শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১
গল্প

আমার মা-ই সেরা মা

স্কুলে বন্ধুদের কাছে এবং স্যার-ম্যাডামের কাছে জানতে পারল এই মে মাসে নাকি মা দিবস। মা দিবসের কথা শুনে ওর বন্ধুরা একেক জন একেক পরিকল্পনা করতে শুরু করল। মার জন্য কে কী করবে। কীভাবে মাকে শুভেচ্ছা জানাবে এসব আরকি।
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
  ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
আমার মা-ই সেরা মা

স্কুল ব্যাগ ঘরে রেখেই এক দৌড়ে প্রথমে মায়ের কাছে ছুটে যায় রিশিতা। একটুখানি মায়ের গলা ধরে পেছনে ঝুলে থাকে। তারপর গিয়ে স্কুল ড্রেস খুলে। স্কুল থেকে ফিরে প্রতিদিনের রুটিন এটি। কিন্তু আজ স্কুল থেকে এসে যেন অন্য কিছু ঘটল। আজও স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগ রেখেই দৌড়াল রিশিতা। না, মায়ের কাছে না। ও দৌড়াল বাবা ঠিক যে জায়গাটাতে বসে পত্রিকা পড়ে সেখানে যাওয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখল টেবিলে পত্রিকা পড়ে আছে। ওর বাবা বাসায় নিয়মিত একটা জাতীয় পত্রিকা রাখে। আজ হকার আংকেল পত্রিকা দিয়ে যাওয়ার পর বাবা এখনো খুলে দেখেনি। পত্রিকার ভাঁজ দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। ঝটপট খুলে ফেলে পত্রিকাটা। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে খুঁজে বের করে ছোটদের পৃষ্ঠাটা। এরপর পৃষ্ঠা খুলে অনেকের লেখার মধ্যে নিজের লেখাটা দেখে আকাশ সমান আনন্দিত হয়। বারবার পড়ে নিজের লেখাটা। এই লেখাটা যে ওর কেউ তা বিশ্বাস করবে? নিজে নিজেকে প্রশ্ন করে ও। আবার ভাবে বিশ্বাস না করার কী আছে! লেখার নিচে মোটা করে নিজের নাম আর স্কুলের নাম তো আছেই। লেখাটা ছড়া না আবার গল্পও না। একটা চিরকুট বলা যেতে পারে। আবার অনুভূতিও বলা যেতে পারে। কাজেই যে কেউ বিশ্বাস করবে। লেখাটার শিরোণাম দিয়েছে পাতার সম্পাদক। শিরোণামটা হলো, আমার মা-ই সেরা মা। মাকে নিয়েই লেখা।

হয়েছে কি স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় সময়ই মাকে নিয়ে গল্প করে। কার মা কাকে আদর করেছে, কাকে বকে দিয়েছে, কাকে মেরেছে, কাকে খাইয়ে দিয়েছে। এসব আর কি। কিন্তু মাকে নিয়ে রিশিতা কোনো গল্পই করে না বন্ধুদের সঙ্গে। মাকে নিয়ে কত গল্পই তো আছে! কোনটা বলবে ও? রাতের বেলা কোলে নিয়ে দোলাতে দোলাতে ঘুম পারিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার গল্প। সকাল বেলা আদর করতে করতে ঘুম ভাঙানো এরপর কোলে করে বেসিনে নিয়ে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেওয়ার গল্প। বই-খাতা আর কলম ধরিয়ে দিয়ে পাশে বসে স্যার হয়ে যাওয়ার গল্প। খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে খেলার সঙ্গী হয়ে যাওয়ার গল্প। বন্ধের দিনে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার গল্প। দুষ্টুমি করেও বকা না খাওয়ার গল্প। গল্পের তো শেষ নেই। কাজেই নিজের মাকে নিয়ে গল্প মনের গহিনেই জমা রাখে রিশিতা।

আট দিন আগের কথা। স্কুলে বন্ধুদের কাছে এবং স্যার-ম্যাডামের কাছে জানতে পারল এই মে মাসে নাকি মা দিবস। মা দিবসের কথা শুনে ওর বন্ধুরা একেক জন একেক পরিকল্পনা করতে শুরু করল। মার জন্য কে কি করবে। কীভাবে মাকে শুভেচ্ছা জানাবে এসব আরকি। রিশিতা মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। ভালোবাসার কথা ও সরাসরি বলতে পারবে না। ওর লজ্জা লাগবে। অন্য কিছু কি করবে সে আইডিয়াও মাথাতে আসে না। ঠিক তার পরের দিন রিশিতা পত্রিকাতে একটা ঘোষণা দেখল। ওর বাবা বাসাতে যে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখে সেই পত্রিকার ছোটদের বিভাগ প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। সেই পত্রিকার ছোটদের পাতায় দেখল ঘোষণাটা। সেখানে লেখা ছিল, তোমরা তো জানো মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়। মা দিবস উপলক্ষে তোমরা তোমাদের লেখা ছোট গল্প, ছড়া, অনুভূতি, হাতে আঁকা ছবি পাঠিয়ে দাও জলদি। আমরা যত্ন করে ছেপে দেব। এই ঘোষণা দেখে রিশিতা ভাবল মাকে নিয়ে একটা গল্প লিখে পাঠাবে। কিন্তু গল্প কীভাবে লিখতে হয় ও তা জানে না। আর কোন গল্পটাই বা লিখবে। যে কারণে গল্প না লিখে অনুভূতি হিসেবে মন যা চায় তাই লিখে পাঠিয়ে দিল।

আর সেই লেখাটাই আজ ছেপে দিল পত্রিকার পাতার সম্পাদক।

আজ স্কুল থেকে এসে মায়ের কাছে ছুটে না গিয়ে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলেও তা ব্যতিক্রম বলা যাচ্ছে না। ও তো মার জন্যই পত্রিকার কাছে ছুটে গেছে। পত্রিকাটা হাতে নিয়ে এবার মার কাছে দৌড়ে যায় রিশিতা। মা তখন সবজি কাটছিল। পেছনে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর পর পত্রিকাটা দেখিয়ে বলে, দেখো মা আমি তোমাকে কত্ত ভালোবাসি।

মা হাত বাড়িয়ে পত্রিকাটা নেয় রিশিতার কাছ থেকে। এরপর পড়তে শুরু করে। পেছনে মায়ের গলা ধরে রিশিতাও নিজের লেখাটা মায়ের সঙ্গে পড়তে থাকে।

রিশিতা লিখেছে, 'পৃথিবীতে অনেক মা আছে। আমারও বাবার-মা আছে। আমার মায়েরও মা আছে। সবার মা সবাইকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার মা সবার চেয়ে আলাদা। আমার মা আমাকে আকাশ সমান ভালোবাসে। আমার মায়ের সঙ্গে আর কারও মায়ের তুলনা হয় না। মা'কে আমি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। আমার মা-ই সেরা মা।'

লেখাটা পড়ে মা পেছনে হাত দিয়ে রিশিতাকে সামনে টেনে নেয়। এরপর- আমার লক্ষ্ণী মা, আমার সোনা মা বলে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয় রিশতাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে