বিশাল বড় এক নদী। জলে টইটম্বুর। কত মাছ থাকে তাতে! জাতীয় মাছ ইলিশ, বিশাল বড় বোয়াল, শিং মাছ, রূপচাদা আরও কত মাছ! হরেক রকমের ফুলও ফুটে এ নদে। শাপলা, শালুক, পানার ফুল আরও কত ফুল! ওই যাহ্ ভুলেই গেছি এ নদে আরও একজন থাকে। আর সে হলো সোনালি পুঁটি। চিনলে না বুঝি! ওই যে নদীর পূর্ব কিনারে ঝোপের নিচে যে ছোট্ট মাছটি থাকে! ওর নামই তো সোনালি পুঁটি। সেই তো নদীর সব মাছের খোঁজখবর রাখে। মাতিয়ে রাখে পুরো নদী। সোনালি পুঁটির একটি ছানাও আছে। ভারী দুষ্টু ছানাটি। সারাদিন তিড়িংবিড়িং নাচে আর টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কথা একটুও শোনে না দুষ্টু ছানাটি। মা কত করে বলে, ঘর থেকে বের না হতে। বাইরে কখন কোন হিংস্র প্রাণি ওঁৎ পেতে বসে থাকে বলা যায় না। তোকে তো একা দেখলেই খপ করে ধরবে আর গিলে খেয়ে ফেলবে? কিন্তু কে শোনে কার কথা। দুষ্টু ছানাটি তবুও একা একাই এদিক সেদিক ঘুরতে যায়। একবার এক জেলের জালে আটকে পড়ল ছানাটি। মাছ পেয়ে জেলে তো মহাখুশি। ছানাটিকে ধরে নদীর পাড়ে এক শুকনো জায়গায় রেখে আবার গেল জাল ফেলতে। সুযোগ বুঝে ছানাপুঁটি তখন এক লাফে নদীতে পড়ল। তারপর দৌড়ে বাড়িতে ছুটে এলো।
এরপর একদিন আবার একাকি বের হলো ছানাপুঁটি। তখন এক ধূর্ত শিং তেড়ে আসল ছানাপুঁটিকে মারার জন্য। পাশেই ছিল মা পুঁটি। শিংকে এমন তেড়ে আসতে দেখে সে দৌড়ে গেল ছানাপুঁটির কাছে। তারপর তাড়াতাড়ি করে তাকে সেখান থেকে নিয়ে এলো। এবারও বেঁচে গেল ছানাপুঁটি। বাড়িতে এসে মা পুঁটি বলল, আমি কত করে বলি যে, একাকি কোথাও যাসনে। আমার কথা তো শুনোস না। আমার কথা না শোনার জন্যই তোর আজ এই বিপদ। আজ যদি আমি না থাকতাম! তাহলে তো ওই দুষ্টু শিং তোকে মেরেই ফেলত। দুষ্টু ছানাপুঁটি তবুও শোধরালো না। আগের মতোই এদিক সেদিক ঘুরতে লাগল। মা পুঁটি তো এবার খুব রাগল। বলল, তুই যাইচ্ছা তাই কর। যেদিক ইচ্ছা সেদিক যা। আমি আর তোর কোনো খোঁজখবর রাখছি না। তোর বিপদেও আমাকে আর পাশে পাবি না।
এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। একদিন ছানাপুঁটি দেখল নদীর মাঝ বরাবর সুন্দর সুন্দর পানার ফুল ফুটেছে। ছানাপুঁটি খুশি মনে এগিয়ে গেল পানার ফুলের কাছে। সেখানে ছিল ইয়া বড় এক বোয়াল। সে ছিল খুব ক্ষুধার্ত। ছানা পুঁটিকে দেখে তার ক্ষুধা যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সে খপ করে ধরে ফেলল তাকে। তখন চিৎকার করতে করতে ছানাপুঁটি তার মাকে ডাকল। কিন্তু মা পুঁটি একটুও সাড়া দিল না। সে তার কাজে মন দিল। ছানাপুঁটি আবার চিৎকার করল মা, মা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর তোমার অবাধ্য হব না। আমাকে বাঁচাও মা। এই হিংস্র বোয়াল আমাকে খেয়ে ফেলবে। ছানার এমন আহাজারিতে মা কি আর স্থির থাকতে পারে? বল? তাই মা পুঁটিও স্থির থাকল না। দৌড়ে গেল তার ছানাকে বাঁচাতে। কিন্তু এত বড় বোয়ালের সঙ্গে কি আর সে পারে? মা পুঁটি তখন বুঝতে পারল শক্তিতে এই বোয়ালকে মোটেও হারানো যাবে না। একে বুদ্ধিতে হারাতে হবে। তাই মা পুঁটি বুদ্ধি আটল। সে দ্রম্নত একটি পানার আড়ালে গেল। আর সেখান থেকে বলতে লাগল, কিরে বোয়াল বুড়ো সামান্য একটা পুঁটির ছানা ধরে তো নিজেকে খুব বাহাদুর ভাবছিস। সাহস থাকলে আমাকে ধরে দেখা তো? দেখি কেমন বাপের ব্যাটা তুই?
মা পুঁটির এমন কথা শুনে বোয়াল তো খুব রেগে গেল। হা করে আসতে লাগল মা পুঁটির দিকে। আর তখনই ছানাপুঁটি বোয়ালের মুখ থেকে লাফিয়ে বের হলো। আর মা পুঁটি পানার বোঝাটা বোয়ালের দিকে ধাক্কা মারল। বোয়াল পানার বোঝা সামলাতে সামলাতেই ছানাকে নিয়ে মা পুঁটি পালিয়ে এলো। এবারও বেঁচে গেল ছানাপুঁটি। বাড়িতে এসে মা পুঁটি ছানার সঙ্গে কোনো কথা বলল না। আবার আগের মতো নিজের কাজে মন দিল। ছানাপুঁটি বুঝল মা এখনো রেগে আছে আমার ওপর। যাই মা'র মন ভালো করি। তাই সে মা পুঁটির কাছে গেল আর বলল, স্যরি মা আমি আর কখনোই তোমার অবাধ্য হব না। এই যে দেখ কান ধরেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও! মা পুঁটি তখন ছানাপুঁটিকে ক্ষমা করে দিল। এরপর আর কখনো ছানাপুঁটি তার মায়ের অবাধ্য হয়নি।