহারিণী রূপ নিয়ে। ঘন সবুজের স্নিগ্ধ শোভন হৃদয় করে উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত। মেঘ মুক্ত সুনীল রূপকান্তি, আলোছায়ার লুকোচুরি, ছাতিম ফুলের গন্ধ, বালুচরে কাশফুলের দোল খাওয়া শরতের প্রকৃতিতে করে তোলে সুষমামন্ডিত, মনোহর।
শরৎ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- 'এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে, এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে'। জীবনানন্দ দাশ শরৎ বন্দনায় লিখেছেন- 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।'
শরৎকালের প্রকৃতি হয় কোমল, শান্ত, স্নিগ্ধ, সুশোভিত। শরৎকালে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে চারপাশে। নীল আকাশের নিচে নদীর ধারে বালির চরে হেসে ওঠে কাশফুল। রাতের বেলা ফুটে শিউলি ফুল। ভোর হতেই ঝরে যায়। এ জন্য শিউলির ফুটন্ত ফুল দেখার সুযোগ খুব কমই ঘটে। ভোরে শিউলির সুবাসে চারপাশ সুবাসিত হয়ে থাকে। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে কামিনি। ঝাঁকড়া গাছ, ঘন সবুজ ও চিরল পাতার ফাঁকে ফুটে ছাতিম ফুল। কবি রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফুল ছিল ছাতিম ফুল। তিনি ছাতিমগাছ ও এর ফুল খুব পছন্দ করতেন। ছাতিমগাছ নিয়ে লিখেছেন, 'ওই যে ছাতিমগাছের মতোই আছি, সহজ প্রাণের আবেগ নিয়ে মাটির কাছাকাছি...।'
জুঁই, কেয়া, জবা, মিনজিরি, শেফালি, শাপলা, শালুক, পদ্ম, মালতি, পান্থপাদপ, বকফুল, মলিস্নকা, মাধবী, দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, নয়নতারা, শ্বেতকাঞ্চন, রাধাচূড়া, ধুতরা, ঝিঙেসহ নানান ফুলে হেসে ওঠে শরতের প্রকৃতি।
ভাদ্র-আশ্চিনে ফুল বাহারের পাশাপাশি কয়েকটি ফল-ও এই সময়ে দেখা মিলে। মৌসুমি ফলের চাহিদা গুণ সবসময়ই বেশি থাকে। খুব বেশি নয় শরতে যেসব ফল দেখা মিলে : আমলকী, তাল, জগডুমুর, করমচা, চালতা ইত্যাদি।
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নদী তীরে সাদা কাশফুল, ভোরে হালকা শিশিরভেজা শিউলিফুল। শরৎকালে রাতের বেলার জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘমুক্ত আকাশ থেকে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরৎকালের নীল আকাশ আর কোনো ঋতুতে এমন দেখা মিলে না। সেজন্য অনেকেই বলে, শরৎ হলো বাংলার ঋতু-পরিক্রমায় সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু।
আশ্চিন বিদায়ের লগ্নে পথে পথে রেখে যায় ম্স্নান, ঝরা শেফালি, বিষণ্ন কাশের গুচ্ছ আর মাঠভরা নতুন ধানের মঞ্জুরি সকলের মনের কোণে যেন জমে থাকে বিদায় মুহূর্তের বিষণ্নতা।