গল্প
কচ্ছপের অবদান
কচ্ছপ তার চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করল। প্রবল বাতাসের মুখে শুনতে পেল- সৃষ্টিকর্তা মহৎ কাজের জন্য তার দেহকে আবৃত করে দিলেন। তার এই অবদানের জন্য তাকে এইভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন
প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
আশরাফ আলী চারু
অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখন কচ্ছপ তার পিঠটান দিয়ে দাঁড়াতে পারত। গঠনগাঠনে ছিল ঠিক গরু-ছাগলের মতো। আজকাল কচ্ছপের পিঠে যে শক্ত পেস্নট দেখা যায় সেই পেস্নট তখন ছিল না। গরু-ছাগলের সঙ্গে সে মাঠে চরে প্রচুর ঘাস খেত। হাঁটাচলায় গরু-ছাগলের মতোই খুব দ্রম্নত ছিল। খুব চঞ্চল ছিল। গায়ের জোর এত বেশি ছিল যে, তাকে দেখে দৈত্য-দানবেরাও ভয় পেত। তার নেতৃত্বে চলত সব পশুপ্রাণীরা। সবমিলে ভালোভাবেই দিন চলছিল।
হঠাৎ একদিন সেই দেশে নেমে এলো এক দৈত্য। পশুপ্রাণীদের ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেল। মাঠে বেরোতে পারে না। না খেয়ে থাকতে হয়। একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে দৈত্য। কে মোকাবিলা করবে দৈত্যের সঙ্গে? কে যাবে সামনে? দৈত্যটা দেখে ফেললেই তো নির্গাত মৃতু্য। এ অবস্থায় বনের পশুপ্রাণীরা একটা গোপন সভা বসাল। সভায় সিদ্ধান্ত হলো যেহেতু কচ্ছপ বেশি ও সাহসী, তাই তাকেই দৈত্যের সঙ্গে লড়তে হবে। সবার সিদ্ধান্ত কি অবমাননা করা যায়? তাই কচ্ছপ দৈত্যের সঙ্গে লড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।
প্রথম দিন সে একটি নারকেল গাছ থেকে নারকেল পেড়ে আনল। নারকেল ভেঙে ভেতরের পানি ও শাঁস খেয়ে খোলটা পিঠে বসাল। কিন্তু খোলটা আকারে অনেক ছোট!
এবার আমাজন বন থেকে আনাল বিশেষ এক ফল। যে ফলের নাম কেউ জানে না। পিঠের মাপে সেই ফলের খোল ভেঙে বসাল পিঠে। এবার তার পিঠ হয়ে গেল বিপদমুক্ত। দৈত্যের আঁচড় লাগলেও তার শরীরে সহজে ক্ষত হবে না। কয়েকদিন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ করে কচ্ছপ নিজেকে প্রস্তুত করে নিল। এবার দৈত্যের সঙ্গে লড়াইয়ের পালা।
ক'দিন থেকে না খেতে পেরে দৈত্যের পাগল হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল! ঠিক এমন একসময়ে কচ্ছপটি মাঠে নেমে এলো।
কচ্ছপকে দেখা মাত্রই দৈত্য এলো দাঁত কিড়মিড় করে। কচ্ছপের পেস্নট বসানো পিঠে দুই হাতের নখ বসিয়ে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাইল। কচ্ছপ তার শক্তি খাঁটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আবার নখ বসাতে গিয়ে দৈত্য দেখল তার সব নখ খসে পড়ে গেছে। এবার সে কচ্ছপের পিঠে দাঁত বসাল। দুই কামড় দিতে না দিতেই তার সব দাঁত খসে পড়ে গেল। হাতের আঙ্গুল ও মুখ থেকে রক্ত বেরোতে লাগল। ভয়ানক রাগে দৈত্য উঠে বসল কচ্ছপের পিঠে। দৈত্যের এত ওজন! ওজনের চাপে কচ্ছপ চ্যাপ্টা হয়ে গেল। দৈত্যের নখ নেই, দাঁত নেই। কচ্ছপ খাওয়ার মুরোদ নেই! অবশেষে কচ্ছপকে ছেড়ে দিয়ে সে চলে গেল।
কচ্ছপ দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো উঁচু হয়ে আর দাঁড়াতে পারল না। পিঠ থেকে পেস্নট ছাড়ানোর চেষ্টা করল। দৈত্যের ওজনে এমন ভাবে সেই পেস্নট লেগে গেছে যে, তা আর খোলা গেল না। মাঠে নেমে এলো পশুপ্রাণিরা। তারা চেষ্টা করেও পেস্নট খুলতে ব্যর্থ হলো।
একটি ভালো কাজ করতে পেরে কচ্ছপ তার চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করল। প্রবল বাতাসের মুখে শুনতে পেল- সৃষ্টিকর্তা মহৎ কাজের জন্য তার দেহকে আবৃত করে দিলেন। তার এই অবদানের জন্য তাকে এইভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন।
তারপর থেকেই কচ্ছপের পিঠে পেস্নট বসানো। সেই থেকে সে অত্যন্ত ধীরগতির প্রাণী।