গল্প
অবেলায় টাপুরটুপুর বৃষ্টি
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
আষাঢ় মাস মানে চারদিকে বর্ষার থৈ থৈ জল আর বেলা অবেলা টাপুরটুপুর বৃষ্টি এবং আকাশে ফটাস ফাটাস বিজলির চমক। কখনো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো বিরতিহীন বৃষ্টি। সাদা মেঘের ভিড়ে বক ও গাঙচিলের নীড়ে ফেরায় তারা আবার ঝড়ো মেঘের ডাকে ডাহুক, শালিকের ওড়াউড়ি আর বোকা কাকের গাছের ডালে বসে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হওয়া। বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট গর্তে জমানো বৃষ্টির পানিতে কিংবা খাল পুকুরের জলে কোলাব্যাঙের ডাক শুনতে কতই না ভালো লাগত। আকাশে যখন বিজলি চমকাত নদীর জলের পুঁটিমাছ, ট্রেংরা, কই, মাগুর উজান বেয়ে ডাঙায় উঠে আসতো। নদী-নালা খাল-বিলে কানা কানায় পানি। আবার দেশের কোথাও কোথাও বন্যার কবলে ভাসে সাধারণ মানুষ তবুও যেন দিনরাত অবিরাম ঝরে টাপুরটুপুর বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টির ফলে মানুষগুলো ঘরে বন্দি হয়ে পড়ে কোনো কাজকর্মে যোগদান করতে পারে না তার ফলে গরিব অসহায় মানুষের কষ্ট যেন শেষ হয় না, কারো ঘরে চুলায় আগুন ধরে না কারণ বিরতিহীন বৃষ্টি খাওয়া- দাওয়া বেকায়দা পড়তে হয় তাদের আর রান্নাই-বা করবে কী করে! বাড়ির উঠোনে খোলা জায়গায় তাদের চলা বৃষ্টির জলে ডুবে আছে যে পাতা লতা দিয়ে রান্না করবে তাও ভিজে একাকার- কিছুতেই আগুন ধরবে না। তাছাড়া হাটেবাজারে যাওয়া সম্ভব না। মানুষজন ঘরে কষ্টের প্রহর গুনছে কখন বৃষ্টি থেমে রোদের আলো আসবে বাড়ি ঘর শুকাবে উঠোন বাড়ির পেককাদা শুকাবে গাছের শুকনো মর্মর ঝরা পাতা দিয়ে রান্না করবে। আষাঢ়-শ্রাবণ বৃষ্টির মৌসুম খরা জমির জন্য বেশ উপকারী পানির অভাবে রোদের তাপে শুকিয়ে যাওয়া ফসলগুলো যেন আবার মোটাতাজা হয়ে উপযুক্ত ফসলে রূপান্তরিত হবে- এমনটাই প্রত্যাশা করে খেটে খাওয়া দিনমজুর গরিব কৃষক চাষারা। আবার প্রচুর বৃষ্টির কারণে যখন ফসলি জমিগুলোতে বন্যার কারণে পলি জমে তেমনই বেশ ফসল জন্মায়। জমির উর্বরতা শক্তি ও বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মানেই রংধনুর সাত রংয়ে সাজানো আকাশ কখনো মেঘ কখনো রোদ আবার কখনো রোদ বৃষ্টির লীলাখেলা গ্রামের মুরব্বিরা বলে খেঁকশিয়ালির নাকি বিয়ে হয় এই সময়ে। কেটে গেছে কত শৈশব বৃষ্টিতে ভিজে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাসিমুখে আনন্দ উলস্নাসে মেতে উঠার কিশোর বেলা। আষাঢ় শ্রাবণে ঘনবৃষ্টির কারণে যখন ফসলির মাঠ পানিতে ডুবে বাড়ির আঙিনায় পানি আসে তখন কাঠের নৌকায় চড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সেই শাপলা ফুল তুলে আর ডুবে ডুবে শালুক কুড়ানোর স্মৃতি আজও মনকে আনন্দ দেয় ইচ্ছে করে আবার যদি সেই কিশোর বেলা ফিরে যেতে পারতাম কতই না ভালো হতো। পড়ন্ত বিকালে যখন টিনের চাল বেয়ে বৃষ্টি পড়ে তখন ঘরের জানালা খুলে গ্রিলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁইয়ে দেখার আনন্দ আজও মনকে দোলা দেয়।
\হবৃষ্টি এলেই মনে পড়ে কচুপাতা ও কলাপাতা দিয়ে ছাতা বানিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে নানান খেলায় মেতে উঠার মুহূর্তগুলো। আষাঢ় এলো শ্রাবণ এলো পরে দিনরাত বৃষ্টি প্রকৃতিরা আজ অপরূপ সুন্দর সেজেছে দক্ষিণা বাতাসে নড়বড় করে নদীর পাড়ে ছোট ছোট জেলে-মাঝিদের ছোনপাতার চাউনিগুলো, বাড়ির উঠোনের কোণে মা মুরগিটা ডানা মেলে তার ছানাদের আগলে রাখার দৃশ্য।