একটি মুহূর্তও ঘরে থাকতে চায় না মেয়েটি- সারাদিন ছুটোছুটি। মাঝেমধ্যে একটু বকাঝকা করলেও যথেষ্ট আদর করেন মা। বাবাও অনেক ভালোবাসেন ওকে। স্কুল বন্ধ থাকায় আজ সকালে সেই যে বেরিয়েছে, এখনো ফেরার নাম নেই। বলে গেছে, ঐশীদের বাড়ি যাচ্ছে- আজ পুতুল বিয়ে। ঐশীদের বাড়িতে বসে পুতুল খেলছে প্রিয়ন্তি। আজ ওদের পুতুলের বিয়ে। প্রিয়ন্তি কন্যাপক্ষ আর ঐশী ছেলেপক্ষ। ঐশী একটা লাল জামা গায়ে দিয়েছে। কী সুন্দর, নকশী করা।
পুতুল সাজানোর ফাঁকে প্রিয়ন্তি বারবারই দেখছে ঐশীকে। ভীষণ ভালো লাগছে লাল জামাটি। মলিন মুখে এক টুকরো হাসি এঁকে জিজ্ঞেস করল- জামাটি কত হয়েছে রে? দারুণ সুন্দর জামাটি, তোকে বেশ লাগছে! ঐশী মুখে একটা জয়ের হাসি এঁকে বলল- পাঁচ হাজার টাকা। আকাশ থেকে পড়ল প্রিয়ন্তি। ছোট হলেও বুঝতে পারে- ওর বাবা চাকরি করে সামান্য বেতন পায়। তা দিয়েই চলছে সংসার। এত টাকা দিয়ে জামা ...
ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। পুতুল বিয়ে শেষ করে ফিরে এলো প্রিয়ন্তি।
জামাটির কথা কিছুতেই যেন ভুলতে পারছে না প্রিয়ন্তি। প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনো এত ছুটোছুটি করবে না। বাবা-মার কথা সবসময় মেনে চলবে। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে।
তারপর বড় হয়ে একটা ভালো চাকরি করবে। তখন ইচ্ছেমতো সবকিছু কিনবে। বাবারও কোনো কষ্ট হবে না। প্রিয়ন্তি যতই এসব কথা ভাবছে, ততই যেন লাল জামাটির কথা আরও বেশি করে মনে পড়ছে। রাতে পড়তে বসেও বারবার মনে হয়েছে জামাটির কথা- আঃ! এমন একটি জামা যদি আমার থাকত! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে, টেরও পায়নি।
ঘরের সঙ্গে বাগান। গোলাপ, শিউলি, জবা, হাসনাহেনা, আরও কত কী ফুলের গাছ!
বাগানের এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছে প্রিয়ন্তি। রাতের অন্ধকারে আকাশের তারাগুলো মিটিমিটি করে উঁকি মারছে। চাঁদটি ঢেলে দিচ্ছে আলোর ফোয়ারা। হঠাৎ একটি পরী নেমে এলো আকাশ থেকে। সাদা পোশাকে সাদা ডানা মেলে পরীটা দাঁড়িয়ে আছে সামনে। কী খুকী, এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? প্রিয়ন্তি অবাক চোখে পরীটাকে দেখছে বারবার।
আমি পরী। তোমাদের বাগানে এসে প্রতিদিন ফুল ফুটিয়ে দিয়ে যাই। কী হয়েছে তোমার? নরম হাতের আদরে প্রিয়ন্তি তাকাল পরীটার দিকে। বলল- আমার বান্ধবীর একটি লাল জামা আছে। জামাটি আমার ভীষণ পছন্দ। কিন্তু এত দাম দিয়ে...। পরীটি হাসিমুখে বলল- ও, এই কথা!
প্রিয়ন্তি দেখল, পরীটি সামনে হাত বাড়াতেই একটি লাল টকটকে জামা কোথা থেকে যেন উড়ে এলো। এই নাও- বলে পরীটি লাল জামাটি বাড়িয়ে দিল। কী সুন্দর নকশী করা জামা! এটি যেন ঐশীর জামার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। ঠিক যেন পরীটির মতো!
প্রিয়ন্তি জামাটি নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে হাসিঝরা মুখে।
মা এসে ডাকতেই ঘুম ভেঙে গেল প্রিয়ন্তির। বুঝতে পারে, সে স্বপ্ন দেখছিল।
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। চোখ রগড়াতে রগড়াতে ওঠে পড়ে বিছানা থেকে। গল্প