বিজ্ঞান কল্পগল্প

স্কুলে এলিয়েন

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অলোক আচার্য
'একটা মজা দেখবি?' কি? মিজান স্যার বলেছে, আজ পড়া না হলে সবাইকে মারবে, ঠিক? ঠিক? 'আজ দেখবি মিজান স্যার কাউকেই মারবে না। আমি মিজান স্যারের মাথার ভেতর ঢুকে বেত মারার বিষয়টা বের করে দেব।' 'যাহ,' কিন্তু, সত্যি সত্যি সেদিন মিজান স্যার পড়া না পেলেও কাউকে মারল না। কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে ক্লাসে থাকলেন। মনে হলো, কেউ মিজান স্যারকে ভেতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তন্ময়ের কথা প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে আর বিশ্বাস না করার উপায় থাকে না। এটা কি বিশ্বাস করার মতো কথা হলো! তবে এটা তো আর প্রথম ঘটনা না। এই তো ক'দিন আগেই রেজাল্ট কার্ড দিল। সেখানে স্পষ্ট দেখা গেল তন্ময় আবিরের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। সব বিষয়ে তন্ময় ফার্স্ট। আবিরের মন খারাপ। এটা তন্ময় বুঝে গেল। বলল, ভাবিস না, ক্লাসের ফার্স্ট বয় তুই-ই থাকবি। তোর নাম্বারই বেশি! পরদিন দেখা গেল, তন্ময়ের নাম্বারগুলো সব আবিরের হয়ে গেছে! আর আবিরের নাম্বার তন্ময়ের। জানুয়ারি মাসের এক সকালে ক্লাসে আসতে একটু দেরি হয়ে যায় আবিরের। ক্লাসে এসেই দেখে তার জায়গায় অপরিচিত একটি ছেলে বসে আছে। কোঁকড়ানো লালচে ধরনের চুল। চোখের মণিও লাল। গায়ের রং তামাটে ধরনের। ক্লাসে স্যার থাকায় সে কিছু না বলে পেছনে গিয়ে বসলো। সেদিন ক্লাস শেষে জানলো নতুন ভর্তি হওয়া ছেলেটার নাম তন্ময়। তন্ময় ওর দিকে হাত এগিয়ে দিল। সেদিন থেকেই শুরু তারপর আবিরের সঙ্গে ছেলেটার বেশি একটা কথাবার্তা হয়নি। এভাবেই দিন কাটছিল। স্যাররা ধরেই নিয়েছে এবার পরীক্ষায় আবিরের দুই রোল হবে। আর তন্ময় হবে প্রথম। শুধু স্যাররা কেন, ক্লাসের সবাই তাই জানে। আবিরও জানে। কিন্তু ওর কি-ই বা করার আছে। কেউ যদি ওর চেয়ে ভালো পরীক্ষা দেয় তাহলে তো ভালোই হওয়ার কথা। ওর এটা সহ্য হয় না। মোটেই না। কিন্তু দু'জনের একদিন ঠিক মিল হয়ে গেল। সেটা বেশ আশ্চর্যের ঘটনা। সেদিন ক্লাসে আবিরের ইংরেজি পড়া হয়নি। এদিকে কোনোদিন ওর পড়া মিস হয়নি। ইংরেজি স্যার যখন একে একে সবাইকে জিজ্ঞ্যেস করছে তখন আবির ভয়ে, লজ্জায় এতটুকু হয়ে আছে। সেদিন আবার তন্ময় ওর পেছনেই বসেছিল। পেছন থেকেই সে খোঁচা মেরে বলল, কি রে তোর পড়া হয়নি? আবির বিরক্ত হলেও মাথা ঝাঁকায়। তোর খুব লজ্জা লাগছে? 'হু'। 'এক কাজ কর, তোর ইংরেজি বইটার দিকে একবার মনোযোগ দিয়ে তাকা। দেখবি পড়া হয়ে গেছে।' আবিরের তখন ভয়ে এমন অবস্থা যে কোনো কিছু ভাবার অবস্থা নেই। ব্যাগের ওপর রাখা ইংরেজি বইটার দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকালো। আশ্চর্য! আজকের পড়াটা যেন মাথার ভেতর ঢুকে গেল! এটা কীভাবে সম্ভব? এরপর আবিরের সঙ্গে তন্ময়ের গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। দেখতে দেখতে ডিসেম্বর এসে গেল। ক'দিন পরেই ফাইনাল রেজাল্ট দেবে। অনেক দিন তন্ময়ের সঙ্গে দেখা হয় না। স্কুল বন্ধ। ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ দুপুরে হঠাৎ আবিরের বাসায় তন্ময় এসে উপস্থিত। সে কোনো দিন তন্ময়কে ওর বাড়ির ঠিকানা দেয়নি। আবির একটু অবাকই হলো। তন্ময় ওকে নিয়ে স্কুলের মাঠে গেল। তখন বিকাল হয়ে এসেছে। 'তুই আমাকে এখানে আনলি কেন?' 'বলছি। শোন,এখন আমি যা বলবো সেটা তুই হয়তো বিশ্বাস করবি না। কিন্তু সবটাই সত্যি। আর বিশ্বাস না করলেও কোনো সমস্যা নেই। আমি তো আর আসব না! আমি আগেও বলেছি, আমার গ্রহের কথা। আমি আসলেই এই পৃথিবীর কেউ না। আমার গ্রহের নাম 'এক্স-২০০'। এখান থেকে একশ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। আমাদের কোনো আকার নেই। ইচ্ছামতো যা কিছুই হতে পারি। এই যে এখন দেখছিস একটু পর আর থাকব না।' 'একটু পর তুই কি হবি? 'একটু পর আমি আলোর ক্ষুদ্র কণা হব। সেই কণায় আমি পৌঁছে যাব মহাশূন্যে। তারপর সেখান থেকে আলোর কণা ধরেই আমার গ্রহে পৌঁছে যাব। সন্ধ্যা করা যাবে না। সূর্যের আলো মিলিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে কয়েক মিনিট সময় লাগবে। আমাকে এখানে পাঠনো হয়েছিল পৃথিবীর মানুষ বন্ধু হিসেবে কেমন হয়, তাদের আচরণ, দুষ্টু বুদ্ধি, ভালোবাসা ইত্যাদি পরীক্ষা করতে। সেটা শেষ হয়েছে। আমার ফিরে যাওয়ার সংকেত এসেছে। এই দ্যাখ, আমার কপালের মাঝের অংশ নীল হয়ে উঠেছে। আবির তাকিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই ওর কপালের মাঝের অংশটা নীল হয়ে উঠেছে। তারপর হঠাৎ তাকিয়ে দেখে আবিরের পাশে কেউ নেই। তার পরিবর্তে ওর শরীরজুড়ে অদ্ভুত আলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবির বুঝলো সেটাই তন্ময়। তারপর আলোটা বিকালের শেষ আলোর সঙ্গে মিলিয়ে গেল। মনে মনে বলল, ভালো থাকিস বন্ধু।