বাবাকে বাজারে যেতে দেখলেই তার পিছু নেয় শুভ, কারণ বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে মাছ কেনার সময় শুভ দেখে দেখে কিছু তাজা মাছও নিয়ে আসবে, এ জন্য!
শুভর ভীষণ শখ তাজা মাছ জলে জিইয়ে রাখা, ইতোমধ্যে সে অনেক ধরনের মাছ পস্নাস্টিকের বৈয়ম বালতিতে জিইয়ে রেখেছে! জলে মাছের দৌড়াদৌড়িটা খুব উপভোগ করে ছোট্ট শুভ! শুভ স্বপ্ন দেখে নিজের একটা অ্যাকোরিয়াম হবে তাতে রং-বেরঙের বাতি জ্বলবে, বিভিন্ন রকমের রঙিন মাছ সারাক্ষণ ছোটাছুটি করবে আর সেই মুগ্ধকর দৃশ্যটা মনপ্রাণ ভরে সে উপভোগ করবে! তাই আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুভ বাবাকে বলতে লাগল- বাবা, ও বাবা! আমাকে একটা অ্যাকোরিয়াম কিনে দাও না বাবা! বাবা মৃদু হেসে বলল আর কয়েকটাদিন অপেক্ষা কর সোনা, তোমার ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ হোক, তারপরে আমরা কয়েকটাদিনের জন্য বাইরে ঘুরতে যাব, আর সঙ্গে তোমার অ্যাকোরিয়ামও কিনে দেব। শুভ বাবার কথায় রাজি হয়ে বলল- ঠিক আছে বাবা! ও হঁ্যা আমাদের স্কুলের কাছেও একটা মাছের দোকান হয়েছে বাবা! ওখানে অনেক রকমের রঙিন মাছ এনেছে! বাবা বললেন, তাই? ওদের কথার রেশ ধরেই মাও বললেন- হঁ্যা ওখানে একটা নতুন দোকান হয়েছে কদিন যাবত দেখছি, খুব সুন্দর সুন্দর মাছ এনেছে রাস্তা থেকে দারুণ দেখা যায়! আমারও খুব ভালো লাগে! সেদিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম তোমার ছেলের বায়না সহ্য করতে না পেরে! বাবা বললেন- খোঁজ নিয়ে দেখো তো অ্যাকোরিয়ামসহ পাওয়া যায় কিনা! মা বললেন, হয়তো আনবে সবেমাত্রতো দোকান শুরু করল! তারপরেও আমি স্কুলে যাওয়ার পথে একবার খোঁজ নিয়ে দেখব! শুভ বাবা মায়ের এমন কথা শুনেতে খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো! কি মজা! অ্যাকোরিয়াম কিনব! কি মজা!
পরের দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় শুভ আর ওর মা দেখল সেই দোকানটা বন্ধ, কিন্তু স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফেরার সময় দোকানটা খোলা পেল এবং দু'জনেই দোকানে গেল, মা দোকানিকে জিজ্ঞাস করলেন- আপনাদের ওখানে অ্যাকোরিয়ামও আছে কি? দোকানি বললেন, না এখনো আনিনি তবে আগামী সপ্তাহ নাগাদ পাবেন, আর সঙ্গে আরও অনেক ধরনের মাছ বিদেশি পাখিও আনবো! মা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে! তখন অ্যাকোরিয়ামসহ কিছু মাছ নিয়ে যাব- আমার ছেলের জন্য। মা দোকানির কাছে জানতে চাইলেন, এখানে কি কি মাছ আছে? দোকানি বললেন, গাপ্পি গোল্ড ফিশ, টাইগার শার্ক আরও কয়েকটা আছে সবকিছুর নাম এই মুহূর্তে মনেও পড়ছে না! শুভ কাছ থেকে রঙিন মাছগুলো দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল যেন!
শুভ মাকে বলল, মা আমি গোল্ড ফিশ কিনব এগুলো বেশি করে নিয়ে দেবে! মা বললেন, ঠিক আছে বাবা, আগে তোমার পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপরে আমারা অ্যাকোরিয়াম কিনব এখান থেকে! তখন থেকেই প্রতীক্ষার প্রহর গুনে দিন কাটাতে থাকে শুভর; আর স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকে সেই দোকানটার দিকে। ইতোমধ্যেই দোকানটা সেজে উঠেছে যেন সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে! যোগ হয়েছে নিত্যনতুন সব কালেকশন! হরেক রকম বিদেশি পাখি, কবুতর আর রঙিন মাছের সম্ভারে প্রাণের স্পন্দন ঘটেছে দোকানটাতে! বেড়েছে দর্শনার্থীসহ ক্রেতাদের আনাগোনাও! এ সবকিছুই যেন প্রাণ ভরে উপভোগ করতে লাগল শুভ! অবশেষে শুভর প্রতীক্ষার দিন ফুরালো, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও! এলো সেই স্বপ্ন পূরণের দিন, আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার দিন! শুক্রবার সন্ধ্যায় বাবা মায়ের সঙ্গে শুভ চলে গেল তার বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত অ্যাকোরিয়াম কিনতে! দোকানে ঢুকে এত এত মাছ, পাখি ও কবুতর দেখে ছোট্ট শুভ যেন খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল! বাবা জিজ্ঞাস করলেন দ্যাখো বাবা পছন্দ কর কি কি মাছ নেবে! শুভ বলল, 'থথথ আমি গোল্ড ফিশ নেব বেশি করে, আর চারটা টাইগার শার্ক! বাবা শুভর কথা মতো মাছ নিল। সঙ্গে সুন্দর ঝকঝকে কাচের আলো ঝলমলে অক্সিজেনসহ বেশ বড় সাইজের একটা অ্যাকোরিয়াম!