গল্প

শেফার লাল ডায়েরি

অলোক আচার্য

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
.

শেফার শখ রং-বেরঙের ডায়েরি সংগ্রহ করা। শেফার বয়স তেরো। এর মধ্যেই ওর সংগ্রহে প্রায় দুই ডজন ডায়েরি আছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জন্মদিনে পাওয়া দামি দামি ডায়েরিও আছে। আর নিজে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কেনা ডায়েরি রয়েছে। এমন না যে এসব ডায়েরির পাতা ও লিখে ভর্তি করে ফেলেছে। না, তবে প্রতিটি ডায়েরিতেই কিছু না কিছু লেখা আছে। হয়তো কোনো কোনো ডায়েরিতে একটা-দুটো লাইন আছে। প্রতিদিন হাতের কাছে একটা ডায়েরি রাখে এবং রাতে ঘুমানোর আগে সেই ডায়েরির কোনো এক পাতায় সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা লিখে রাখে। এতদিনে শেফা একটা বিষয় খেয়াল করেছে ওর লাল ডায়েরিতে কিছু একটা রহস্য আছে। সেই রহস্য শেফা ধরতে পারেনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত লাল ডায়েরিতে যা যা লিখেছে কীভাবে কীভাবে যেন সেসব ঘটেছে। এই ডায়েরিতে শেফা শুধু যার ওপর রাগ তার কথাই লিখে রাখে। এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু সত্যি সত্যি এটা ঘটেছে। যেমন আজ লিখেছে- আমার দূর সম্পর্কের এক ছোট খালু কয়েকদিন ধরে বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। লোকটা আস্ত একটা খচ্চর। আজ দুপুরে সবাই যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন সে সুযোগ বুঝে আমার বুকে হাত দিয়েছে। আমি এর প্রতিশোধ নেব। নেব, নেব এবং নেব। এই খচ্চর লোকটার নাম ফরিদ উদ্দিন। বয়স পঁয়তালিস্নশের মতো। শহরে কি একটা কাজের উদ্দেশ্যে এসেছে। প্রথম দিন থেকেই তার তাকানো শেফার পছন্দ হয়নি। হাত ধরা ছাড়া কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না। প্রথম যেদিন ওকে লোকটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সেদিন শেফাকে হাত ধরে কাছে টেনে বসাল। তারপর বলল, ও তোমার নাম শেফা। বাহ! কি সুন্দর নাম। এই বলতে বলতে শেফার হাত কচলাতে লাগল। শেফা উহু বলে হাত সরিয়ে নিল। তারপর সেখান থেকে চলে গেল শেফা লাল ডায়েরিতে কীভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে সে কথা লিখল না। প্রতিশোধ নেওয়ার পর সেটা লেখা হবে। তবে খুব সংক্ষেপে। পরদিন দেখা গেল সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে হাতটা খুব খারাপভাবে মচকে ফেলেছে। অবস্থা এমন যে, তাকে দ্রম্নত হাসপাতালে নিতে হলো। তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরেই গ্রামে ফিরে গেছেন। ও যখন প্রতিশোধ নিতে চায় সেটা হয় ভয়ংকর। শেফা কিন্তু এরকম ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিতে চায় না। এর আগেও এরকম প্রতিশোধ নিয়েছে। কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারেনি। বছরখানেক আগে শেফার জন্য একটি হোম টিউটর রাখা হয়েছিল। নাম ছিল ফরহাদ স্যার। বেশ ভালো দেখতে। হ্যান্ডসাম। কথাবার্তাতেও স্মার্ট। কিন্তু দিন দুই যেতে না যেতেই শেফা বুঝলো এই লোকটা একটা হাড়ে বজ্জাত। মাত্র সাতদিনের মাথায় লোকটা শেফার পায়ের ওপর পা দিয়ে ঘঁষতে লাগল। বিচ্ছিরি অবস্থা। কিছু বলতেও পারে না। পা সরিয়ে নিলেও একই অবস্থা। দিনের পর দিন এই অত্যাচার চলতে লাগল। শেফা লজ্জায় বাবাকেও বলতে পারল না। শেষে ঠিক করল এই বজ্জাত মানুষটাকে সে নিজেই শিক্ষা দেবে। মারাত্মক শিক্ষা। কথাটা লাল ডায়েরিতে লিখে রাখল। সে এমন শিক্ষা দিতে চায় যাতে আর কারও পায়ের উপর পা ঘষতে না পারে। পর দিন শেখা স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা সুপার গস্নু কিনে আনল। প্রাইভেট স্যার আসবে বিকালে। শেফা তার বাম হাতের কাছে সুপার গস্নু'র প্যাকেটটা খুলে রেডি করে রাখল। স্যার পা দিলেই অপারেশন শুরু হবে। যদিও এতে তাকেও কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু এই বদমাইশের থেকে মুক্তি পেতে গেলে এটুকু কষ্ট সহ্য করতেই হবে। সবাইকে প্রমাণ করে দেখাতে হবে স্যার ওর পা'র উপর পা দিয়ে ঘষাঘষি করে। শেফার বাবা অফিস থেকে ফিরে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছেন। শেফার স্যার এসে পড়া শুরু করলেন। তিনি আস্তে আস্তে পা'টা শেফার পা'র উপর দিয়ে ঘষতে লাগলেন। শেফা তার পা একটু টেনে নিজের দিকে নিয়ে গেল। কিন্তু অন্যদিনের মতো সরিয়ে দিল না। তার স্যার এই সুযোগে আবার পা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু এই সুযোগে শেফা দু'ফোঁটা সুপার গস্নু তার পায়ের উপর দিয়ে দিয়েছে। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। শেফা, বাবা, বাবা বলে চিৎকার করে উঠল। শেফার বাবা শেফার চিৎকার শুনে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। কি হয়েছে মা? দেখো স্যার পা দিয়ে আমার পায়ে ঘষা দেয়। শেফার স্যার প্রাণপণ চেষ্টা করল পা সরিয়ে নিতে। কিন্তু হলো না। তার পা আশ্চর্যজনকভাবে শেফার পায়ের উপর লেগে রইল। তার মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেল। শেফার বাবা চিৎকার করতে লাগল, হারামজাদা, কুত্তা, পা নামা আমার মেয়ের পা'র উপর থেকে। নামা বলছি। তোকে আমি পুলিশে দেব।... সেদিন শেফার বাবার মনটা একেবারেই ভালো ছিল না। অফিসে কি একটা নিয়ে প্রচন্ড ঝামেলা হচ্ছে। সব দোষ চাপানো হচ্ছে শেফার বাবার ওপর। এই নিয়ে গত কয়েক রাত তিনি ঘুমাননি। আজ সকালেও সোফায় গম্ভীরভাবে বসেছিলেন। শেফা এসে ওর বাবার কাছে বায়না ধরলো বিকালে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। তিনি শেফাকে প্রচন্ড একটা ধমক দিয়ে বললেন- যা এর আগে কোনো দিনও করেননি। শেফা প্রথমটায় খুব ভয় পেয়ে গেল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেল। শেফার এতটা অভিমান হলো যে বাবার ওপর তার প্রচন্ড রাগ হলো। আর রাগের বশে সে তার লাল ডায়েরিতে লিখে রাখল 'বাবাটা আজ আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। অথচ আমার কোনো দোষ ছিল না। এর জন্য বাবা শাস্তি পাবে। অবশ্যই পাবে। এ টুকু লিখেই সে স্কুলে চলে গেল। স্কুলে যাওয়ার পর শেফার মনে হলো কাজটা সে মোটেই ঠিক করেনি। এখন যদি বাবার কিছু একটা হয়ে যায়। শেফা স্কুল থেকে কাউকে না বলে বাড়ি চলে আসে। যা সে কোনো দিন করেনি। এখনি লাল ডায়েরিতে বাবার জন্য ভালো কিছু লিখতে হবে। কিন্তু বাড়িতে এসে শেফা শুনতে পায় অফিসে যাওয়ার পথে শেফার বাবা রিকশা থেকে পড়ে গেছে। মাথায় আঘাত পেয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।