সুজলা-সুফলা, ফুলে-ফসলে ঘিরে রেখেছে আমাদের দেশের প্রকৃতি। সবুজ আবরণে ঢাকা আমাদের সোনার বাংলাদেশ। ঋতুর কথা বললে- তা হবে এক অনন্য প্রকৃতি। বিভিন্ন দেশে গরম কিংবা ঠান্ডা মিলে বছরে দুই ঋতু, আবার কোনো দেশে তিন, চার ঋতুতে বিভক্ত। কিন্তু আমাদের দেশের প্রকৃতি ভেদে ঋতু বৈচিত্র্যকে বিভক্ত করেছে ছয় ঋতুতে। ঋতু ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি বিরাজ করে আমাদের দেশে। ঋতু এবং প্রকৃতি নিয়ে আমাদের বাংলাদেশ শীর্ষে।
ছয় ঋতুর মাঝে শীতকাল নানান প্রকৃতির নিয়ে আগমন করে। হেমন্তের কার্তিক থেকেই বার্তা মেলে শীতের আগমনের। কার্তিকের শেষ থেকেই হালকা শিশির ভেজা দূর্বায় দৃষ্টি গোচর হয়। ভোর বেলায় দেখা মেলে হালকা কুয়াশার। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যায় কুয়াশার চাদর। শিরশিরে বাতাসে শীতের অনুভব করা যায়। এই দিনগুলো দেখতে দেখতে চলে আসে পহেলা পৌষ। শুরু হতে থাকে শীতের কনকনে মেজাজ। সকালে কুয়াশায় ঘিরে ফেলে চারপাশ। সূর্যের যেন উদয় হতে খুবই কষ্ট হয়ে পড়ে, না ঠিক তা নয়- বরং কুয়াশার ঘোরটা কেটে উঠতে কষ্টকর হয়ে পড়ে।
পৌষ ও মাঘ বাংলার এই দু'মাস মিলে শীতকাল। শীতের সকালে সূর্যের আলোয় ফুলের হাসি যেন এক টুকরো মুক্তদানা। সরিষা ফুলের বিশাল বিশাল মাঠ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। হলুদে পুলকিত করে তোলে সরিষার ক্ষেতগুলো। মৌমাছিদের গুঞ্জন শোনা যায় হলদে ফুলের কাছে।? মৌমাছিরা এই ফুল থেকে সংগ্রহ করে ফুলের নির্যাস রসটুকু- যা থেকেই তৈরি করে মধু।
আমাদের দেশে ফুলের ভরপুর থাকে সারাবছরই কিন্তু এই ঋতুতে বেশি ফুল ফুটতে দেখা যায়।? সকাল বেলা গাছতলায় গেলে দেখা যায় বিছিয়ে আছে শিমুল ফুল। রূপের বাহার নিয়ে এই ঋতুতে দেখা দেয় গাঁদা, গোলাপ, সূর্যমুখী, চন্দ্রমলিস্নকা, ডালিয়া ও পপিসহ আরো অনেক নাম না জানা ফুল।
ফুলে যেমন ভরে উঠে গাছপালা ঠিক তেমনি ঝোঁপা ঝোঁপা ফলের ঘ্রাণও আসে। সারা বছরই কমবেশি ফল পাওয়া যায় কিন্তু মৌসুমি ফল মৌসুমেই দেখা মেলে। শীতকালীন নানান ফলের মধ্যে শীতের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব বড়ই, জলপাই, কমলা, সফেদা, আমলকীসহ সুস্বাদু নানান ফল। মৌসুমি ফলে রয়েছে বেশ উপকারী ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও নানা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই আমাদের মৌসুমি ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
ফুল ও ফলের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় হরেক রকমের শাকসবজি। শীতকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সবজি পাওয়া যায়। শীতকালে আমাদের দেশে নানারকম শাকসবজি উৎপন্ন হয়। যেমন: ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, আলু, গাজর, বেগুন, মুলা, লাউ, শিম, ধনেশাক, পালংশাক, লালশাকসহ নানা রকম সবজি। শীতকালীন শাকসবজিতে আছে মানব দেহের জন্য উপকারী ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, আয়োডিন প্রভৃতি। তাছাড়াও যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা জাতীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
শীত এলেই ধুম পড়ে যায় পিঠা-পুলির।? কৃষকের গোলায় উঠে আমন ধান। নতুন ধানের নতুন চালের নানানরকম পিঠা-পায়েসের আয়োজন করে ঘরে ঘরে। ভাপা পিঠার সঙ্গে যেন শীতের মিত্র। শীত এলেই ভাপা পিঠার স্বাদ নেওয়া যায়। নানান পিঠার মধ্যে শীতের সঙ্গে সঙ্গে যাদের আবির্ভাব ঘটে তন্মধ্যে ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, দুধ চিতই, পাটিসাপটা, খেজুর পিঠাসহ হরেক রকমের মজাদার পিঠা-পায়েসের আয়োজন হয় এই শীতে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি অনন্য স্বাদের পিঠা পুলি।
শীত যেন ফুল, ফল, পিঠা-পুলি শুধু এগুলোই নিয়ে আসে না, বরং একটি খেলাও যেন শীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তা হলো: ব্যাডমিন্টন। শীতের কুয়াশামাখা রাতে বিদু্যৎ সংযোগে বাতির আলোয় ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখা যায়। গ্রামের চেয়ে শহরে এই দৃশ্যটা বেশি চোখে পড়ে।
এই পৌষ মাঘের কনকনে শীতের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কার্তিকের শেষ থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত কমবেশি শীতের তৎপরতা থেকেই যায়। পৌষে-মাঘে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। নদীর দু'কূলে ভেসে উঠে চর। ডিঙি নৌকাগুলো নদীর চরে পড়ে থাকে। নদীর পানি কমে যায়। নানান বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের ঋতু এই শীতকাল। অধিকাংশ মানুষই এই ঋতু খুবই পছন্দ করে। প্রত্যেক ঋতুর চেয়ে এই ঋতু এক ভিন্ন আমেজে উপভোগ করে বাংলাদেশের মানুষ।