শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

গাঁয়ের বুড়ি

জুবায়ের মাহদি
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাঁয়ের বুড়ি

গ্রামের অদূরে একটি বিশাল বটগাছ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানে না কত কাল যাবত দাঁড়িয়ে আছে। বুড়ো দাদা ভাইরা বলে থাকেন, তারাও নাকি এটা শৈশবকাল থেকে এমনই দেখে আসছেন। বিকাল হলে বটতলায় নানা পেশাজীবী মানুষের ভিড় জমে। গাছের ছায়ায় কেউ শুয়ে শুয়ে আবার কেউবা বসে বসে খুশগল্প মেতে উঠেন। ভরদুপুরে কৃষকরা বটতলায় দলবেঁধে খাবার খায়। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে খানিকটা সময় জিরিয়ে নেয় তারা। সাতসকালে বিভিন্ন রকমের পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে আশপাশ। এত এত মানুষের আনাগোনা, কোলাহলের মাঝেও পাখিগুলো কোথাও সরে যায় না। বোধ হয়

বটগাছে থাকতে থাকতে তাদের বড্ড মায়া জমে গেছে গাছটির সঙ্গে। তাই বোধ হয় গাছটি ছেড়ে চলে যেতে তাদের ভীষণ খারাপ লাগে।

আয়মান তার দাদাভাইকে মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে।

ও দাদাভাই ! দাদাভাই!

একটি কথা শুনছেন!

আমাদের ওই যে বটগাছ আছে না; এটা নাকি সরকার কেটে ফেলবে? কত জঘন্য কাজ না এটা দাদাভাই! তুমি মাঝে মাঝে আমায় বটতলায় নিয়ে যাও। আমার ভীষণ ভালো লাগে ওখানে বসলে! কী সুন্দর শিরশিরে বাতাস! পাখিদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি। মনোরম পরিবেশ। আচ্ছা দাদাভাই বল তো যদি বটগাছ কেটে ফেলা হয় তাহলে পাখির কচি কচি বাচ্চাগুলো কোথায় যাবে?

ওরা তো এখনো উড়তে পারে না!

গড়গড় করে আয়মান এ সব বলে ধপ করে থামল।

আয়মান! শুনো!

সরকার ওখানে বটগাছ কেটে কৃষক এবং পদচারীদের একটা বিশ্রামাখার বানাবে। এটা একটা সুন্দর উদ্যোগ। তাই না আয়মান!

দাদাভাই!

বটতলার ছায়ায় তো কৃষকরা বিশ্রাম করে, তাহলে কাটার কি দরকার আছে? দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই ওখানে একটা বিশ্রামাগার বানিয়ে সরকার উন্নয়নের সাক্ষর রাখবে।

দাদাভাই!

বটগাছটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। গাছের ছায়ায় বসলে কী মজার বাতাস উপভোগ করা যায়! আমারও কষ্ট হচ্ছে বটগাছ কেটে দেবে শুনে। ওই যে ছেলেবেলা থেকে দেখতে দেখতে গাছটার সঙ্গে বেশ সখ্যতা উঠেছে আমাদের। আজ কেটে দেবে শুনে খুব খারাপ লাগছে। আমাদের কিছু করার নেই আয়মান। সরকারি নির্দেশ এটা কেটে ফেলা হবে।

দাদাভাই!

আমার মনে হয়, সরকার বটগাছটা কেটে ফেলে জলজ্যান্ত একটা প্রাণকে হত্যা করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে