গল্প

চিতাবাঘের প্রতিশোধ

বনে বাস করত এক শিকারি ঈগল পাখি। সে সুযোগ পেলেই ছো মেরে বিভিন্ন পশুপাখিদের বাচ্চা ধরে নিয়ে যেত। তার বাসা ছিল একটা বিশাল বটগাছের ডালে। সেখানে বসে সে বাচ্চাদের মজা করে খেতো। তাই বনের পশুপাখিরা বাইরে বের হওয়ার সময় নিজের বাচ্চাদের যথাসম্ভব লুকিয়ে রেখে যেত। তারপরও ঈগলের দৃষ্টি বলে কথা! সে ঠিকই খুঁজে খুঁজে সেই বাচ্চাদের ধরে ধরে খেতো।

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

সাগর আহমেদ
অনেক অনেক দিন আগের কথা। ভারতের উত্তর প্রদেশের কুমায়ন নামের গভীর বনে বাস করত এক চিতাবাঘ দম্পতি। একটা বড় ছাতিম গাছের তলায় ছিল তাদের বাসা। এভাবে দিন যায়। চিতা বাঘিনী একদিন চারটা বাচ্চা দিল আর ওদের নাম রাখলো রাম্বু, জাম্বু, ভোম্বা ও হিমানী। তিনটা ছেলে বাচ্চা আর একটা মেয়ে বাচ্চা। তারা অনেক যত্ন, ও আদর করে বাচ্চা চারটিকে বড় করতে লাগল। প্রথম প্রথম চিতাবাঘ একাই বনে গিয়ে হরিণ শিকার করে আনত। কিন্তু বাচ্চাগুলো দিন দিন বড় হতে লাগল আর ওদের খিদে বেড়ে যেতে লাগল। ওই দিকে বনের হরিণের সংখ্যাও কম। ফলে চিতাবাঘ একা শিকারে যেয়ে সুবিধা করতে পারত না। তাই এবার সে বাঘিনীকে নিয়ে শিকারে বের হতে লাগল। বাচ্চাগুলো বাসায় একা হয়ে গেল। অন্যদিকে, ওই বনে বাস করত এক শিকারি ঈগল পাখি। সে সুযোগ পেলেই ছো মেরে বিভিন্ন পশু পাখিদের বাচ্চা ধরে নিয়ে যেত। তার বাসা ছিল একটা বিশাল বটগাছের ডালে। সেখানে বসে সে বাচ্চাদের মজা করে খেতো। তাই বনের পশুপাখিরা বাইরে বের হওয়ার সময় নিজের বাচ্চাদের যথাসম্ভব লুকিয়ে রেখে যেত। তারপরও ঈগলের দৃষ্টি বলে কথা! সে ঠিকই খুঁজে খুঁজে সেই বাচ্চাদের ধরে ধরে খেতো। আর চিতাবাঘতো ছিল বেপরোয়া। সে তার বাচ্চাদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টাটাও করল না। তার বিশ্বাস ছিল চিতাবাঘের বাচ্চাদের ধরে খাওয়ার সাহস ঈগলের হবে না। তাই সে নির্ভয়ে তার বউকে নিয়ে শিকারে বের হয়ে যেত আর সারা জঙ্গল ঘুরে শিকার শেষে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ফিরত। বাচ্চারাও খুব খুশি হয়ে হুড়োহুড়ি করে শিকার করে আনা খাবার খেতো। এর মধ্যে জাম্বু ছেলেটি একটু বেশি খেতে পছন্দ করত। খেয়ে খেয়ে সে অন্য বাচ্চাদের চেয়ে অনেক নাদুসনুদুস হয়ে উঠল। একদিন সন্ধ্যায় ঈগল পাখি আকাশে উড়তে উড়তে নিচে তাকিয়ে খাবার খুঁজছিল। সে চিতাবাঘের বাচ্চাগুলোকে দেখে ফেলল। প্রথমে ভাবল, 'না, বাবা চিতাবাঘের বাচ্চা ধরে কাজ নেই, পরে এর ফল খারাপ হতে পারে। " কিন্তু পরে জাম্বুকে দেখে তার আর লোভ সংবরণ করা হলো না। সে ছো মেরে নিচে নেমে তার নখর দিয়ে জাম্বুকে আঁকড়ে ধরেই আকাশে উড়াল দিয়ে তার বটগাছের বাসার দিকে উড়ে যেতে লাগল। অন্য বাচ্চাগুলো চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করল। চিতাবাঘ দম্পতি তখন মাত্র হরিণ শিকার করে বাসায় ফিরছিল। দূর থেকে তারা বাচ্চাদের চিৎকার শুনতে পেল। তারা দ্রম্নত গতিতে বাসায় ফিরে আসতে লাগল। চিতাবাঘ দম্পতি বাসায় এসে জাম্বুকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর শুনে তো রেগে আগুন। চিতাবাঘ তার বউকে বলল, 'তুমি বাচ্চাদের সঙ্গে থাক, আমি ঈগল পাখির খোঁজে যাচ্ছি।' তারপর চিতাবাঘ উপরের দিকে তাকাতে তাকাতে ঈগল পাখি আর জাম্বুকে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ তার চোখ পড়ল বটগাছের ডালে। সে দেখলো ঈগল পাখিটা জাম্বুকে মেরে ডালে ঝুলিয়ে ঠোকর মেরে মেরে খাচ্ছে। চিতাবাঘের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। সে ক্ষিপ্র গতিতে একটা গাছে উঠে গেল। সেখান থেকে সে লাফিয়ে লাফিয়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে লাগল। এভাবে সে বটগাছের কাছে চলে এলো। ঈগল পাখিটি তখন খাওয়ায় ব্যস্ত। সে এসব কিছুই খেয়াল করতে পারল না। চিতাবাঘ এক লাফে বটগাছের ডালটিতে পৌঁছে গেল। আর তক্ষুনি সে ঈগল পাখির ঘাড়ে কামড় দিয়ে ওকে নিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ল। মুহূর্তেই সে ঈগল পাখিটিকে কামড়ে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। ঈগল পাখি সেখানেই মারা গেল। চিতাবাঘ তার প্রতিশোধ নিয়ে শান্তি পেল। এই গল্পের শিক্ষা হলো বেশি লোভ করতে নেই। লোভে পাপ, পাপে মৃতু্য।