গল্প

ভূতকে ভয় দেখানো

'ইজাজ সত্যিই তো তোর অনেক সাহস। উল্টো আমাদেরই ভয় দেখিয়ে ছাড়লি!' 'আমি বুঝতে পেরেছিলাম তখনই, তোরা একটা কিছু করবি। আর যখন তোরা আমাকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলি তখনই বুঝে গেছিলাম

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

জহির টিয়া
ক্রিকেট পাগল ছেলে ইজাজ। সন্ধ্যাবেলা ক্রিকেট খেলে সে বাড়ি ফিরছিল। খেলার মাঠ ও তাদের গ্রামের মাঝে প্রায় আধা কিলোমিটারের একটা ব্যবধান। এই দু'য়ের মাঝে একটা বাঁশবাগান। এতে পনেরো-বিশটা বাঁশের ঝাড়। একেকটা বাঁশঝাড়ে দেড়শ-দুশো বাঁশগাছ গিজগিজ করছে। চব্বিশ ঘণ্টা সেই বাঁশ বাগানে কড়কড়, ফড়ফড় শব্দ করে। মাঝেমধ্যে ভয়ানক বিকট শব্দও আসে। সন্ধ্যা নামলেও বিভিন্ন বয়সি মানুষের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। দিনের আলোতেও নাকি এইখানে ভূতেরা ভয় দেখায়। কিন্তু দিনের আলোতে ভূতদের ভয়কে উপেক্ষা করে সাবই যাতায়াত করে। সূর্য ডুবুডুবু হলেই ভূতদের উৎপাত আরো বেড়ে যায়। তবে সন্ধ্যার পর খুব বেশি জরুরি না হলে তেমন কেউ এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করে না। প্রতিদিন বিকালবেলা খেলার মাঠে খেলার জমজমাট আসর বসে। বড়দের পাশাপাশি ছোটোরাও খেলে বিভিন্ন ধরনের খেলা। খেলার মাঠের কাছাকাছি ইজাজের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়ি। তারা সবাই হুমায়ূন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বিকালবেলা একদিন খেলার মাঠে না গেলে যেন পুরো বিকালটা মাটি হয়ে যায়। তাই তো প্রতিদিন খেলার মাঠে ছুটে যায় ইজাজ। প্রতিদিনই কেউ না কেউ সঙ্গে থাকে। আজকে তার সঙ্গীদের মধ্যে রহিম নানাবাড়ি গেছে। টিপু বাবার সঙ্গে হাটে গেছে। সামাদের ঠান্ডা-জ্বর! তাই আজকে একাই ছুটে যায় খেলার মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিতে ছিল ইজাজ। খেলার মাঠ হতে বের হওয়ার এমন সময় ইজাজকে তার বন্ধুরা ভয় দেখিয়ে দিল। কেউ বলল, 'দোস্ত আজকে আমাদের বাসায় থেকে যা।' কেউ কেউ বলল, 'চল্‌ আমরা তোকে বাঁশবনটা পার করে দিয়ে আসি।' বন্ধুদের কথা শুনে ইজাজ মনে মনে ভাবল। যদি আমি থেকে যাই বা তারা এগিয়ে দিয়ে আসে। তাহলে তাদের কাছে ভীতু ছেলে হয়ে যাব। না, তা করা যাবে না। নইলে তারা যখন-তখন ভীতুর ডিম বলে রাগাবে! তাই ইজাজ বলে উঠল, 'না রে দোস্ত। আমি যেতে পারব। তোরা থাক। কালকে ইশকুলে দেখা হবে।' এই বলেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করল। ভয়কে জয় করার পরিকল্পনা মনের ভেতর শক্ত করে বাঁধে ইজাজ। বাঁশবাগানের কাছাকাছি আসতেই ভয়ানক আওয়াজ কানে ভেসে এলো। পরক্ষণে ভেসে এলো আঁতুড়ঘরের বাচ্চার কান্না। ইজাজ কিছুটা ভয় পেলেও সে সঙ্গে সঙ্গে তার নাক চেপে চিকন স্বরে বলতে লাগল, 'খেঁলার মাঁঠে এঁকজনকে ইচ্ছেমতো পিঁটাইলাম। আঁসার পঁথে আঁরো দুঁইটা দুঁষ্টু মঁহিষকে পিঁটাইলাম। এঁবার তোঁদের পাঁলা...' ইজাজের কথা শেষ না হতেই কালো কাপড় দিয়ে তাকে ঢেকে দিলো ভূতেরা। ইজাজ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগল। কিন্তু ওদের শক্তির কাছে পেরে উঠছে না কিছুতেই। তাকে টেনেহিঁচড়ে একেবারে বাঁশবাগানের মাঝে নিয়ে চলে গেল। 'কীঁ রেঁ তুঁই নাঁকি খেঁলার মাঁঠে কাঁকে পিঁটিয়ে আঁসলি। রাঁস্তায়ও দুঁইটা মঁহিষকে। এঁবার চঁল তোঁরে আঁমরা খেঁয়ে সাঁবাড় কঁরব।' ভূতেরা বলতে বলতে খিকখিক করে হাসতে লাগল। ইজাজ কিছুটা তাদের কথায় ভড়কে গেলেও বেশ সাহসী কণ্ঠে বলল, 'তোঁরা আঁমার কিঁছুই কঁরতে পাঁরবি না। আঁমিই তোঁদের খেঁয়ে ফেঁলব। তোঁদের কঁত সাঁহস! পাঁরলে এঁই কাঁপড় প্যাঁচানো ছেঁড়ে দে। তাঁরপর তোঁদের মঁজা দেঁখাচ্ছি। তোঁদের মঁতো কঁত ভূঁতকে আঁমি জঁব্দ কঁরেছি। আঁমার দাঁদা ছিঁল ভূঁত তাঁড়ানো ওঁঝা। আঁমায় ছেঁড়ে দে নঁইলে আঁমি এঁমন মঁন্ত্র পঁড়তে লাঁগব। তঁখন তোঁরা জ্বঁলেপুঁড়ে মঁরবি। আঁমার পাঁয়ে পঁড়ে কাঁদলেও রেঁহাই পাঁবি না।' তাড়াহুড়ো করে ইজাজকে ছেড়ে দিল তার ভূত সেজে থাকা বন্ধুরা। সবাই বলে উঠল, 'ইজাজ সত্যিই তো তোর অনেক সাহস। উল্টো আমাদেরই ভয় দেখিয়ে ছাড়লি!' 'আমি বুঝতে পেরেছিলাম তখনই, তোরা একটা কিছু করবি। আর যখন তোরা আমাকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলি তখনই বুঝে গেছিলাম। তোরা আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিস।' 'সত্যিই বন্ধু তুই সাহসী বটে! তুই ভূতকেও ভয় দেখাতে পারিস! তোকে নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।' বন্ধুদের একজন বলল ইজাজকে। ইজাজ মুচকি হেসে বলল, 'এখন তোরা বাড়ি যেতে পারবি? নাকি আমি তোদের এগিয়ে দিয়ে আসব।' 'এই বলে আমাদের লজ্জা দিস না বন্ধু। আমরা যেতে পারব। চল সবাই বাড়ি যাই।' এই বলে ইজাজেরা বাঁশবাগানের ভেতর হতে বেরিয়ে রাস্তায় এলো। আর নিজেদের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।