ভীমপুর ও দিলালপুর পাশাপাশি দুটি গ্রাম দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট নদী ডালিয়া। নদীর ওপারে দিলালপুর গ্রাম ও ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেলার মাঠ।
প্রতি বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে ভীমপুর গ্রাম ও দিলালপুর গ্রামের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। এ খেলা দুই গ্রামের মানুষ অনেক আনন্দ উলস্নাসে উপভোগ করে। বিজয় দিবসের আগে থেকেই দুই গ্রামের মধ্যে ফুটবল খেলার উলস্নাস ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটা মানুষের মাঝে। খেলায় দুই দলই অনেক শক্তিশালী তবুও দিলালপুর গ্রামের ছেলেরা পরপর তিনবার খেলায় বিজয়ী হয়।
\হদুর্ভাগ্যবশত ভীমপুর গ্রামের ছেলেরা খেলায় পরাজিত হয়। পর পর তিনবার খেলায় বিজয়ী হয়ে দিলালপুর গ্রামের মানুষ আত্মহংকারী হয়ে ওঠে এবং ভীমপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে। তাই গত বছর দিলালপুর গ্রাম খেলায় বিজয়ী হয়েছে বলে ভীমপুর গ্রামের মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে এই নিয়ে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। অনেক রক্তপাত ঘটে দুই গ্রামের মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন ভীমপুর গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় ওই মাঠে আর দিলালপুর গ্রামের সঙ্গে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করবে না। এ বছর তারা ঠিক করেছে ভীমপুর গ্রামের মধ্যেই ফুটবল খেলার আয়োজন করা হবে এবং খেলায় প্রতিযোগী হিসেবে থাকবে দিলালপুর গ্রাম।
একথা শোনার পর দিলালপুর গ্রামের মানুষ না করে দেয়। তারা চায় প্রতিবারের মতো তাদের গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেলার মাঠে এবারও খেলা হবে দুই গ্রামের। কিন্তু ভীমপুর গ্রামের মানুষের একটাই সিদ্ধান্ত ভীমপুর গ্রামেই খেলার আয়োজন করা হবে। তখন তারা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে সবকিছু খুলে বলে, সবকিছু বিবেচনা করে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেয় এবারও ভীমপুর গ্রামের মধ্যেই ফুটবল খেলার আয়োজন করা হবে খেলায় অংশগ্রহণ করবে দুই গ্রামের মানুষই। দিলালপুর গ্রামের মানুষের মধ্যে আর কোনো উপায় থাকে না তারা রাজি হয়ে যায় ভীমপুর গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতে।
তখন ভীমপুর গ্রামে নতুন করে খেলার মাঠ তৈরি করার কাজ শুরু করা হয় নিজের গ্রামের মাঠে খেলা হবে একথা ভেবে গ্রামের মানুষের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। মাঠের চারপাশে লাল-নীল-হলুদ রঙের বাতি জ্বলছে সেই সঙ্গে যেন পুরো ভীমপুর গ্রাম আলোয় ঝলমল করছে। আনন্দে সারা গ্রাম মেতে উঠেছে এবং বিজয় দিবসের দিন ফুটবল খেলা দেখার জন্য অপেক্ষায় গ্রামের সবার।
অবশেষ বিজয় দিবসের দিন ঘনিয়ে এলো। খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য গ্রামের ছেলেরা প্রস্তুত। পরপর তিনবার পরাজয় বরণ করেছে- তাই তারা ঠিক করেছে এবার যেন বিজয় তাদের হয় এবং গ্রামের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। যথাসময়ে খেলা শুরু হলো দুই গ্রামের খেলোয়াড়দের মধ্যে, নিজের গ্রামের মাঠে খেলা উপভোগ করতে পেরে গ্রামের সবাই অনেক খুশি। দুই দলই লড়াই করে অবশেষ বিজয়ী হয় ভীমপুর গ্রাম। খেলায় বিজয়ী হয়ে যেন ভীমপুর গ্রামে ঈদের উৎসব শুরু হয়। পরপর তিনবার পরাজয়ের পর এবার বিজয়ী হয়েছেন তারা। সেই আনন্দে আত্মহারা ভীমপুর গ্রামবাসী তারা নিজেদের গ্রামকে নিয়ে গৌরব করে। অপরদিকে দিলালপুর গ্রামের মানুষের মন খারাপ একদিকে তাদের ঐতিহ্যবাহী মাঠে ফুটবল খেলা উপভোগ করতে পারেনি। অন্যদিকে, এবার খেলায় বিজয়ী না হওয়া সবকিছু মিলিয়ে যেন দিলালপুর গ্রামে শোকের ছায়া।