গল্প

মিতু এবং তার জাদুর কাঠি

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

দিলরুবা নীলা
মিতু স্কুল থেকে ফিরছে। আজ সে একা ফিরছে- কারণ আজ রিতু আসেনি স্কুলে। ওর মায়ের নাকি জ্বর। স্কুলেও আজ মিতুর ভালো লাগেনি। রিতু পাশে না থাকলে ওর কিছুই ভালোলাগে না। মিতু যে পথ দিয়ে বাড়ি ফেরে সে পথটা ভারি সুন্দর। পথের দুপাশে নানা রঙের বুনোফুল ফুটে থাকে। সেগুলো দেখতে মিতুর বেশ ভালো লাগে। মাঝেমাঝে সে হাত দিয়ে ফুলগুলো ছুঁয়ে দেয়। মিতু কখনো ফুল ছেঁড়ে না। কারণ সে জানে গাছের প্রাণ আছে ফুল ছিঁড়লে গাছেরা ব্যথা পায়। মিতু আসার পথে ভাবল রিতুর মাকে দেখে আসবে। তাই সে রিতুদের বাড়ির দিকে হাঁটছিল। হঠাৎ ওর চোখ গেল পথের পাশে ঝোপের দিকে। মিতু দেখল ঝোপের ভিতর লাল রঙের কী একটা যেন লতাপাতা দিয়ে আটকে আছে। মিতু লতাপাতাগুলো ছাড়িয়ে দিতেই খুব সুন্দর একটা লালফুল বের হলো। বাহ্‌ খুব সুন্দর ফুলতো। একথা বলতে বলতে মিতু ফুলটিকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। অমনি ফুল থেকে বেড়িয়ে আসে এক পরি। আরে কে তুমি? কোথা থেকে এলে? আমি ফুলপরি। বনে বনে ফুল ফোটানোই আমার কাজ। রাতভর কাজ করি দিনে ফুল হয়ে ফুটে থাকি। ওহ! তাই বলো। তুমি আমাকে মুক্ত করেছ। এতদিন লতাপাতা দিয়ে আটকে ছিলাম। বের হতেও পারিনি। দম বন্ধ হয়ে ছিল ফুলপরি বলল। তাই বুঝি? হঁ্যা, তাই। তুমি আমার খুব উপকার করলে আমি তোমাকে কিছু দিতে চাই। কিছুই দিতে হবে না। তোমার উপকার হয়েছে তাতেই আমি খুশি। মিতু বলে। তুমি বললে তো হবে না। আমি দেবই। বলো কী চাও? কিছু না ফুলপরি। ঠিক আছে তুমি যখন চাইবে না। তখন আমি ইচ্ছে করেই দিই। বলেই পরি জাদু দিয়ে একটা কাঠি আনল। সেটা মিতুর হাতে দিয়ে বলে এটা জাদুরকাঠি। এ জাদুরকাঠিকে বলে তুমি তোমার তিনটি পছন্দের কাজ করিয়ে নিতে পারবে। কী বলো পরি! আমি যা চাইব জাদুরকাঠি সব এনে দেবে? হঁ্যা দেবে। তবে তিনটা মাত্র। একটা জাদুরকাঠির তিনটা কাজ করার ক্ষমতা থাকে। তাহলে আমি এখন যাই? ঠিক আছে যাও। আবার এসো। ভালো থেকে বন্ধু। পরি চলে যায়। মিতু জাদুরকাঠিটি তার ব্যাগে ভরে রাখে। আর মনে মনে ভাবে জাদুরকাঠির কাছে বাসায় গিয়ে কী কী চাইবে। অনেক চকলেট, দশটা সুন্দর জামা আর পাঁচ জোড়া জুতা তো অবশ্যই নেবে। রিতুদের বাসায় পৌঁছে মিতু দেখে রিতু মায়ের মাথায় পানি ঢালছে আর কাঁদছে। মিতুকে দেখেই আরো যেন কান্না বেড়ে যায়। রিতু বলে ওদের পাড়ায় অনেকেই নাকি জ্বরে আক্রান্ত। একজন নাকি মারাও গেছে। মিতু, আমার মা ভালো হবে তো? রিতু কান্না মাখানো কণ্ঠে বলে। রিতুর বাবা নেই। মা-ই ওর একমাত্র অবলম্বন। রিতুর কান্নাকাটি দেখে মিতুর কী যে হয়। সে ব্যাগ থেকে জাদুরকাঠি বের করে। কাঠি হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে, জাদুরকাঠি জাদুরকাঠি এ পাড়ার সবার অসুখ ভালো করে দাও। বলতে না বলতেই রিতুর মায়ের শরীর অনেকটাই সুস্থ হয়ে যায়। রিতুর মুখে হাসি ফোটে। মিতু বাড়ি ফেরার পথে দেখা হয় ডাক্তার চাচার সঙ্গে। ডাক্তার চাচা মিতুর বাবার বন্ধু। মিতু তাকে দেখেই বলে- আস্‌সালামু আলাইকুম চাচা। কেমন আছেন? এইতো ভালো আছি। তুমি কেমন আছ? কোথায় গিয়েছিলে? আমার বান্ধবী রিতুর মায়ের ভীষণ জ্বর, তাই দেখতে গিয়েছিলাম। আর বলো না, ওই পাড়ার অনেকেরই জ্বর। আর জ্বর হবেই না কেন। সবার বাড়ির আশপাশটা কী নোংরা! আবর্জনায় ভরা! মশারা বাড়িঘর তৈরি করে বসেছে। তাই তো অসুখ হয়। মিতু বুঝতে পারে সবার জ্বর হওয়ার কারণ আশপাশের অপরিছন্ন পরিবেশ। ওর মন খারাপ হয়ে যায়। ও ব্যাগ থেকে আবার জাদুরকাঠি বের করে আর মনে মনে বলে। 'জাদুরকাঠি তুমি আমাদের এলাকার পরিবেশ পরিষ্কার পরিছন্ন করে দাও। আর মানুষের মনে ভালোবুদ্ধি দাও যাতে তারা তাদের আশপাশের আবর্জনা সব সময় পরিষ্কার রাখে।' মিতুর কথামতো কাজ হয়, একটু এগিয়ে যেতেই সে দেখে লোকজন এলাকার ময়লা পরিষ্কার করছে। মিতু বাসায় ফিরে আসে। ঘরে পা দিয়েই দেখে ওদের গ্রামের একলোক বাবার কাছে বসে খুব কান্নাকাটি করছে। মিতু মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে মা লোকটি কাঁদছে কেন? মিতুর মা বলে, লোকটি একজন কৃষক এ বছর খরায় পানির অভাবে তার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তার ভীষণ অভাব। তোর বাবার কাছে টাকা চাইতে আসছে। সব শুনে মিতুর মন খারাপ হয়ে যায়। সে নিজের ঘরে গিয়ে জাদুরকাঠি হাতে নেয়। বলে জাদুরকাঠি আমাদের গ্রামে বৃষ্টি দাও যাতে ভালো ফসল হয়। যাতে কারো আর অভাব না থাকে। মিতুর কাছে এখন আর জাদুরকাঠি নেই। মিতুর তিনটি চাওয়া পূরণ করে সে চলে গেছে। মিতু তার কয়েকজন বন্ধু নিয়ে একটি দল করেছে তারা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে বলে। নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে বলে। পানি কীভাবে নিরাপদ করা যায় তাও বলে। কেউ বিপদে পড়লে ওরা এগিয়ে যায়। মিতুর মনে হয় তার জাদুরকাঠির আর প্রয়োজন নেই।