গল্প

নিতুর নানার আমবাগান

আগে এখানে জমি ছিল। মাটি ভরাট করে কয়েক বছর আগে সেখানে আমের বাগান করেন নিতুর নানা। এ বছর প্রথম আম ধরেছে গাছে। এই জন্য নানা তাদের আম বাগান দেখতে দাওয়াত করেছে। ভিডিও করে বাগানের ছবি পাঠিয়ে ছিল নিতুকে দেখার জন্য। সেই জন্য আমবাগান দেখতে সে খুব উতলা হয়ে আছে।

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০

আতিক এ রহিম
অনেক দিন হয় নানার বাড়ি যাওয়া হয় না নিতুর। এবার মাকে বলে রেখেছে পরীক্ষা শেষ হলে গ্রীষ্মের ছুটিতে নানার বাড়ি বেড়াতে যাবে। কাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নিতু কাপড় গোছাতে থাকে নানার বাড়ি যাওয়ার জন্য। সে মিরপুর বাংলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা অফিস থেকে আসা মাত্র জ্বালাতন করে- বলে, বাবা তুমি অফিস থেকে ছুটি নাও। বাবা বলেন, এখন অফিসে কাজের অনেক চাপ। কয়েকদিন পর কাজের চাপ কমলে তোমাদের নিয়ে বেড়াতে যাব। বাবা বুঝতে পারেন তার মেয়ে মন খারাপ করছে। ডাক দিয়ে কাছে নিয়ে বলেন, তোমরা নানার আমবাগান দেখতে যাবে? নিতু মাথা ঝুলিয়ে বলে, হঁ্যা বাবা। বাবা বলেন, আম পাকতে আরও কয়েক দিন দেরি আছে, তখন ঠিক নিয়ে যাব। এখন বৈশাখ মাস, আম পাকে জ্যৈষ্ঠ মাসে। ভেতরের রুম থেকে মা এসে বলেন, তোমার বাবা ঠিক বলেছেন। আর কয়দিন পর আম পাকা শুরু হবে। সবাই মিলে তখন নানুর বাড়ি বেড়াতে যাব। নিতু খুশি হয়ে বাবার কাছে গিয়ে বসে। জ্যৈষ্ঠ মাস। সূর্যের তাপ খুব বেশি। রাতে কাপড় গুছিয়ে রেখেছে নিতুর মা। আজ ছুটির দিন। সকালে নানা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় নিতুরা। নানার বাড়ি পদ্মার ওপাড়ে মাদারীপুর। ঢাকা থেকে এখন যেতে বেশি সময় লাগে না। ছুটির দিন হওয়ায় আজ যানজট নেই। নিজেদের গাড়ি সকাল আটটার দিকে চলে আসে মাওয়া। সেতুর টোল কেটে ভোঁ করে গাড়ি চলে আসে পদ্মা ব্রিজের ওপর। কী সুন্দর দৃশ্য পদ্মা নদীর! ব্রিজ থেকে দেখা যায় সেই সব সুন্দর দৃশ্য। নিতুর বাবা গাড়ির গতি একটু কমিয়ে দেয় নিতুর আবদারে। ব্রিজের নিচ দিয়ে কত নৌকা, ট্রলার, শিপ যাচ্ছে। ওপর থেকে নদীর দুই পাড়ের দৃশ্য দেখে আনন্দে ভরে যায় চোখ। দেখতে দেখতে ব্রিজ পার হয়ে চলে আসে ভাঙা স্টেশনের কাছে। সকাল ১০টার মধ্যে নানা বাড়ি পৌঁছে যায় তারা। নানা বিকালে সবাইকে নিয়ে আমবাগান দেখতে বের হন। নানা বাড়ি থেকে আমবাগান ১০ মিনিটের পথ। বাগানে এসে সবাই অবাক এত সুন্দর পাকা পাকা আম ঝুলছে গাছে। ঘুরে ঘুরে সবাই দেখছে। নিতুর নানা বলেন, এখানে বিভিন্ন ধরনের আম রয়েছে। নিতু একটা বড় আম দেখে জানতে চায়, নানা এই আমের নাম কি? নানা বলেন, এটা ফজলি আম নানু। এছাড়া এখানে আরও আছে, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, আম্রপোলি, বারোমাসি, গোপাল ভোগ, খিরসাপাত, অরুনা, লখনা। নিতুর হাতে নানা কয়েকটি আম পেড়ে দিয়েছেন, সেগুলো হাতে নিয়ে ঘুরছে। আমবাগান ঘুরে সবাই ক্লান্ত। বাগানে বসার বেঞ্চের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সেখানে সবাই বসে। বাগানের কেয়ারটেকার পাকা আম কেটে বাটিতে করে সামনে এনে রাখে। সবাই আম মুখে দিয়ে প্রশংসা করেন। এত মিষ্টি আম! \হনিতুর নানা ব্যাংকে চাকরি করতেন। রিটায়ার্ড করেছেন কয়েক বছর আগে। সে যখন রাজশাহী কর্মরত ছিলেন তখন সেখানকার এক লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার পরামর্শে আমবাগান করা। আগে এখানে জমি ছিল। মাটি ভরাট করে কয়েক বছর আগে সেখানে আমের বাগান করেন নিতুর নানা। এ বছর প্রথম আম ধরেছে গাছে। এই জন্য নানা তাদের আম বাগান দেখতে দাওয়াত করেছে। ভিডিও করে বাগানের ছবি পাঠিয়ে ছিল নিতুকে দেখার জন্য। সেই জন্য আমবাগান দেখতে সে খুব উতলা হয়ে আছে। বাগানে বসে সবাই পেট ভরে খায়। নিতু খুব খুশি। নানাকে সে বলে ঢাকা যাওয়ার সময় আমি আম নিয়ে যাব। নানা বলেন, তোমাদের এক ঝুড়ি আম পাঠাব। চিন্তা করো না নানু। নিতুর আনন্দে মন ভরে যায় নানার কথা শোনে।