গল্প

বাড়ির কাজ

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মাহমুদ হাসান ফাহিম
তৃতীয় ঘণ্টার সময় শেষ। কিছু বাড়ির কাজ দিয়েছেন গণিত স্যার। এক পৃষ্ঠা অংক অনুশীলন করে আসতে বলেছেন সবাইকে। কীভাবে করতে হবে, উদাহরণ স্বরূপ বস্নাকবোর্ডে দু'টি অংকের সূত্রসহ সমাধান করে দেখিয়েছেন আর বাকিগুলো বাসায় বসে অনুশীলন করতে বলেছেন। 'আগামীকাল সবার খাতা দেখব' বলে চেয়ার থেকে উঠলেন স্যার। ক্লাসরুম থেকে বের হওয়ার সময় ইরফানকে লক্ষ্য করে বললেন, 'বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করে এসো। কাল কিন্তু কোনো ওজর-আপত্তি শোনা হবে না। কথাটা মনে থাকে যেন। মাথা নেড়ে জবাব দিল ইরফান- জি স্যার, কালকে আর ভুল হবে না। পরের দিন। আনন্দের সীমা নেই ইরফানের। প্রফুলস্ন মন আর হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে বসেছে সামনের বেঞ্চে। আজ স্যারের বকাঝকা শুনতে হবে না। বাড়ির সব কাজ ও একাই করেছে। অনেক দিন পরে হলেও স্যারের একটা কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পেরেছে সে। তাই আজকে বসেছে স্যারের নাক বরাবর সামনে। ইরফানের কান্ড-কারবার দেখে সবারই উৎসুক উৎসুক ভাব। যে কিনা কোনোদিন ক্লাসের পড়া শিখে আসতে পারেনি, আজকে একেবারে সামনের ব্রেঞ্চে! তাও আবার স্যারের নাক বরাবর! দেখি কী হয়, আনেকের মনে প্রশ্ন। তৃতীয় ঘণ্টার বেল পেটানো হলো। গলা খাঁকারি দিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন স্যার। উপস্থিতি হাজিরা নিলেন। খাতা বন্ধ করতে করতে ইরফানের জায়গার দিকে তাকালেন। প্রশ্নের ভঙ্গিতে- 'ইরফান আসেনি?' স্যারের জিজ্ঞাসা। সবাই সমস্বরে বলে উঠলো- 'জি স্যার, এসেছে।' ইরফান দাঁড়িয়ে বলল- 'ইয়েস স্যার, আমি এসেছি।' প্রথম ব্রেঞ্চে ইরফানকে দেখে স্যার অনেকটা থমকে গেলেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, 'মাশাআলস্নাহ। বাড়ির কাজগুলো করে এসেছ মনে হয়?' স্যারের প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই ইরফান জবাব দিতে শুরু করল, 'জি হ্যাঁ। স্যার, আজকে ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠেছি, হাতমুখ ধুয়ে, অজু সেরে নামাজ পড়েছি। তারপর থেকে একটানা কাজ, গোয়ালঘর পরিষ্কার করা, গরুগুলোকে খরপানি দেওয়া এবং এক খাঁচা ঘাস কেটে এনে গরুর সামনে দেওয়া সব আমিই করেছি।' এ পর্যন্ত বলে ইরফান থামল। স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, 'তারপর?' ইরফান এবার বলল, 'টিউবওয়েল থেকে দুই কলসি খাবারের পানি এনেছি। আম্মু রান্নাবান্না শুরু করলেন, তার কাজে সহযোগিতা করলাম। থালাবাসন পরিষ্কার করলাম, আনাজপাতি কেটে প্রস্তুত করে দিলাম। আবার ঘর-বারান্দা ঝাড়ু দিলাম উঠানসহ। এসব করতে করতে নাশতার সময় হয়ে গেল। জানেন স্যার, এসব কাজ করতে গিয়ে বারবার আম্মুর বকাঝকা শুনতে হয়েছে। শেষমেশ আপনার কথা বললাম, গণিত স্যার সবাইকে বাড়ির কাজগুলো করে যেতে বলেছেন। বিশেষত আমার নাম ধরে বলেছেন- 'বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করে এসো। কাল কিন্তু কোনো ওজর-আপত্তি শোনা হবে না। কথাটা মনে থাকে যেন।' এ কথা শোনানোর পর রেগেমেগে আম্মু আর কিছু বলেননি। এরপর গোসল করে নাশতা খেলাম আর বইখাতা নিয়ে স্কুলের পথ ধরলাম। ইরফানের বক্তব্য মোটামুটি শেষ। স্যার বললেন, 'মাশাআলস্নাহ, অনেক কাজ করেছ আজকে। ঠিক আছে, এবার অনুশীলন খাতা দেখাও। যেই অংকগুলো করে আসতে বলেছিলাম, সেগুলো।' ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ইরফান। কীসের অনুশীলন! কীসের অংক! ও বিনয়ের সুরে বলল, 'স্যার, আমাকে তো শুধু বাড়ির কাজগুলো করে আসতে বলেছেন। অনুশীলন বা অংক করার কথা তো বলেননি।' ইরফানের এমন কথায় সবাই হাঁ হাঁ করে তাকিয়ে রইল। স্যার ধ্যান-গম্ভীর হলেন। মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, 'ও আচ্ছা, এসব তাহলে তোমার বাড়ির কাজের বিবরণ শুনিয়েছ?' ও মাথা নেড়ে উত্তর দিলো- 'জি হ্যাঁ।' 'ঠিক আছে, কাল থেকে তুমি তোমার আগের জায়গায় বসবে। আর হঁ্যা, কোনো দিন তোমাকে বাড়ির কাজ করতে হবে না। যা পড়তে বা লিখতে বলব, সেগুলো পড়বে ও লিখবে।' এরপর স্যার অন্যদের পড়াশোনা খবর নিতে শুরু করলেন।