শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

মেঘের রাজ্যে দুদিনের বসবাস

চোখ যতদূর যায়, ততদূর দেখি শুধু পাহাড় আর পাহাড়। গাড়ি কখনো বিশাল উঁচুতে আবার কখনো নিচুতে ওঠানামা করে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের পথে। অবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। আমরা দুটি রিসোর্ট ভাড়া করলাম রাত্রি যাপনের জন্য। রুইলুইপাড়ার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের খোলসে চা আর ব্যাম্বু চিকেন খেলাম। দিনভর ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজি করে রাতের কোনো এক প্রহরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাহবুব রায়হান
  ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাথা উঁচু করে যে মেঘ আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি! তাকে যদি হাত দিয়ে ছুঁই, তার পরশে নিজেকে আলিঙ্গন করে আসতে পারি, তবে কেমন অনুভব হয়? বলছি, মেঘের রাজ্যখ্যাত রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ভ্যালির কথা। গত ২৩ ডিসেম্বর আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা এ বছরের ভ্রমণস্থান হিসেবে সাজেক ভ্যালিকে বেছে নেই। সেদিন যে যার মতো প্রস্তুতি নিয়ে ঠিক ১২টায় প্রেস কর্নারে জড়ো হলাম। আমরা প্রত্যেকের নিজ নিজ দ্বায়িত্ব বুঝে নিলাম। গাড়ি ক্যাম্পাস ক্রস করল ঠিক ২টা বেজে ৪৫ মিনিটে। আমাদের ভ্রমণে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ড্রাইভার হিসেবে আছেন ক্যাম্পাসের পাক্কা ড্রাইভার হাসমত ভাই। গাড়ি ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। দুঃখের বিষয় এবার কোনো সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু আমার মতো গান প্রেমিকেরা আর স্থির থাকতে পারল না। শুরু হলো গানের আসর। সন্ধ্যা নেমে এলো। শীতের প্রকোপ একটু বেশি হওয়ায় আমরা গরম পোশাক পরিধান করে জবুথবু হয়ে অবস্থান করছি গাড়িতে। গাড়ি রাজবাড়ী এসে ব্যাপক জ্যামে পড়ল। প্রায় সোয়া একঘণ্টা পর জ্যাম কাটিয়ে অবশেষে ফেরিতে উঠলাম।

চারিদিকে ঘন কুয়াশা, অথৈ জলরাশির মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে ফেরি। নদীর সঙ্গে মানুষের যে মিতালী, সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছিলাম। ফেরি পার হওয়া মাত্রই আবার হইহুলেস্নাড়ে মেতে উঠল সবাই। শুরু হলো জারি গান, লালনগীতি ফোক আর জেমস প্রেমিকদের পছন্দের সব গান গাওয়া। দেখতে দেখতে রাত ১টা বেজে গেল, সবাই শ্রান্ত-ক্লান্ত শরীরে এবার ঘুমের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত হয়ে গেল। চোখ মেলে দেখি খাগড়াছড়ির আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে অবিরাম গতিতে। ইতোমধ্যে আমরা আলুটিলার দেখা পেলাম। যেখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। শহর থেকে সকালের নাস্তা শেষ করে আমাদের গাড়ি দ্রম্নত গতিতে এগিয়ে চলল সম্মুখপানে। উদ্দেশ্য ঠিক ১০টায় দীঘিনালা থেকে ছেড়ে যাওয়া চান্দের গাড়িতে (জিপ) ওঠা। আমরা তিনটি গাড়ি ভাড়া করলাম। দীঘিনালা বাজার থেকে সাজেকে যেতে ৩ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। আমরা গাড়ির ছাদে উঠে পড়লাম। চোখ যতদূর যায়, ততদূর দেখি শুধু পাহাড় আর পাহাড়। গাড়ি কখনো বিশাল উঁচুতে আবার কখনো নিচুতে ওঠানামা করে এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের পথে।

অবশেষে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। আমরা দুটি রিসোর্ট ভাড়া করলাম রাত্রি যাপনের জন্য। রুইলুইপাড়ার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের খোলসে চা আর ব্যাম্বু চিকেন খেলাম। দিনভর ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজি করে রাতের কোনো এক প্রহরে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর ৫টা বেজে ৫ মিনিট। টুংটাং বেজে উঠলো মোবাইল ফোনের অ্যালার্ম। সবাই দ্রম্নত উঠে রেডি হয়ে নিলাম। উদ্দেশ্য কংলাক পাহাড়ে মেঘের বিচরণ দেখতে যাব। সকাল ৬টায় চান্দের গাড়িতে করে মেঘের সঙ্গে সখ্যতা করতে যাব সবাই। আগের দিন বলা হয়েছিল, কেউ গাড়ি মিস করলে তাকে রেখে যাওয়া হবে। রেডি হয়ে রুম থকে বেরিয়ে পড়লাম সবাই। রাস্তায় গাড়ির সামনে সবার সমাগম। ড্রাইভার আসছে না। সবাই অস্থির, কখন যাব মনের পাখা দিয়ে মেঘের ভেলায় ভাসতে।

এদিকে কেউ একজন লক্ষ্য করল, রাস্তার ধার থেকে মেঘমালা দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার কোনোভাবেই বিশ্বাস করছে না এগুলো সাদা মেঘ। কেউ কেউ কুয়াশা বলে হাসাহাসি করছে। একেকজন একেক ধরনের যুক্তি দিচ্ছে পক্ষে-বিপক্ষে। পাল্টাপাল্টি যুক্তি দিতে দিতেই ড্রাইভার এলো। তখন ৬টা বেজে ১৭ মিনিট। এদিকে কারো আর অপেক্ষা সইছে না। মেঘের সঙ্গে মিতালি করতে গাড়িতে উঠে পড়লাম। চান্দের গাড়ি চলল কংলাক পাহাড়ের উদ্দেশে। কংলাক হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। তথ্য মতে, এই পাহাড়ের চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৮০০ ফুট উঁচু। কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দৃষ্টি কেড়ে নেয়। গাড়ি এসে থামলো পাহাড়ের নিচে। বাকি পথ হেঁটে উঠতে হবে। গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ি পথ বেয়ে সবার হাঁটা শুরু হলো। কেউ আবার ভিডিও করছে পাহাড়ি রাস্তা।

একপর্যায়ে উঠে পড়লাম কংলাক পাহাড়ের চূড়ায়। যেখান থেকে মেঘমালার ভেসে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কংলাকের চূড়ায় উঠার সঙ্গে সঙ্গেই দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি অনেকে সেলফি, ছবি তোলা, ভিডিও করায় মেতে উঠেছে দৃশ্যটিকে ধারণ করতে। মন বলে, 'আমি যদি পাখি হতাম, তবে মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়াতাম।' সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরেক অপরূপ দৃশ্য হাজির। সূর্যের আলোয় মেঘমালা যেন নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠল। তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। পাহাড়ের গায়ে যেন আটকে যাচ্ছে মেঘ। মেঘে ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়। তখন হুমায়ুন আহমেদের দেখাদেখি 'মেঘের উপর বাড়ি' বানাতে মন চাচ্ছিল। আমাদের সময় ফুরিয়ে এলো। যে যার মতো দৃশ্যগুলো মনের দৃশ্যপটে ধারণ করে আমরা চলে এলাম রেস্টুরেন্টে। সকালের নাস্তা সেরে নিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে আবার গাড়ির সামনে হাজির হলাম। গাড়ি যে ঠিক ১০টায় ছেড়ে যাবে! সবকিছু স্বল্পসময়ের মধ্যে দেখে শেষ করলেও মনের তৃপ্তিটা যেন অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল। এভাবেই শেষ হলো মেঘের রাজ্যে দুদিনের বসবাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84062 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1