রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
গল্প

বৃক্ষরোপণ

দেশের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় বনজ ও ফলজ গাছ লাগানো। প্রতি বছর সরকার জুন মাসে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা পয়সায় গাছ বিতরণ করে
আতিক এ রহিম
  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বৃক্ষরোপণ

দাদু আরমান সাহেব এশার নামাজের পর টিভির সামনে বসেন। উদ্দেশ্য দেশের বন্যা পরিস্থিতি জানা। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। আরমান সাহেবের বাড়ি গ্রামে। এখানে কোনো পত্রিকা পাওয়া যায় না। পত্রিকা পেতে হলে ৬ কিলোমিটার দূরে বালিগাঁও যেতে হয় ৫০ টাকা যাতায়াত ভাড়া দিয়ে। কারও কাছে পত্রিকা আনতে টাকা দিলে সে এসে বলে আনতে ভুলে গেছি দাদা বা কাকা বলে কেটে পড়ে। তখন আরমান সাহেবের মনটা একেবারে বিগড়ে যায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর এ কথা শুনলে।

একবার কলমা বাজারের কিছু দোকানদার এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের জন্য পত্রিকা আনার জন্য ব্যবস্থা করছিল সে। কয়েক মাস দেওয়ার পর হকার বলেন, আরও কিছু পত্রিকা গ্রাহক না বাড়ালে আমার পোষাবে না। চেষ্টা করে আরমান সাহেব গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে পারেনি। পত্রিকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। আরমান সাহেব মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন মানুষ এত টাকা খরচ করে অথচ মাসে ২০০/৩০০ টাকা পত্রিকা পড়ার পেছনে খরচ করবে সে মনমানসিকতার এখনো গড়ে ওঠেনি এখানে। তার আশপাশে অনেক শিক্ষিত ভদ্রলোক আছে কিন্তু পত্রিকা পড়ার ব্যাপারে একবারে উদাসীন।

আরমান সাহেব দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন তার এলাকার লোকজন একটু ব্যতিক্রম সংস্কৃতিমনার অভাব রয়েছে তাদের মাঝে। এ নিয়ে ভাবেন তিনি। শিল্প-সংস্কৃতি হলো মানুষের প্রাণ। আর যদি প্রাণই না থাকে তাহলে তো সে মৃত মানুষের সমান। সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পত্রিকা পড়েছেন সে অভ্যাস রয়ে গেছে তার এখনো। ঘরে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে তার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ধর্মীয় বই রয়েছে। নামকরা দেশ-বিদেশের লেখকের বই রয়েছে তার সংগ্রহে। এক বই কতবার পড়বেন!

শহরে গেলে নতুন বই কিনে আনে সে। ২/৩ দিনে পড়ে শেষ করে ফেলেন। মাঝে মধ্যে স্থানীয় বাজারে শহীদ মফিজ জয়নাল স্মৃতি পাঠাগারে যান, সেখানে গিয়ে সন্ধ্যায় বই পড়েন। বয়সের কারণে সেখানে মাঝে মধ্যে যাওয়া হয় না। তাছাড়া ঘরে বসে পত্রিকা, বই পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। টিভির খবর দেখার সময় মাঝে মধ্যে নাতি উহান এসে হাজির। বয়স ৮ বছর। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একটু চঞ্চলতা আছে তার মধ্যে। দাদু তুমি কি দেখ?

দাদু বলে, খবর দেখছি দাদা ভাই। দাদু খবর ভালো লাগে না। কার্টুন দাও। একটু পর দেই দাদা ভাই। দেখ কত পানি! মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে। পানির তোড়ে বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। উহান টিভির দিকে তাকিয়ে ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছে কেন দাদু?

দাদু বলে, বন্যার কারণে দাদা ভাই।

বন্যা কেন হয় দাদু? উহান বলে।

দাদু বলে, নানা কারণে বন্যা হয়। আমাদের দেশ নিচু। উজানে বেশি বৃষ্টি হলে পস্নাবিত হয়ে আমাদের দেশে বন্যা দেখা দেয়। তাছাড়া কতদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দেয়। আরও কিছু কারণ আছে খাল-বিল, পুকুর, জমি ভরাট করে রাস্তা ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষজন। পানি চলাচলের বাধা সৃষ্টি করে- ফলে লোকালয়ে এসে পড়ে তখন বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় এবং নদী পাড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আমরা গাছ কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছি এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে, খরা, ঝড় তুফানের সৃষ্টি হয়। দাদু, কিছু দিন আগে রেমাল নামে ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেল আমাদের দেশে। আমাদের দেশের সুন্দরবনের অনেক হরিণ মারা গেছে। উহান বলে, আমরা বেশি করে গাছ লাগাব দাদু।

হঁ্যা আমরাও গাছ লাগাবো দাদু। দেশের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় বনজ ও ফলজ গাছ লাগানো।

প্রতি বছর সরকার জুন মাসে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা পয়সায় গাছ বিতরণ করেন। উহান বলে, দাদু আমিও একটা গাছ লাগাব।

দাদু বলে, হঁ্যা তুমিও গাছ লাগাবে। আগামী কাল বালিগাঁও হাটে গিয়ে কিছু গাছ আনব তার মধ্যে একটা তালগাছ আনব। তুমি তালগাছ লাগাবে। বাড়িতে তালগাছ থাকলে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

উহান খুশি হয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলে আমরা বেশি করে গাছ লাগাব দাদু।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে