বর্ষার বিদায়ে বাংলার রূপ
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ড. আবদুল আলীম তালুকদার
দেখতে দেখতে প্রকৃতির রানি বর্ষা বিদায় নিচ্ছে। প্রকৃতিতে শুভ্র-সাদা মেঘমালা ও কাশ ফুলের কোমল ডানা মেলে উঁকি দিচ্ছে অপরূপা শরৎ। ঋতু বৈচিত্র্যের পরিক্রমায় বর্ষার শেষ সময় চললেও তার রেশ এখনো রয়েই গেছে। এখনো প্রায়শ আকাশে দেখা মেলে কালো মেঘের ঘনঘটা, হঠাৎ করে নামতে শুরু করে অঝোর ধারায় বৃষ্টি।
আমাদের জীবনযাত্রার পথে বর্ষার স্নিগ্ধ পরশ প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। বর্ষার রূপ-রস আর সৌন্দর্যে প্রকৃতি সজিব হয়ে ওঠে। বৃষ্টি ধোয়া প্রকৃতির রূপে মন মেতে ওঠে। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ যেন হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। মরা নদীও বর্ষায় জেগে ওঠে তার রূপ-যৌবন জানান দিতে চায়। বাংলাদেশ যে নদীমাতৃক দেশ এটা পূর্ণতা পায় বর্ষাকালে। নদীর ময়লা-অবর্জনা, দুর্গন্ধ, কালো জল যেন হারিয়ে যায় বর্ষার ক্ষিপ্র নাচনে। প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। সত্যিই বর্ষা আমাদের মনের কথা, হৃদয়ের ভাবাবেগ বুঝতে পারে; আমাদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অভিযোগের কথা অনুধাবন করতে পারে। তাইতো বর্ষায় বৃষ্টি তার রিমিঝিনি নূপুর পায়ে ঝুমুর ঝুমুর তালে অহর্নিশ ঝরে পড়ে বাংলার উর্বরা ভূমিতে।
বর্ষায় প্রকৃতিতে দেখা মেলে সবুজের সমারোহ, যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই সবুজ বৃক্ষ হাতছানি দিতে থাকে। বর্ষার কোমলতা মানুষের হৃদয়টাকে যতটা ছুঁয়ে যায় বাংলার আর কোনো ঋতু এভাবে ছুঁতে পারে না। তাই বর্ষা বাংলার অনন্য ঋতু। বৃষ্টি যেমন প্রকৃতিকে স্নিগ্ধ, নির্মল, সতেজ আর উজ্জ্বল করে তেমনি মানুষের মনকেও ধুয়ে মুছে করে তোলে পবিত্রময়। বর্ষাকালে নৌকা, ডিঙি, ভেলা প্রভৃতি চলাফেরা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কৃষকেরার বৃষ্টিতে ভিজে ফসল তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। কারণ বর্ষাকাল পাট কাটার ও ধান চাষের উপযুক্ত সময়।
বর্ষা মানে বাহারি রঙের সুগন্ধি ফুলের সমাহার। বর্ষা ঋতু যেন ফুলের জননী।
বর্ষা যেন আমাদের প্রকৃতিকে আপন মনে বিলিয়ে দেয় এবং এর ফুলের সৌন্দর্য আমাদের করে তোলে বিমোহিত। আবহমানকাল ধরেই আমাদের প্রকৃতিকে বর্ষার ফুল স্বতন্ত্র সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়ে আসছে অনুপম উদারতায় এবং বৃষ্টিস্নাত বর্ষার ফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি আমাদের মন রাঙিয়ে আসছে অনাদি অনন্তকাল ধরে। বর্ষা ও তার ফুল যেন বাংলার প্রকৃতির আত্মা; বৃষ্টিস্নাত বর্ষার ফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি মানুষের মনে রঙ লাগিয়ে আসছে।
বর্ষার প্রধানতম ফুল কদম। তাছাড়া বর্ষার গাঢ় সবুজের সঙ্গে চারদিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শাপলা, কদম, কেয়া, তমাল, হিজল, জারুল, করবী, সোনালু, বকুল, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, রঙ্গন, অলকানন্দ, কলাবতী, চন্দ্রপ্রভা, কামিনী, কলমি ফুল, পদ্ম, বনতুলসি, দোলনচাঁপা, ঝিঙেফুল, সোনাপাতি, কচুফুল, হেলেঞ্চা ফুল, উলটকম্বল, ঘাসফুল, শিয়ালকাঁটা, কেন্দার, কুমড়োফুল এবং এ ছাড়া নানা রঙের অর্কিডসহ বাহারি অনেক ফুল।