রূপকথা
রাজকুমার ও জেলের গল্প
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
এস আর শাহ্ আলম
পাতালপুরীর রাজকুমার একদিন শখের বসে দলবল নিয়ে হরিণ শিকার করতে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু পথ ভুলে এক রাক্ষস পুরীর জঙ্গলে চলে যায়! তা দেখে রাক্ষস দলতো মহাখুশি। নেচে-গেয়ে বলতে লাগল, আহ কতদিন এই জঙ্গলে মানুষ আসে না! আমরাও কতদিন হলো মানুষের রক্ত পান করি না। আজ মজা করে সবাই এদের রক্ত-মাংস খাব! রাক্ষসদের অট্রহাসির শব্দ শুনে রাজকুমার এবং তার সঙ্গীদের গা শিউরে ওঠে। প্রাণে বাঁচার জন্য রাক্ষস দলের সঙ্গে সবাই যুদ্ধ করতে লাগলেন। সেই যুদ্ধে দুজন রাক্ষস ছাড়া বাকি সবাই মারা যায়। যুদ্ধ করতে করতে এক সময় রাজকুমার এবং সিপাহিরা ক্লান্ত হয়ে পড়েলেন। সেই সুযোগে প্রাণে বেঁচে যাওয়া রাক্ষস দুজন তাদের বন্দি করে ফেলে।
রাক্ষস পুরীর জঙ্গলের পাশেই ছিল এক নদী সেই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন একজন জেলে, সে ছিল খুব সাহসী এবং বুদ্ধিমান। সকাল থেকে জেলে বহুবার নদীতে জাল ফেলেছেন, তবুও কোনো মাছ তার জালে ধরা দেয়নি। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে জেলে মাথায় হাত দিয়ে মনের দুঃখে বলতে লাগল হায়রে কপাল আজ মনে হয় অনাহারে থাকতে হবে। হঠাৎ পাশের জঙ্গলে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে জেলে এগোতে লাগলেন। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে দেখতে পেল সুন্দর বেশভূষা রাজ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় এক যুবক কাঁটাতারের একটা গোলক কয়েদখানায় বন্দি হয়ে আছে। সামনে যেতেই রাজকুমার জিজ্ঞেস করল, তুমি কে ভাই, এখানে কেন এসেছো?
জেলে : আমি এক গরিব জেলে তোমার কান্নার আওয়াজ শুনে এসেছি।
রাজকুমার : এ আমার রোজকার কান্না! তুমি চলে যাও রাক্ষসরা এক্ষুনি এসে পড়বে। তখন আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না!
জেলে : আমি মৃতু্যকে ভয় করি না, বরং তুমি আমার কাছে সবকিছু খুলে বললে আমি তোমাকে মুক্ত করার চেষ্টা করব।
জেলের কথা শুনে রাজকুমার বেশ খুশি হলো এবং সবকথা খুলে বললেন। মনোযোগ সহকারে রাজকুমারের সমস্ত কথা শুনে জেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, তুমি নির্ভাবনায় থাকতে পারো, এই যে আমার কাছে চাকু দেখতে পাচ্ছো এটা দিয়ে ওই রাক্ষস সর্দার দুজনের পেট-পিঠ আলাদা করে ফেলব।
রাজকুমার : সেটা কখনো সম্ভব নয়, যুদ্ধ করার সময় যতবার আমার তরবারি দিয়ে ওই দুজনের মাথা-মুন্ডু আলাদা করেছি ততবার ওরা জীবিত হয়েছে ! পনেরো দিন হয়ে গেছে আমি এই কয়েদখানায় বন্দি। প্রতিরাতে রাক্ষসরা আমার একজন করে সঙ্গীকে খেয়ে ফেলেছে! বাকি আছি শুধু আমি। রাক্ষসরা সারাদিন বাইরে থাকে রাতে এখানে ফিরে আসে। মনে হচ্ছে ফিরে এসে আমাকে রাতেই খেয়ে ফেলবে।
জেলে : ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোমাকে ওরা খেতে পারবে না, আমি বুঝতে পারছি ওদের প্রাণ কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। কৌশলে আমাদের আগে সেটা জানতে হবে। তোমাকে একটা বুদ্ধি শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সেভাবে কাজ করবে, বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়ে জেলে লুকিয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে রাক্ষসরা চলে আসে। জেলের শিখানো বুদ্ধিতে রাজকুমার করজোড়ে মিনতি করে রাক্ষস দুজনকে বলল, ও ভাই রাক্ষস তোমরা তো একটু পরেই আমাকে খেয়ে ফেলবে তাই না?
রাক্ষস : হঁ্যা।
রাজকুমার : তবে মরার আগে তোমরা যদি আমার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে তাহলে আমি মরেও শান্তি পেতাম!
রাক্ষস: জানতে চাইল কি তোর শেষ ইচ্ছে?
রাজকুমার : আচ্ছা তোমাদের মেরে ফেলার জন্য কতবার আমি তরবারি দিয়ে তোমাদের মাথা-মুন্ডু আলাদা করলাম তবুও তোমাদের মৃতু্য হলো না কেন? হাসতে হাসতে রাক্ষসরা উত্তর দিল, আরে বোকা রাজকুমার, শুধু তুই কেন, পৃথিবীর কোনো মানুষ আমাদের হত্যা করতে পারবে না, আর যতবার হত্যা করবে ততবারই আমরা জীবিত হতে পারব!
রাজকুমার : কিন্তু তা কি করে সম্ভব?
রাক্ষস : আরে বোকা মানব সন্তান তোর এতকিছু জেনে কি লাভ?
রাজকুমার : দেখো ভাই রাক্ষস, লাভ ক্ষতির হিসাব বুঝি না। মরার আগে তোমরা আমার শেষ ইচ্ছেটা দয়া করে পূরণ কর?
রাক্ষস : আমাদের দুজনের প্রাণ লুকিয়ে আছে ওই নদীটার তলদেশে একটা কৌটা রাখা আছে ওটার মধ্যে! তোর শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়েছে?
রাজকুমার : হঁ্যা।
রাক্ষস : এখন তোকে মজা করে খাব!
রাজকুমার : দেখ ভাই রাক্ষস শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য বিগত রাতগুলো নির্ঘুমে কেটেছে আমার। আজ যখন ইচ্ছেটা পূরণ করেছ সামান্য রাতটুকু ঘুমাতে দাও, ভোর হলে আমাকে খেয়ে ফেলো তখন আমি মরেও শান্তি পাব। রাক্ষসরা ভেবে দেখল কি আর করা মাত্রতো একটি রাত। রাক্ষস এবং রাজকুমারের সমস্ত কথা শুনে জেলে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে রাক্ষসদের মেরে ফেলে। তারপর জেলকে সঙ্গে নিয়ে রাজকুমার পাতালপুরী রাজ্যে ফিরে যায় জেলেও রাজকুমারের সঙ্গে সারাজীবন সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দিলেন।
(রূপকথার গল্প অবলম্বনে)