শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
গল্প

তালহাদের ভালো কাজ

তালহা ঝোঁপের কাছে কাছে ভাঙা হাঁড়ির পাত্রে পানি রেখে দিল। যেন পশুপাখিও তা পান করতে পারে। এভাবে করতে করতে পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মিলে পুরো পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ল। মাঠে কাজ করা লোকরাও তৃষ্ণা পেলেই চলে আসছে তালহাদের কাছে। মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে পানি পান করছে। পান করা শেষে সবাই তালহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে যাচ্ছে।
এম সোলায়মান জয়
  ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০
তালহাদের ভালো কাজ

প্রচন্ড গরমের জন্য স্কুল বন্ধ। তালহাসহ গ্রামের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে দিন পার করছে।

দুপুরের রোদে বাইরে থাকা যায় না। ঘরের ভেতরেও প্রচুর গরম।

\হশৈশবের বয়সে বাড়ির উঠোনে বসে বসে খেলার মন নেই। সবাই চাই বাইরে খেলতে।

এরই জের ধরে তালহা, ফাহিম, আনাস, সিমু, শিলাসহ পাড়ার ছেলেমেয়েরা বাইরে খেলতে যায়। প্রচুর গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা কষ্টকর হলেও চঞ্চল ছেলেমেয়েরা ওসব পাত্তাই দেয় না।

বাড়ির সামনের পুকুরপাড়ে খেলছে সবাই। খেলতে খেলতে তালহা খেয়াল করল একটু পরপর গ্রামের কুকুরগুলো পুকুরে এসে পানি খাচ্ছে। গাছে থাকা পাখিও একটু পরপর উড়ে এসে পানি খাচ্ছে। এসব দেখে তালহা ভাবতে লাগল। যদি পশুপাখিরই এত তৃষ্ণা পায় তাহলে এই প্রখর রোদে যারা মাঠে কাজ করছে তাদের না জানি কত কষ্ট হচ্ছে? তাই তালহা ভাবছে ওই মাঠে কাজ করা মানুষের জন্য কিছু করার।

তালহা সব বন্ধুদের ডেকে বলল বিষয়টা। তারপর ভাবতে থাকল কীভাবে সাহায্য করা যায়। ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিল- সবাই মিলে বাড়ি থেকে কলস

ভর্তি পানি এনে খাওয়াবে। এই গরমে ঠান্ডা বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই।

বাবা বলেছেন, এই গরমে বেশি বেশি ঠান্ডা পানি পান করতে। কারণ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি চলে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এজন্য বেশি বেশি পানি পান করতে হয়।

অতঃপর সবাই ভাবল, বাড়ি থেকে টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানি কলস ভরে এনে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাছের ছায়ায় বসে থাকব। আর পথচারী ও মাঠের কৃষকদের পানি খাওয়াব।

যেই ভাবা সেই কাজ। সবাই যার যার বাড়ি থেকে ছোট ছোট কলস ভর্তি পানি আর গস্নাস নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

তালহার হাতে পানির কলস ও গস্নাস দেখে মা প্রশ্ন করল? এগুলো নিয়ে দুপুর রোদে কোথায় যাও তালহা?

-আমি রাস্তার পাড়ে গাছের ছায়ায় যাচ্ছি মা।

-কেন?

তালহা মাকে সব কথা খুলে বলল। শুনে মা অনেক খুশি হলো। এই অল্প বয়সে মনের মধ্যে মানুষের জন্য এত মায়া দেখে মায়ের মনটা ভরে গেল।

-ঠিক আছে যাও। এরপর যখন পানি শেষ হয়ে যাবে তখন আমায় ডেকো। আমি তোমাদের কলস ভরে দেব। তোমাদের ভালো কাজে আমাকেও সঙ্গী কর।

-ঠিক আছে মা। বলেই তালহা বের হয়ে গেল।

পাড়ার কয়েকটা রাস্তার মোড়ে দু'জন করে করে সবাই পানি নিয়ে গাছের ছায়ায় বসল। রাস্তা দিয়ে পথচারী তৃষ্ণার্ত লোক পানি দেখে এগিয়ে এসে খেতে চাইলেই গস্নাস ভরে পানি দিচ্ছে। আবার অনেককে ডেকে বলছে পানি খেয়ে যেতে। এভাবে ছোটদের এত সুন্দর উপকারী কাজ দেখে সবাই খুশি হতে লাগল। সবাই গর্ব করতে লাগল।

তালহাদের দেখে আরও পাড়ার ছেলেমেয়েরা যুক্ত হলো। বাড়তে থাকল ছেলেমেয়েদের সংখ্যা। বাড়তে থাকল কলসের পরিমাণও।

তালহা ঝোঁপের কাছে কাছে ভাঙা হাঁড়ির পাত্রে পানি রেখে দিল। যেন পশুপাখিও তা পান করতে পারে। এভাবে করতে করতে পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মিলে পুরো পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ল।

মাঠে কাজ করা লোকরাও তৃষ্ণা পেলেই চলে আসছে তালহাদের কাছে। মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে পানি পান করছে। পান করা শেষে সবাই তালহাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে যাচ্ছে।

এভাবে দেখতে দেখতে পাশাপাশি পাড়া দিয়েও জানাজানি হয়ে গেল। সেই সঙ্গে নিজ নিজ পাড়ার ছেলেমেয়েরাও একই কাজ শুরু করে দিল। এভাবেই তালহাদের ভালো কাজ ছড়িয়ে পড়ল পাড়ায় পাড়ায়। মানুষের মুখে মুখে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে