শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সুকুমার রায় :জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক

এস ডি সুব্রত
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
.

সুকুমার রায় একজন বাঙালি শিশু সাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে 'ননসেন্স রাইমের' প্রবর্তক। মৃতু্যর বহু বছর পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশু সাহিত্যিকদের একজন। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশু সাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর সন্তান এবং তার পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তার লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা 'ননসেন্স' ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ। সুকুমার রায় ১৮৮৭ সালের ৩০ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ও দার্শনিক উপেন্দ্রকিশোর রায় ও বিধুমুখী দেবীর পুত্র। সুকুমার রায় কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন, যেখানে তিনি কবিতা ও হাস্যরসের প্রতিভা। পিতার কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে সাহিত্যের অসামান্য উদ্ভাবনী ক্ষমতা লাভ করেছিলেন সুকুমার। অল্প বয়স থেকেই মুখে মুখে ছড়া তৈরি করতে পারতেন। ছবি আঁকারও হাতেখড়ি হয়েছিল বাবা উপেন্দ্রকিশোরের হাত ধরে। আঁকার সঙ্গে ফটোগ্রাফির চর্চাও শুরু করেছিলেন ছেলেবেলা থেকেই। ১৯০৬ সালে তিনি পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন পড়ার জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তবে লেখালেখি ও চারুকলায় বেশি আগ্রহী হওয়ায় তিনি ডিগ্রি সম্পন্ন করেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অন্যান্য সমসাময়িক লেখকদের রচনা দ্বারা প্রভাবিত হন। কলেজ ছাড়ার পর, সত্যজিৎ লেখক হওয়ার আগে অল্প সময়ের জন্য শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি কবিতা, নাটক, গান এবং গল্প লিখেছেন- যা অনেক পত্রিকা এবং জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি তার অর্থহীন কবিতা এবং নাটকগুলোর জন্য সর্বাধিক পরিচিত, যেগুলো বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত হয়। তার কাজ ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সুকুমার রায় ছিলেন একজন বহুমুখী লেখক ও শিল্পী- যিনি বাংলাসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর একজন শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন, কিন্তু শিগগিরই পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে লেখালেখিকে বেছে নেন। সুকুমার রায় ছিলেন বাংলায় শিশুসাহিত্যের পথিকৃৎ এবং তার রচনাগুলো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি শিশুদের জন্য গল্প এবং গান লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে 'পদ্মপাদের দল', 'দ্য গ্রেট এলিফ্যান্ট রেস', এবং 'দ্য স্ট্রেঞ্জ কেমিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট।' তিনি তার অর্থহীন কবিতা এবং নাটকের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি, সুকুমার রায় বিজ্ঞান, ফটোগ্রাফি এবং সঙ্গীতেও আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নিবন্ধ লিখেছিলেন এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতার জীবন ও সময় ক্যাপচার করে একজন প্রখর ফটোগ্রাফার ছিলেন। লন্ডনে দু'বছর থাকাকালীন সুকুমার বিভিন্ন কবিতা, গল্প ও নিজের আঁকা ছবি পাঠাতেন পিতা উপেন্দ্রকিশোরের কাছে। সেগুলো নিয়ে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী পরে 'সন্দেশ' পত্রিকা প্রকাশ করেন। সুকুমার রায় এভাবেই 'সন্দেশ'-এর মাধ্যমে পরিচিত হন। বাংলা সাহিত্যে কবিতা, নাটক, গান এবং গল্পসহ বিস্তৃত রচনা তৈরি করেছিলেন। তার কিছু বিখ্যাত কাজ হলো; আবোল তাবোল: এটি 'ননসেন্স পোয়েম'-এর কবিতার একটি সংকলন যা বাংলা অর্থহীন সাহিত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। হযবরল: এটি অন্য একটি 'ননসেন্স পোয়েম' কবিতারই সংকলন যা আবোল তাবোলের হাস্যরস এবং বুদ্ধিকে অব্যাহত রাখে। ফণিভূষণ ভোলনা: এটি একটি 'ননসেন্স পেস্ন' নাটক, যা রায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত। পদ্মপাদের দল: এটি একটি ছোটদের গল্প যা হাস্যরস এবং ব্যঙ্গের জন্য বিখ্যাত। দ্য গ্রেট এলিফ্যান্ট রেস: এটি আরেকটি জনপ্রিয় শিশুদের গল্প- যা ব্যাপকভাবে পঠিত এবং সঞ্চালিত হয়েছে। অদ্ভুত রাসায়নিক পরীক্ষা: এটি একটি শিশুদের গান যা তার হাস্যরস এবং সৃজনশীলতার জন্য পরিচিত। বিজ্ঞান প্রবন্ধ: সত্যজিৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর প্রবন্ধ লিখেছেন এবং তার লেখা এই বিষয়গুলোর প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে। এই রচনাগুলো, অন্যান্য অনেকের সঙ্গে সুকুমার রায়কে বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র স্থান অর্জন করেছে এবং আজও ব্যাপকভাবে পঠিত ও সমাদৃত হচ্ছে। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে সুকুমার রায় 'ফটোগ্রাফিক সোস্যাইটি'র সদস্য ছিলেন। সন্দেশ লেখার শুরুর দিকে সুকুমার ছদ্মনাম নেন ও সেই ছদ্মনাম ছিল 'উহ্যনাম পন্ডিত'! এই নামেই তিনি বেশ কিছু লেখা লিখেছেন তবে বেশিরভাগ লেখা তার স্বনামেই লেখা। সুকুমার রায় মূলত শিশুদের জন্য লিখতেন তাই শিশুদের খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। আজ তিনি বেঁচে না থাকলেও, তার শিশুসাহিত্যমূলক রচনা এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে। সুকুমার রায় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তার বাসভবনে মারা যান একটি গুরুতর সংক্রামক জ্বরে, যার সেই সময়ে কোনো প্রতিকার ছিল না। তিনি তার বিধবা স্ত্রী এবং তাদের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎকে রেখে গেছেন, যার বয়স তখন মাত্র দুই বছর ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে