গল্প
শহীদ মিনারে ফুল
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মো. আব্দুর রহমান
ফাগুনের সকালে পাখির কলকাকলির আবেশে ওদের ছাদে এলো আশিক ও সজীব দুই ভাই। এসেই প্রাণভরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল দুজনেই। চারিদিকে গোলাপের মৌ মৌ গন্ধে মনোরম একটা পরিবেশ! এমন একটা সকালের অপেক্ষায় ছিল আশিক। আজ সেই সুসময়টা এসেছে; তাও আবার ফেব্রম্নয়ারি মাস বলে কথা।
গত কয়েক মাস ধরে কতই না কথা শুনতে হয়েছে দাদু আর মায়ের কাছে, শুধু ফুল গাছগুলোর জন্য। কেন এই ফুল গাছ? কী দরকার? যত সব আবর্জনা! এসব প্রশ্ন শুনতে শুনতে আশিক হতাশ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও ওর দাদি আর ছোট্ট ভাই সজীব অবশ্য কিছুটা হলেও উৎসাহিত করেছে। তাইতো এবার ছোট ভাইকে পাঠালো সবাইকে ডাকার জন্য।
কিছুক্ষণের মধ্য একে একে সবাই এলো ছাদের উপরে। লাল টুকটুকে গোলাপগুলো দেখে রীতিমতো সবাই অবাক হয়ে গেল! মনে মনে সবাই খুব খুশি হলো এবং আশিককে বাহবা দিতে একটুও ভুল করল না। সজীবের দাদু ও মাকে ইঙ্গিত করে ওর দাদি বলল, 'কী দেখলে বৌ মা, বলেছিলাম না আমার দাদু ভুল কিছু করছে না। এবার দেখেছো কত সুন্দর ফুল ফুটেছে!'
\হচশমা চোখে দিয়ে ভালো করে চারিপাশটা দেখতে থাকলো ওর দাদু। আর মিটিমিটি করে হাসতে থাকলো। ছাদের উপর চেয়ারটায় আরাম করে বসলো। এবার আশিককে কাছে ডেকে ওর দাদু জিজ্ঞেস করল, 'দাদু ভাই তুমি এত সুন্দর বাগান করে আমাদের ছাদে, পুরো পরিবেশটাই বদলে দিয়েছ। এখন বল, তুমি কী পুরস্কার চাও? তুমি আজ যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দেব।'
আশিক বলল, দাদু গতবার তুমি একুশে ফেব্রম্নয়ারিতে ফুলতো কিনে দাওনি এমনকি আমাকে শহীদ মিনারেও যেতে দাওনি। এবার আমার ছোট্ট একটা আবদার আছে। আগামীকাল একুশে ফেব্রম্নয়ারি। আর তুমিইতো বলেছিলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি এই দিনে রফিক, ছালাম, বরকত ওরা সবাই প্রাণ দিয়েছিল। ওরা আমাদের গর্ব। তাই চলো আগামীকাল আমরা বাড়ির সবাই, এই লাল টুকটুকে গোলাপ হাতে করে শহীদ মিনারে যাব এবং ভাষা শহীদদের উদ্দেশে পুষ্প অর্পণ করব।
এবার সঙ্গে সঙ্গে ওর দাদু আশিকের এমন কথা শুনে, ওকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন এবং হু হু করে কেঁদে ফেললেন। আর বললেন, অবশ্যই দাদুভাই আগামীকাল সকালে আমরা অবশ্যই শহীদ মিনারে যাব। যেমন কথা, তেমন কাজ। পরের দিন ওরা সবাই 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি' গান গাইতে গাইতে শহীদ মিনারে গেল।