শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
গল্প

নীল পাহাড়

ইব্রাহিম জুয়েল
  ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
নীল পাহাড়

সে অনেক বছর আগের কথা। এক রাজার তিন পুত্র। আর তিন পুত্রের তিনজনই বিশেষ গুণের অধিকারী প্রথম পুত্র অত্যন্ত চালাক। দ্বিতীয় পুত্র ছিল অনেক সাহসী সুঠাম দেহের অধিকারী আর তৃতীয় পুত্রটির কাছে প্রথম দুইজন পুত্রের কোনো গুণই ছিল না। তবে একটি মাত্র গুণ আছে সেটাই হলো সে সত্যের প্রতি অটল। এই সত্যের জন্য তাকে কত সমস্যার মাঝে পড়তে হয়েছে ছোট্টবেলা থেকে। তার সত্যি কথা বলা ঢাকা পড়ে যেত তার বড় ভাইদের বুদ্ধির কাছে। তবুও সে তার নিজের কথায় ও কাজে অটল থাকে। সে জানে সত্য কখনো ঢাকা যায় না একদিন না একদিন তা প্রকাশ পাবেই। এই চরম সত্যিটা বুকে ধারণ করে জীবনে চলতে থাকে। বড় দুই ভাইয়ের কাছে এবং রাজার কাছেও সে অবহেলিত পুত্র। তার কোনো বন্ধু নেই বললেই চলে। এই নিয়ে তার কোনো আফসোস বা হিংসাও নেই। কারণ রাজার ছোট্ট পুত্র বিশাল মনের অধিকারী। প্রায়ই রাজার সভায় তিন পুত্র হাজির থকে। রাজার বড় পুত্র ও মেজো পুত্র মিলে প্রজাদের ওপর জুলুম করতে থাকে। প্রজারাও তাদের ক্ষমতার দাপটে রাজার দরবারে কিছুই বলার সাহস পায় না। ছোট্ট পুত্র সবকিছু জানেন একদিন রাজার সভায় ছোট্ট পুত্র সবকিছু তাদের দু'ভাইয়ের অনৈতিক কাজকর্মের কথা রাজার দরবারে পেশ করেন। কিন্তু রাজা তা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করতে চাইনি। রাজাকে তার বড় দুই ভাই কথা ঘুরিয়ে পঁ্যাচিয়ে উল্টো ছোট্ট পুত্রের দিকে দায়ভার দিয়ে দেয় তার বাবার কাছে। রাজা তার বড় দুই পুত্রের কথা বিশ্বাস করে ছোট্ট পুত্রকে শাস্তিস্বরূপ নীল পাহাড়ে চলে যেতে আদেশ করে।

\হরাজা বলেন, তোমার কথা যদি সত্যি হয় তুমি নীল পাহাড় থেকে এক মাস পর ফিরে আসবে। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে শাস্তিস্বরূপ তোমাকে সেখানে মৃতু্যবরণ করতে হবে। রাজার ছোট্ট পুত্র হঁ্যা-সূচক মাথা নেড়ে সায় দিল এবং নীল পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সবাই জানে যে নীল পাহাড়ে এক দৈত্য থাকে যেই নীল পাহাড়ে একবার প্রবেশ করে সে আর ফিরে আসতে পারে না। কিন্তু রাজা জানেন নীল পাহাড়ের রহস্য। রাজার দুই পুত্র মহাখুশি- কারণ তার ছোট ভাই আর ফিরে আসবে না এই ভেবে। রাজার দুইপুত্র এক সঙ্গে রাজ্যে অনৈতিক কাজ আরও প্রবলভাবে করতে লাগল আর রাজাকে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে লাগল।

রাজার ছোট্ট পুত্র নীল পাহাড় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার সামনে একটি সোনার তৈরি কলসি চোখে পড়ল তার মধ্যে অনেক পয়সা করি লক্ষ্য করল এবং রাজার ছোট্ট পুত্র সেই কলসিটাকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ের ভেতর প্রবেশ করল সঙ্গে সঙ্গে তার সামনে এক মস্ত বড় দৈত্য হাজির হলো রাজার ছোট্ট পুত্র ভয়ে কাঁপতে থাকে। সে মনে মনে চিন্তা করতে থাকে আজকে তার রক্ষা নেই। হিংস্র দৈত্য তাকে মেরে ফেলবে। ভয়ে ভিতু হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। দৈত্য রাজার ছোট্ট পুত্রকে উদ্দেশ্য করে বলল : এখানে কি একটা সোনার কলসি দেখেছ?

হঁ্যা দেখেছি। আমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। সাহস করে তাকে কলসিটি দেখাল।

\হদৈত্য তার সত্যি কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে পুরস্কারস্বরূপ সেই সোনার কলসিটি উপহার দিল। নীল পাহাড় মানুষ না ফিরে আসার প্রধান কারণ হচ্ছে লোভ আর মিথ্যা তাদের মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিত। তাই তারা ফিরে আসতে পারত না নীল পাহাড় থেকে। এই চরম সত্যিটা শুধু রাজাই জানত। কারণ রাজাও সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। রাজা অপেক্ষায় আছে সত্যি দেখার জন্য। এক এক করে একটি মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। ছোট্ট পুত্র রাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিল। রাজসভায় রাজা তার বড় দুই পুত্র, সব প্রজা, উজির-নাজির উপস্থিত ছিল। সবাই ছোট্ট পুত্রকে দেখে থ' বনে গেল। রাজার বড় পুত্রের চোখ মাথায় ওঠে গেল, কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না।

ছোট্ট পুত্র তখন তার বড় ভাইদের অপকর্মে কথা পেশ করল এবং সেদিন সব প্রজারাও ছোট্ট পুত্রের কথায় সায় দিল। রাজা সবকিছু বুঝতে সক্ষম হলো। তার দুই পুত্রকে উচিত শাস্তি দিল। উপহার হিসেবে ছোট্ট পুত্রকে রাজ্যের দায়িত্ব তথা রাজা ঘোষণা করল। রাজার বড় দুই পুত্র তাদের ভুল বুঝতে পারল। তারই সঙ্গে সেই রাজ্যে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে