অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে এক বৃদ্ধ মহিলা বাস করত। সে খুব অসহায় ছিল। তার সন্তান ও পরিবার ছিল না। সে সারাদিন ভিক্ষা করত। ভিক্ষা করেও বহুত কষ্টে তার দিন যেত। প্রতিদিনের মতই বুড়ি একদিন দূরের গ্রামে ভিক্ষা করতে বেরুল। সে গ্রামের মানুষ ধনি হওয়ায় বুড়ি অনেক টাকাকড়ি পেল। সে সারাদিন ভিক্ষা করে খুশিমনে বাসা ফেরার উদ্দেশ্য রওনা দিল। বাসা ফেরার পথে বুড়ি অনেক দেরি করে ফেলল। এদিকে সন্ধ্যা পেরিয়ে গভীর রাত নেমে এলো। বুড়ি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল। কোথায় সে রাত কাটাবে? পথ চলতে চলতে বুড়ি চোখের সামনে একটা বড় বটগাছ দেখতে পেল। বুড়ি ভাবল এই বট গাছটার নিচে রাতটা কোনমতো কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হয় না। বুড়ি গাছের নিচেই আশ্রয় নিল। সে গাছের গোড়ায় বুড়ি ঘুমিয়ে পড়ল। সে গাছটি ছিল মায়াপরিদের আস্তানা। প্রতি রাতে মায়াপরিরা সে গাছের উপরে এসে দলবেঁধে নাচ করত। সেদিন নিঝুম রাতে কয়েকটি পরি সে গাছের উপরে এসে নাচ করতে লাগল। পরিরা হঠাৎ বুড়িকে দেখতে পেয়ে নাচ থামিয়ে বুড়িকে ডাকা শুরু করল। মায়াপরিদের শরীরে আলোয় বুড়ি চোখ মেলতে পারল না। অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল তার চারপাশে কয়েকজন মায়াপরি। তাদের শরীরের আলোর ঝলকানিতে চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে। বুড়ি এবার ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। বুড়ি কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠল আমার কোনো ক্ষতি করোনা। মায়াপরিরা বলল, তাহলে আমাদের সঙ্গে নাচ করতে হবে। বুড়ি বলল, আমার পিঠে কুঁজ আছে আমি কীভাবে নাচব? এ কথা শুনে পরিরা বলল, কাছে এসো আমরা ঠিক করে দেব বলে বুড়ির পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। নিমিষে বুড়ির কুঁজ ঠিক হয়ে গেল। বুড়ি মহাখুশি হয়ে মনের আনন্দে মায়াপরিদের সঙ্গে নাচতে থাকল। তার সারারাত অনেক আহ্লাদে কাটল। বুড়ি গাছের নিচে রাত কাটিয়ে পরদিন গান গাইতে গাইতে বাসায় ফিরে এলো। সবাই তাকে জিজ্ঞাস করতে লাগল তোমার কুঁজ কীভাবে ভালো হলো? সে সবাইকে ঘটনা খুলে বলত। এভাবে করে এ ঘটনা গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। এ ঘটনা সে গ্রামের জমিদার জানতে পারলেন। তিনি বুড়িকে তার বাসায় ডেকে পাঠালেন এবং বুড়ির কাছ থেকে পুরো ঘটনা জানলেন। তারও পিঠে কুঁজ থাকায় তিনিও সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিও গাছের নিচে রাত কাটাবেন। একদিন সে জমিদারও ভিক্ষুকের ছদ্মবেশ নিয়ে ভিক্ষা করতে বেরিয়ে পড়ল। সে সারাদিন ঘুরে ফিরে রাত্রিবেলায় সে বটগাছের নিচে আশ্রয় নিল। সেদিন রাতেও মায়াপরিরা সে গাছের উপরে এসে নাচ করতে লাগল। হঠাৎ মায়াপরিরা জমিদার কে দেখতে পেয়ে তাকে ডেকে তুলল এবং তাদের সঙ্গে নাচতে বলল। জমিদার বলে উঠল আমার পিঠে কুঁজ আছে আমি নাচতে পারব না, তোমরা আমার কুঁজটি ঠিক করে দাও- তাহলে আমি নাচতে পারব। না ঠিক করে দিলে এ গাছটা আমি কেটে ফেলার ব্যবস্থা করব। মায়াপরিরা হাসতে হাসতে বলল, কাছে এসো বলে জমিদারের পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। এতে তার কুঁজ ঠিক তো হলোই না বরং আরও বেড়ে গেল। এতে জমিদার ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারল না। সে গাছের নিচেই পড়ে রইল। পরের দিন নদীর তীরে গাছের নিচে একজন মাঝি তাকে দেখতে পেল। তার কাছে জানতে চাইল তার এ অবস্থা কীভাবে হলো। তিনি তাকে ঘটনাটা খুলে বললেন। তারপর মাঝি তাকে বাসায় পৌঁছে দিল। পরে এ ঘটনা গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। জমিদার নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।