শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

সুবিধাবঞ্চিতদের আলোর পথিক 'উন্মুক্ত পাঠশালা'

তাদের মধ্যে অনেকের পরণে ভালো পোশাক নেই। জীর্ণশীর্ণ শরীর। হয়তো সকালে পেট ভরে খায়নি। তবুও তারা আলোর পথ খোঁজে, তারাও সম্পদ হতে চায়, তারাও শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে চায়। তাই তো বিরূপ পরিবেশ তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। তারা চলে আসে জ্ঞান আহরণ করতে 'উন্মুক্ত পাঠশালা'র এই আঙিনায়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত বাধা আর বিভিন্ন দুর্বলতার কারণে এসব শিশুর জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা দিতে পারছে না পাঠশালাটি।
আরিফুজ্জামান উজ্জল
  ০৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি রুমের সমন্বয়ে টিনের চালের একটি বাড়ি। বাড়িটির কাছে যেতেই একটি রুমের ভেতরে দেখা গেল কিছু শিশু মেঝেতে বসে পড়ছে। তাদের সামনে আছে ছোট ছোট টুল। আর তাতে রাখা আছে বই, খাতা, পেন্সিল ও ব্যাগসহ নানা শিক্ষা উপকরণ। রুমের ভিতরে একজন শিক্ষক তাদের পড়াচ্ছেন বাংলা বর্ণমালা, গণিত, ইংরেজিসহ নানান বিষয়। এই একটি রুমের তৈরি স্কুলের নাম 'উন্মুক্ত পাঠশালা'। যেখানে বিনামূল্যে পাঠদান দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত শিশুদের। যারা কিছুদিন আগেও পস্নাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বা খেলাধুলা করে দিন কাটাতো, তারা এখন এই স্কুলের কল্যাণে হরেক রকমের স্বপ্ন আঁকে।

তাদের মধ্যে অনেকের পরণে ভালো পোশাক নেই। জীর্ণশীর্ণ শরীর। হয়তো সকালে পেট ভরে খায়নি। তবুও তারা আলোর পথ খোঁজে, তারাও সম্পদ হতে চায়, তারাও শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে চায়। তাই তো বিরূপ পরিবেশ তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। তারা চলে আসে জ্ঞান আহরণ করতে 'উন্মুক্ত পাঠশালা'র এই আঙিনায়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত বাধা আর বিভিন্ন দুর্বলতার কারণে এসব শিশুর জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা দিতে পারছে না পাঠশালাটি। তারপরও শিশুদের আলোর দিশা দেখাতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পাঠশালাটির প্রতিষ্ঠাতা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের উইকেন্ড কোর্সে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী তৌহিদ মোরশেদ নোমান।

এখানে প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ মোরশেদ নোমানের পাশাপাশি আরও একজন শিক্ষিকা এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান দিয়ে থাকেন। এ স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি তাদের মধ্যে ব্যাগ, বই, খাতা, কলম ও চকোলেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর জন্য আয়োজন করা হয় খেলাধুলাসহ নানা অনুষ্ঠান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে নিয়মিত পালন করা হয় জাতীয় দিবসগুলো। সম্প্রতি মুজিববর্ষ উপলক্ষেও স্কুলটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

'উন্মুক্ত পাঠশালা'র শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, আমার অনেক আগে থেকেই বাচ্চাদের পড়ানোর প্রতি ইচ্ছা ছিল। গ্রামের বাড়ি নঁওগা থেকে এসে এখানে বেকার বাসায় বসে থাকতাম। পরে একদিন নোমান স্যার আমাকে বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য বলেন। সেই থেকে এখানে তাদের পড়ানো শুরু করি। তাদের পড়াতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বিরক্ত হই। কিন্তু কিছু সময় ওরা এমন কথা বলে যেগুলো মন ভরিয়ে দেয়।

রিকশাচালক রমজান আলী ও গৃহিণী হিরা বিবির মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মারুফা বলেন, আগে কোন স্কুলে পড়াশোনা করতাম না। স্যার ও ম্যাডাম আমাদের খুব যত্ন করেন। স্যার মাঝেমধ্যে আমাদের চকোলেট, খাতা ও পেন্সিল কিনে দেন। তাই এখানে পড়তে আসতে অনেক ভালো লাগে।

প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর মা গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার স্বামী সামান্য বেতনে একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। এখানে বাচ্চাদের ফ্রি পড়াতে পারছি। স্বামীর বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পরে বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য খরচ দিতে কষ্ট হয়ে যেত। আর এখানের স্যার ও ম্যাডাম অনেক ভালোভাবে প্রাইভেট পড়ানোর মতো করে পড়ায়।

'উন্মুক্ত পাঠশালা'র প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ মোরশেদ নোমান বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আমার আগে থেকেই ছিল। তার প্রেক্ষিতে একদিন দেখি একটি ছেলে মাঠে দাঁড়িয়ে বড়দের ফেলে দেয়া জ্বলন্ত সিগারেট খাচ্ছে। আমি তার কাছে গিয়ে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। সে সময় জানতে পারলাম তার নাম সাগর। তার মা রানা পস্নাজা ট্র্যাজেডিতে আহত একজন কর্মী এবং বাবা রিকশাচালক। আর্থিক দিক ভালো নয় বলে সে স্কুলে যেতে পারে না। তখন মনে হলো এই ছেলেটাকে দিয়েই শুরু করা যেতে পারে। আর সে লক্ষ্যেই ২০১৭ সালে সাগরকে নিয়েই 'উন্মুক্ত পাঠশালা' নামের এ স্কুলটি চালু করি। প্রথম দিন সাগর ক্লাস করার পর ওর ছোট ভাইকে নিয়ে এলো। তারপর আশপাশের বস্তিতে গিয়ে সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে স্কুলে নিয়ে আসি। এখন এ স্কুলে নার্সারি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রায় ৫০ জন শিশুকে পড়ানো হয়। সমাজের বিত্তবান মানুষকে পাশে পেলে স্কুলটি আরও এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে জেনে স্থানীয় কমিশনার নজরুল ইসলাম মানিক মোলস্না স্কুলটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতাদের নিয়ে নৈশকালীন একটি স্কুল করারও ইচ্ছা আছে। তারাও এ স্কুলে পড়ার আগ্রহ জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<91737 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1