গল্প

হাঁসের ছানা হাসি কান্না

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

আখতারুল ইসলাম
এক গেরস্তের ঘরে একটা হাঁসের দুটি ছানা। হাঁসটির ছানা দুটি নিয়ে মা বড়ই 'মছিবতে' আছে। একটা শুধু হাসে। আর একটা শুধু কান্না করে। হাঁসের জীবন প্রায় অস্থির। যদিও জন্মের পর হাঁস ছানা দুটির নাম রাখে। একটার নাম পঁ্যাক পঁ্যাক। আরেকটার নাম ট্যাক ট্যাক। সমস্যা হলো পঁ্যাক পঁ্যাক এখন শুধু হাসে। আর ট্যাক ট্যাক শুধু কান্না করে। অবশ্য প্রথম প্রথম হাসি কান্নার কারণ বের করতে না পারলেও এখন আর বুঝতে বাকি নেই। কোথা থেকে এ হাসি কান্না শিখল। কান্না হাসি শিখেছে তাতেও সমস্যা নেই। সমস্যা হলো কারণে অকারণে হাসা। কারণে অকারণে কান্না। একদিন পঁ্যাক পঁ্যাক বলল, মা তুমি যখন খাবার আনতে যেতে আমাদের রেখে, ডান দিকে পাশের ঘরে যেতাম। সেখানে একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা আছে। সে শুধু কান্না করে। মা কথা বললেও, মা হাসলেও কান্না করে। এমন কি মা কান্না করলেও সে কান্না করে। আমি শুনতে শুনতে শিখে ফেললাম কান্না করা। এই বলে পঁ্যাক পঁ্যাক কান্না করতে শুরু করে। হাঁস বিরক্ত হয়ে বলে থাম এবার। কিন্তু পঁ্যাক পঁ্যাকের থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। বাধ্য হয়ে পঁ্যাক পঁ্যাকের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে ট্যাক ট্যাককে বলল, তুমি কীভাবে হাসি শিখলে? ট্যাক ট্যাক বলল, আমি বামদিকের ঘরে উঠোনে গেলে দেখি সে মায়ের ফুটফুটে এক বাচ্চা। সে শুধু হাসে। মা আদর করলে খলখলিয়ে হাসে। মা হাসলেও সে মুচকি মুচকি হাসে। মা রাগলেও হাসে। মা কান্না করলেও হাসে। আমি ওর হাসি দেখতে দেখতে হাসি শিখে ফেলেছি। বলতে বলতেই ট্যাক ট্যাক হাসি শুরু। হাঁস পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাকের কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক কে সাঁতার শিখাতে হবে হাঁসের। বলল, চল- জলে নামতে হবে। মা পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাককে জলে নামাল। ওরা আস্তে আস্তে শিখছে মায়ের কাছ থেকে। হঠাৎ করে কান্না শুরু করে। পঁ্যাক পঁ্যাক এর কান্না দেখে ট্যাক ট্যাকও হাসি শুরু করে। মা কি করবে ভেবে যাচ্ছে না। ভাবছে ওর বাচ্চাগুলো পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি। হঠাৎ এক অদ্ভুত কান্ড ঘটল। পুকুরের মাছেরা পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাকের হাসি কান্না শব্দে উপরে ভেসে ভেসে দেখছে। দেখছে পুঁটি, তেলাপিয়া, মলা, টেংরা, শিং, মাগুর, কই, বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেলও। ওরা বলছে, মাছকে তো জীবনে এমন করতে দেখিনি। হাঁসের বাচ্চাদের কান্না ও হাসি। এই দুর্যোগে কোনো কোনো মাছ হাঁসের বাচ্চাদের গায়ে সুরসুরি দিচ্ছে। এতে তাদের হাসি কান্না আরও বেড়ে গেলে, ধীরে ধীরে মাছেরা জড়সড় হতে পারে। আর এই সুযোগে দুই-একটা পুঁটি, মলা ও ডেলা মাছ গাপুস গুপুস খেলেও বড় বড় হা করে বাচ্চাদের দিকে যখন রুই কাতলা নামছে, ভয়ে পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক বলল, চল দ্রম্নত পাড়ে। চল মা মাছেরা কামড় দেবে। কোনোমতে হাঁসের পিছু পিছু উপরে বসে পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাকের জীবন রক্ষা হয় এবারের মতো। কিছুদিন পর পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাকের মামা আসে বেড়াতে। মামাকে পেয়ে মহাখুশি। মামা তাদের জন্য কিছু খেলনাপাতি নিয়ে এলো। কিন্তু ঝামেলা বাজে তাদের হাসি কান্না নিয়ে। পঁ্যাক পঁ্যাক শুধু কাঁদে, আর ট্যাক ট্যাক শুধু হাসে। মামা বলল, তোমরা এমন করছ কেন? পঁ্যাক পঁ্যাক বলল, মা আমার খেলনাগুলো পছন্দ হয়নি। তুমি আমার জন্য একটা পুতুল আনতে। পুতুল আমার খুব পছন্দ। মামা বলল, বুঝলাম। কিন্তু ট্যাক ট্যাক তুমি হাসছ কেন? ট্যাক ট্যাক বলল, আমার খুব পছন্দ হয়েছে খেলনাগুলো। মাম্মি, আমার গাড়ি হাঁড়িপাতিল, এগুলা খুব ভালো লাগে। তুমি এইসব এনেছ। তাই খুশিতে হাসছি। ঘরের ভেতর থেকে হাঁস বলল, তোমরা কার সঙ্গে কথা বলছ? পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক বলল, মামা এসেছে। হাঁস এসে বললো ভাই তুমি এদের কথা বিশ্বাস করো না। ওরা তোমার খেলনাপাতির জন্য হাসি কান্না করছে না। মামা বলল, কেন তাহলে ওরা হাসছে কানছে? হাঁস সব খুলে বলে। মামা, শোন! ওদের কালই একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। হাঁস বলল, ঠিক বলেছ।আমিও মনে মনে তাই ভাবছিলাম। কালই আমি ওদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। দেখি ডাক্তার কি বলে? ডাক্তার সব শুনে বলল, আমার জীবনে তো এমন রোগী আমি পাইনি। মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে আর ভাবছে। ডাক্তারকে এমন ভাবতে দেখে পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক হাসি কান্না শুরু করে। হাঁস বারবার বলছে, চুপ কর! চুপ কর! কিন্তু কে শোনে কার কথা।প্যাঁক পঁ্যাক কান্না করছে, ট্যাক ট্যাক হাসছে। ডাক্তারের মাথায় হঠাৎ এক আইডিয়া আসে বলল, দেখুন দীর্ঘদিন আমি নানা ধরনের রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। মনে হচ্ছে, ওদের কোনো ওষুধে কাজ করবে না। ওদের আস্তে আস্তে যে বাচ্চাদের কান্না হাসি দেখে তোরা এসব শিখেছে, তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যদি ওদের আচরণ দেখে কিছুটা পরিবর্তন হয়। হাঁস বলল, ঠিক বলেছেন ডাক্তার সাহেব। আমি ওটা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। এই বলে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল। হাঁস পঁ্যাক পঁ্যাককে ডান দিকের ঘরে উঠোনে নিয়ে যায়। পঁ্যাক পঁ্যাক যে বাচ্চাকে দেখে কান্না শিখেছে। সে বাচ্চা তখন আর কান্না করে না। উঠানে খেলাধুলা করে। কেউ হাসলে তার সঙ্গে হঠাৎ পড়ে গেলে ব্যথা পেলে কান্না কণ্ঠে কান্না করে। ট্যাক ট্যাককে নিয়ে যায়, বামদিকের উঠোনে। ট্যাক ট্যাক যে বাচ্চাকে দেখে হাসতে শিখেছে। সেও উঠোনে খেলাধুলা করে। কারো খুশির কথাই হাসে। দুখের কথায় কাঁদে। প্যাঁক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক মাকে বলল, ওরা যখন শুধু কাঁদছে না, শুধু হাঁসছে না কেন? হাঁস বলল, ওরা বড় হচ্ছে তাই। পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক বলল, আমরাও বড় হচ্ছি। মা বলল, হঁ্যা। তোমরা এখন থেকে আর অযথা হাসবে না আর অযথা কাঁদবে না। কারো সুখে হাসবে আর অন্যের দুখে কাঁদবে। পঁ্যাক পঁ্যাক ও ট্যাক ট্যাক বলল, ঠিক আছে।