রঙিন পলাশ
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
নূরজাহান নীরা
প্রকৃতিতে ফোটে নানান রঙের ফুল। সেই রঙিন ফুলের মাঝে রং ছড়াতে আসে পলাশ ফুলও। বসন্তের মিষ্টি ঝিরিঝিরি বাতাসের সঙ্গে দুলে ওঠে পলাশফুল। যেন প্রকৃতির মাঝে রঙিন পাখনা মেলছে প্রজাপতির বিচরণ। বসন্তে পলাশফুলের সঙ্গে শালিক, ময়না, বুলবুলি, কোকিল পাখিরাও মেতে ওঠে, ডাকাডাকি করে।
পলাশফুল নিয়ে লেখা আছে অনেক গান। দেশাত্মবোধক গানও আছে-
আমায় গেঁথে দেও না মাগো একটি পলাশ ফুলের মালা...।
আবার শিল্পীর কণ্ঠে এভাবেই উঠে এসেছে-
ও পলাশ ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে।
কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন-
হলুদ গাঁদার ফুল রাঙা পলাশ ফুল এনে দে এনে দে...।
পাতাহীন গাছে থোকায় থোকায় ধরে পলাশ ফুল। এত বেশি পরিমাণ ফুল থাকে যে ডালপালা সহজে চোখে পড়ে না। লাল, লালচে কমলা, হলুদ রঙের পলাশ ফুল দৃষ্টি কাড়ে সবার। পলাশফুলের গাছ ১২ থেকে ১৫ মিটার লম্বা হতে পারে। শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ এটি। এর ডালপালাগুলো বেশ আঁকাবাঁকা। বাকল ধূসর বর্ণের এবং অসমান। পলাশ ফুলের নতুন কচিপাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ন। পরিণত পাতা গাঢসবুজ ও যৌগিক। তিনটি পাতার সমাহার বা ত্রিপত্রী, দেখতে অনেকটা মান্দার গাছের পাতার মতো তবে আকারে বড়। শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায় আর গ্রীষ্মে নতুন পাতা গজায়। বসন্তে গাছ ভরে ফুল আসে। তখন গাছে পাতা থাকে না। পাতাহীন গাছে শুধু ফুল আর ফুল। টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। ফুল ছোট। দুই থেকে চার সে.মি. লম্বা হয়। পাঁচটি মুক্ত পাপড়ির একটি সবচেয়ে বড় এবং সামনে প্রসারিত। ঘনবদ্ধ ফুলগুলোর পাপড়ির আগা অনেকটা পাখির ঠোঁটের মতো সামনের দিকে বাঁকানো। ফুলের মাঝে কোকিল, বুলবুলি, ময়না, শালিক বসে থাকে। তখন ফুল আর পাখিদের পার্থক্য করা যায় না তেমন।
এই ফুলের কুঁড়িগুলো কালচে রঙের ও সারিবদ্ধ, কুঁড়ির আকৃতি অনেকটা বাঘের নখের মতো দেখতে। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতো চ্যাপ্টা। বীজ ও ডাল কেটে পলাশের বংশ বিস্তার ঘটানো হয়। বসন্তজুড়েই ফোটে এ ফুল। প্রকৃতিকে রাঙিয়ে রাখে এক মোহনীয় সৌন্দর্যে। বসন্ত শেষে ফুল ঝরে যায়, আবার নতুন পাতা গজায়।
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পলাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া পর্যন্ত এর বিস্তার। এর বৈজ্ঞানিক নাম ইঁঃবধ সড়হড়ংঢ়বৎসধ। এটি ঋধনধপবধব পরিবারের একটি বৃক্ষ। সংস্কৃিততে এটি কিংশুক এবং মনিপুরী ভাষায় পাঙ গোঙ নামে পরিচিত। পলাশ প্রকৃতির মাঝে যেমন মুগ্ধতা ছড়ায় তেমনি এর আছে বেশ কিছু ঔষধি গুণ। সাধারণ পেটের অসুখ, সূতাকৃমি, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে গাছের পাতা ও ছালের রস বেশ উপকারী।
এ ছাড়াও এ গাছের আরেকটি প্রধান ব্যবহার লাক্ষা উৎপাদনে। পলাশ গাছের বাঁকল থেকে যে আঠা পাওয়া যায় সে আঠ বেঙ্গল কিনো নামে খুবই প্রসিদ্ধ। এর ফুলের পাপড়ি থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়। তুঁতের সঙ্গে এ হলুদ রং মিশিয়ে খাকি রং তৈরি করা হয়।