সেতু ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সেতুর স্কুলে বাবা দিবসে বাবাকে চিঠি লিখতে বলেছে। সেতু বুঝতে পারে না সে কী লিখবে। তার মা নেই। বাবাই তাকে মা আর বাবার ভালোবাসা দিয়েছে। সেতুর বাবা একজন রিকশা চালক। সেতুকে স্কুলে দিয়ে তার বাবা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পরে। সেতুর স্কুল ছুটি হলে সেতুকে বাসায় রেখে দুপুরে একসঙ্গে খেয়ে আবারও বেরিয়ে যায় রিকশা নিয়ে। সেতুর জন্য বাবার এত ভালোবাসা সেতু লিখে তা বোঝাতে না পেরে কান্না করতে শুরু করে।
সেতুর কান্না দেখে ক্লাসের শিক্ষক রহমান স্যার এগিয়ে এসে সেতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে সেতু? কাঁদছ কেন মা? সেতু কিছু বলতে পারে না। রহমান স্যার সেতুর খাতায় যা দেখল, তা দেখে তার চোখে পানি চলে আসল। সেখানে লেখা 'আমার বাবা শুধু আমার বাবাই না। আমার বাবা আমার মা-ও।'
সেতু চোখ মুছে চিঠি লিখতে শুরু করে। তাতে লেখা থাকে কতটা ভালোবাসে সেতু বাবাকে। কতটা ভালোবাসে সেতুকে তার বাবা। আরও লিখেছে বড় হয়ে সেতু বাবার সব কষ্ট দূর করে দেবে। সেতু মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। যেমনটা তার বাবা স্বপ্ন দেখে।
লেখা শেষে রহমান স্যার সেতুকে বললেন, তোমার বাবাকে চিঠিটা দিও। সেতু চিঠিটা ব্যাগে নিয়ে বাড়িতে এলো। তারপর বাবার হাতে চিঠিটা দিল।
সেতুর বাবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। সে চিঠিটা পড়ে আনন্দে কাঁদতে লাগল। এই কান্না আনন্দের। সেতু তার বাবার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, বাবা তুমিই আমার পৃথিবী। তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। তুমি আছ বলেই আমি আছি। তুমি আমার গর্ব বাবা।
সেতুর বাবা হয়তো সেতুর সব আবদার পূরণ করতে পারে না। কিন্তু সেতুর জন্য তার বাবার ভালোবাসায় কখনো কোনো কমতি ছিল না। এটা সেতু খুব ভালো করেই জানে। এক বাবার জন্য চিঠির শব্দের গাঁথুনিতে মায়া ভরা এক মেয়ের সীমাহীন ভালোবাসা যেন।