বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
গল্প

পুকুরপাড়ের জোনাকি

যদিও জোনাকিরা বিলুপ্তির পথে। দালান বাড়ি, বিজলী বাতি, আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেটে ব্যস্ত সবাই। কমে গেছে ঝোপঝাড়, জলাশয়। জোনাকির বাসস্থান নেই গ্রামে। অবাধ কিটনাশক ব্যবহারও জোনাকি বিলুপ্তির কারণ হতে পারে
আলমগীর খোরশেদ
  ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পুকুরপাড়ের জোনাকি

সন্ধ্যায় অতুল মামার সঙ্গে নানু বাড়ির পুকুর পাড়ে গিয়ে অবাক সুতপা। হাজার আলোর পশরা সাজিয়ে পুকুরটা যেন হাসছে। জানতে চাইল সুতপা,

'মামা, এগুলো কি?

'এগুলো জোনাকি। দেখনি আগে? শহরে থাকো তো'।

' মামা, জোনাকি নিয়ে কিছু বলেন'।

'এসো, বসি আগে পুকুর ঘাটে। শোন জোনাকি হলো পুকুরপাড়, জলাশয়, গোবর ফেলার জায়গা বা গোবরটালে থাকা এক ধরনের গোবরে পোকা। দাঁড়াও ধরে দিচ্ছি'।

অতুল মামা জোনাক পোকা ধরে এনে সুতপার হাতে দেন। সুতরা, আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।

'ওয়াও মামা, দারুণ'।

'আমরা ছোটবেলায় জোনাকি পোকা ধরে কাঁচের বৈয়াম বা গস্নাসের নিচে রাখতাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পুকুরপাড়ে, কোনো ঝোপে, জলাশয়ের পাড়ে মিটি মিটি জ্বলতে থাকা এই পোকাদের বলে জোনাকি। সাধারণত পাখাওয়ালা গোবরে পোকাকে জোনাকি পোকা বলা হয়। ঝোপঝাড়, পাগার বা জলাশয়, পুকুরপাড়, পচাকাঠ হলো জোনাকির বসবাসের স্থান'।

'মামা, আগুন জ্বলে কীভাবে বলুন বিস্তারিত'।

'বলছি, জোনাকি পোকা মূলত নিশাচর পোকা। দিনের বেলায় বিশ্রাম করে কাটায়, ওরা রাতে বিচরণ করে। জোনাকি রহস্যময়ী প্রাণী। পুরুষ জোনাকি বায়োলুমিনেসেন্স নামক পদ্ধতির মাধ্যমে এই আলো জ্বালায়। ওরা একটানা আলো জ্বালায় না। একবার জ্বলে আরেকবার নেভে, এভাবে। আলোর পেছনে কাজ করে লুসিফেরাস, এর প্রধান কাজই হলো আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করা। লুসিফেরিন তাপকে ঠান্ডা রাখে এবং আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে দেওয়ার কাজটা করে থাকে। রাতে পথ দেখার জন্য জোনাকি আলো জ্বালায় না, এটা তাদের ভাব বিনিময়। জোনাকির তলপেটে আলো উৎপাদনকারী অঙ্গ রয়েছে। এই অঙ্গে লুসিফারিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। লুসিফারিন বায়ুর অক্সিজেনের জোগান পেলেই জ্বলে ওঠে। ফলে অক্সিলুসিফেরিন নামে একটি অণু তৈরি করে'।

'মামা, এটাতো সায়েন্স পুরোটা। বলে যান'।

\হ'হঁ্যা, বিজ্ঞানীরা জোনাকির জিনোম ডিকোড করেছেন। মজার বিষয় হলো, পুরুষ জোনাকিরাই উড়তে পারে,

তাদের ডানা থাকে বলে। মেয়ে জোনাকিদের ডানা থাকে না, ফলে ওরা উড়তে পারে না। আমরা যে আলো দেখি, তা পুরুষ জোনাকির। পুরুষ জোনাকির পেটে অনেকগুলো খন্ড বা ভাগ থাকে। এই ভাগগুলোর ৬ষ্ঠ ভাগে আলো হয়। জোনাকির আলো হলো তাদের ভাষা। পুরুষ জোনাকির আলোর সংকেত এসে মেয়ে জোনাকির মস্তিষ্কে ধরা পড়ে। তখন মেয়ে জোনাকি পুরুষের সংকেতে সাড়া দেয় এবং নিজেও সংকেত পাঠায়। পুরুষ জোনাকির পাঠানো সংকেত মেয়ে জোনাকির পছন্দ এবং স্বগোত্রীয় হতে হবে। পছন্দ হওয়া পুরুষ জোনাকির সংকেত লক্ষ্য করে মেয়ে জোনাকি তখন পুরুষ জোনাকির কাছে ছুটে যায়। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়'।

'মামা, জোনাকি ঢাকায় নেব কি করে'?

'নিতে নিতে মরে যাবে। যদিও জোনাকিরা বিলুপ্তির পথে। দালান বাড়ি, বিজলী বাতি, আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেটে ব্যস্ত সবাই। কমে গেছে ঝোপঝাড়, জলাশয়। জোনাকির বাসস্থান নেই গ্রামে। অবাধ কিটনাশক ব্যবহারও জোনাকি বিলুপ্তির কারণ হতে পারে'।

'কিরে সুতপা?, এখানে আয়, খেতে আয়।' সুতপার আম্মু এসে ডাক দেন।

সুতপা হাঁটতে থাকে আর ভাবে এবার ঢাকায় গিয়ে বন্ধুদের তাক লাগিয়ে দেবে জোনাকিদের গল্প বলে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে