শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

পাহাড় ও সমুদ্রের কোলে...

মাহমুদুর রহমান মানিক
  ২০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

একাডেমিক জীবনের বাইরে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন পরিবার প্রতি বছরের মতো এ বছরও শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম পাহাড়ের সবুজ অরণ্যের মাঝে মেঘের কোলে ভাসতে ও সমুদ্রের নীল জলরাশির ঢেউকে আপন করে নিতে বান্দরবান, কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. জেবউননেসা ম্যামের তত্ত্বাবধানে চারজন শিক্ষকসহ আমরা চুয়ালিস্নশ জন শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাত ৮টায় যাত্রা শুরু করে যখন বান্দরবান পৌঁছাই তখন রাতের আঁধার কেটে পাহাড়ের সবুজ বুকে ভোরের আলো কেবল ফুটতে শুরু করেছে। বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল যেন সবুজ পাহাড় ও নীল আকাশে সাদা মেঘের পসরা সাজিয়ে বসে আছে, সেই মেঘে সোনালি রোদের আলোর ঝটকায় যে বিক্ষিপ্ত সৌন্দর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা মনের মরমে যেয়ে প্রবেশ করে। এক দুপুর পর্যন্ত ভেসে বেড়ানো মেঘের নিখাঁদ সৌন্দর্যে ডুবে থেকে বিকেলে আমরা সবাই দেখতে যাই মারমা হীনযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান স্বর্ণ মন্দিরে; এই পবিত্র স্থানেই রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির। পরের দিন সকালে বান্দরবানের সবুজ পাহাড়ের মায়া কাটিয়ে সমুদ্রের টানে চলে আসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। প্রায় অর্ধদিনের ভ্রমণ ক্লান্তি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঢেউয়ের গর্জনে নিমিষেই উবে যায়। আমাদের স্টাডি টু্যরের চতুর্থ ও পঞ্চম দিন কাটে দেশের সর্ব দক্ষিণের স্থান ও অন্যতম সুন্দর দ্বীপ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। টেকনাফ থেকে যখন আমাদের জাহাজ নাফ নদীর বুক চিড়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দিকে রওনা দেয়, তখন আমাদের পিছু নেয় পাখা মেলে উড়তে থাকা একঝাক মায়াবী গাঙচিল। সমুদ্র ও গাঙচিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলে আসি নীল সৌন্দর্যের নগরী সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। চারদিকে বঙ্গোপসাগরের বিশাল নীল জলরাশি আর তার মাঝে ছবির মতো সুন্দর ও নয়নাভিরাম এই প্রবাল দ্বীপ। আমরা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করি, আড্ডা গানে মুখরিত ছিলাম পুরোটা সময়। বীচ ফুটবল ম্যাচে মনির উদ্দিন শিকদার স্যার ও সাইফ স্যারও আমাদের সঙ্গে অংশ নেন, সমুদ্রে নামেন। এরপর বিকেলটা কাটে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের 'সমুদ্র বিলাস'-এর সামনে আর পড়ন্ত বিকেলে নীল পানির এপার থেকে সে দিনের জন্য সূর্যকে বিদায় জানানো এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর সূর্যও যেন একটু হেসে পূবের আকাশে একফালি চাঁদ রেখে বিদায় নিল। চাঁদনি রাতে খোলা আকাশের নিচে সমুদ্র তীরে বার্বিকিউ, ছেলেমেয়ে ও শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা গেমের আয়োজন শিক্ষা সফরের সে রাতের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়। চাঁদের আলোয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপ তার লুকিয়ে রাখা মায়াবী সৌন্দর্য সমুদ্রের নীল পানির ঢেউয়ে ভাসিয়ে এনে পর্যটকদের মনের তীরে নোঙর ফেলে। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম বলেই পূর্ণিমা রাতের সেন্ট মার্টিনও উপভোগ করতে পারি। সে রাতে পায়ে হেঁটে সাইফ স্যারের সঙ্গে রাতের সেন্ট মার্টিন উপভোগ, মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে গান, সেই গানের সঙ্গে সমান তালে সুর তুলে মিষ্টি সুন্দর ঢেউয়ের সুর লহরী। শিক্ষা সফর শুধু উপভোগের জন্য নয়- শিক্ষণীয় ও ভ্রমণের স্থানকে কিছু দিয়েও আসতে হয়। আর তাইতো ডিপার্টমেন্টের শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান ম্যামের নির্দেশে আমরা সবাই হাত দিলাম হোটেলের সামনে সৈকতে পড়ে থাকা পলিথিন ও পস্নাস্টিকের বোতল পরিষ্কারের কাজে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ জায়গা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি কিন্তু আমরা সচেতন হলেই যে ভ্রমণের স্থান সুন্দর থাকবে সে শিক্ষা ম্যাম আমাদের দিয়েছেন এই উদ্যোগের মাধ্যমে। স্থায়ীভাবে পাহাড় ও সমুদ্রের স্বর্গীয় সৌন্দর্যের মাঝে ডুবে থাকার কোনো অবকাশ নেই, গুনে গুনে অসাধারণ পাঁচটি দিন পার করে এবার ক্যাম্পাসে ফিরতে হবে। লোকপ্রশাসন পরিবারের সঙ্গে পাহাড় ও সমুদ্রে আনন্দ উলস্নাসে কাটিয়ে দেওয়া এই পাঁচদিন আমাদের জীবনের অন্যতম সুন্দর দিন সে কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে