মিতুর সফলতা

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আরবী রহমান কুসুম
আহা! কী সুন্দর আজকের এই সকাল। ঘাসের বুকে মুক্তার মতো চকচক করছে শিশির কণা। ছোট্ট মেয়ে মিতু। ওর ভীষণ সুন্দর একটা পুতুলও আছে। আবার ওই পুতুলের একটা ভালো নাম আছে। বিশেষ করে, মিতু ওকে মিঠু বলেই ডাকে। আজ মিতুদের স্কুলে নতুন বই বিতরণ করবে। তাই মিতুর মন আজ পুলকিত। সকালবেলা তড়িঘড়ি করে মিতু, মা আর মিঠুকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ রওনা দিল। মাঝ রাস্তায় মিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মিতুদের। তারা গল্পগুজব করতে করতে অবশেষে স্কুলে পৌঁছে। আজ বাহারি রংয়ের বেলুন দিয়ে সজ্জিত ছিল স্কুলপ্রাঙ্গণ। ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্রছাত্রীরা চেয়ারে বসে আছে। নতুন বই পাওয়ার আগ্রহ নিয়ে। মিতু এ বছর চতুর্থ শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তেমন একটা ভালো ফলাফল করতে পারেনি। তাইতো ক্লাস রোল ১৫ হয়েছিল। এই জন্য মিতু তার বাবা-মায়ের মুখে আনন্দের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিল না। বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে প্রথম অবস্থায় ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির বই দেওয়া হয়। পরিশেষে ৫ম শ্রেণির বই বিতরণ শুরু হয়। মিতু প্রহর গুনছে কখন বই দেবে। আগে যাদের রোল শুরুতে তাদের বই দেওয়া হয়। তারপর মিতুর বই দেওয়া হয়। মিতু নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মনের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে বই নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। নতুন বই কার না ভালো লাগে? তেমনি ভাবে মিতু নতুন বই মলাটে মুড়ানোর আগেই সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে গেল। মিতু শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামের 'সংকল্প' কবিতা পড়ছিল। বাবা মা আড়াল থেকে শুনছিল। তারা দু'জন মিতুর বই পড়ার আগ্রহ দেখে খুশিতে আত্মহারা। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে, 'তুমি আমার লক্ষ্ণী মেয়ে। আমি জানি, তুমি সামনে ভালো কিছু করবে। এই মনোবল নিয়ে তুমি তোমার মতো করে পড়ালেখা চালিয়ে যাও। দেখবে, 'একদিন তুমি সবাইকে টপিকে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হবে। বাবার অনুপ্রেরণায় মিতু মনে সাহস পেল। মনের মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি জানান দিল। মিতু মনে মনে, বলতে লাগল। আমাকে যে কোনোভাবে ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হওয়া লাগবে। আমার বাবার স্বপ্ন আমাকে পূরণ কর?তে হবে। যেই কথা, সেই কাজ। মিতু খুব মনোযোগ দিয়ে ইদানীং পড়ালেখা করছে। ক্লাস পরীক্ষায় সবার চেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে টিচারের থেকে কলম উপহার পায়। এক সময় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা হয় সেই পরীক্ষায় মিতু প্রত্যকটা বিষয়ে ৯৫ করে নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। স্কুলের সব টিচারের মুখে এখন শুধু একটাই নাম মিতু। পরিশেষে ডিসেম্বরের ১২ তারিখ মিতুদের বার্ষিক পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় মিতু প্রথম স্থান অর্জন করে। অসামান্য সাফল্যের জন্য তার টিচাররা গর্ববোধ করে। মিতুদের এই স্কুল থেকে একমাত্র মিতুই বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাচাইকৃত হয়। উপজেলার সব মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। নোটিশ বোর্ডে মিতুর বাবা গিয়ে দেখতে পায়। ট্যালেন্টপুল বৃত্তির মেধাতালিকায় মিতুর নামটা সবার আগে। অর্থাৎ উপজেলার মধ্যে মিতু ১ম হয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। মিতুর আনন্দ কে দেখে! মিতু আজ অনেক খুশি। মিতুর বাবা এই খুশিতে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালো। মিতু বাবাকে গিয়ে বলল, 'বাবা এখন আমার রোল এক। অবশেষে আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। বাবা বুকে জড়িয়ে বলে। মা'রে মানুষ চেষ্টা করল সবকিছুই করতে পারে। তবে তার মধ্যে সেই মনোবল থাকতে হবে। আমি তোমার মধ্যে সেই মনোবল দেখতে পেয়েছিলাম। তোমাকে বলেছিলাম তুমি পারবে। মিতু বাবার গালে চুমু খেয়ে বলে হঁ্যা বাবা আমি পেরেছি।