বাংলাদেশের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। ষড়ঋতুর পরিক্রমায় সারা বছর কোনো না কোনো ফলের সমারোহ থাকে। তবে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস আসে নানা প্রকারের রসালো, বাহারি ও রঙিন ফলের সুবাস নিয়ে। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ- এই দুই মাস গ্রীষ্ম বা গরমকাল। ঋতুচক্রে গরমকাল হলেও ফলের বিবেচনায় এই দুই মাসকে বলা হয় মধুঋতু। গ্রীষ্মকাল এলেই শিশুসহ সববয়সি মানুষের কাছে রসালো সব ফলের ছবি ভেসে ওঠে। মৌসুমি ফলগুলোই গ্রীষ্মকালের মূল সৌন্দর্য। বৈশাখ থেকে বৃষ্টি আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে গ্রীষ্মের ফল পরিপুষ্ট হয়। পুষ্ট ফলের ভেতর টক-মিষ্টি রসে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে ফলের খোসার রঙ বদলে যায় ও ফলে মিষ্টি মিষ্টি ভাব আসে। গ্রীষ্মঋতুতে জন্মানো প্রায় সব ফলই হয় মিষ্টি, সুঘ্রাণযুক্ত ও সুদর্শন।
আম গ্রীষ্মকালের প্রধান ফল। এ দেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ৪৫ ভাগ উৎপাদন হয় বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মধ্যে অর্থাৎ দুই মাসে। এজন্য গ্রীষ্ম মৌসুমকে বলা হয় ফল-ফলাদির আধার। গ্রীষ্মকালে এ দেশে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, পেঁপে, কলা, নারিকেল, সফেদা, তালশাঁস, লেবু, কামরাঙা, ড্রাগন ফল, ডেউয়া, তৈকর, প্যাশন ফল, কাজুবাদাম, গোলাপজাম, বাঙ্গি, চুকুর, আঁশফল, ফলসা, করমচা, হামজাম, বৈঁচি, লুকলুকি, জামরুল, গাব, বেতফল, মুড়মুড়ি, খেজুর, ননিফল, আতা ও শরিফা ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফল শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, পেঁপে, কলা শিশুদের প্রিয় ফল। ফলের মাসে বাংলার ঘরে ঘরে বসে নানারকম ফলাহারের আয়োজন। বাড়িতে বাড়িতে এ ঋতুতে তৈরি করা হয় ফল থেকে বাহারি খাদ্যসামগ্রী। শিশু থেকে বৃদ্ধ সববয়সি মানুষই গ্রীষ্মকালীন ফল খেতে পারে।
শিশুদের জন্য বাড়তি পুষ্টির মৌসুম হলো গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন হাতের কাছে পাওয়া যায়, তেমনি সহজলভ্যও বটে। চিকিৎসকদের মতে, একজন মানুষের দিনে কমপক্ষে ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। পুষ্টিগুণে, স্বাদে, রসে, গন্ধে ও রোগ প্রতিরোধে গ্রীষ্মকালের ফলের জুড়ি নেই। মৌসুমি এসব ফল দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন পাস্তুরিত খাবার, পানীয়, ওষুধ ইত্যাদি। শরীরের ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন বি ও সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ও আয়রন ইত্যাদির চাহিদা মেটাতে গ্রীষ্মকালীন ফল বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সতর্কতা : গ্রীষ্ম মৌসুমে ফল খাওয়ার সময় বাড়তি সতর্কতাও প্রয়োজন। ফল টাটকা ও চকচকে রাখতে ফলের সঙ্গে মাঝে মাঝে ফরমালিন, কেমিক্যাল মেশানো হয়! এমনকি ফলের পোকা দমনে ও পাকাতে বিষাক্ত কীটনাশক মেশানো স্প্রে করতে দেখা যায়। তাই গ্রীষ্মকালীন ফল খাওয়ার সময় বিশেষ করে শিশুদের বেলায় বাড়তি সতর্কতা দরকার। কেমিক্যালযুক্ত ফল নানারকম রোগব্যাধি তৈরি করে। কেমিক্যাল থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে বাজার থেকে ফল কিনে বাসায় এনে কমপক্ষে আধাঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে। তাছাড়া, যে ফল যে সময়ে পরিণত ও পরিপুষ্ট হয় সে সময়ে ক্রয় করা উত্তম। অপরিণত ফল পানসে ও স্বাদ-গন্ধহীন। কাঁঠাল খুব সহজপাচ্য নয়। বেশি খেলে গ্যাস বা হজমজনিত সমস্যা হতে পারে। আবার গ্যাসট্রিক ও পেটের সমস্যায় লিচু কম খাওয়াই ভালো।