শিক্ষার্থীদের ভাবনায় শিক্ষাগুরু
প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মো. আশিকুজ্জামান ও কাজী ফারাহ তাসফিয়া
'শিক্ষাগুরুর মর্যাদা' কবিতাটি তো ছোটবেলায় সবাই কম বেশি পড়েছি। কবিতায় আমরা দেখি, শিক্ষক একজন সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বাদশাহ আলমগীরের ছেলের দ্বারা পায়ে পানি ঢেলে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাদশাহ আলমগীর এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বাদশাহ আলমগীর প্রত্যাশা করেছিলেন, তার সন্তান পানি ঢেলে নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দেবেন। তবেই না তার সন্তান নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম নিয়ে দেশের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাদশাহ আলমগীর উপলব্ধি করেছিলেন, যে ছাত্র তার শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে জানে না, শিক্ষকের সেবা করতে জানে না, সে কখনো পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।
যারা আজকে আমার এই প্রতিবেদনটি পড়ছেন বা আমি নিজেও যে এই প্রতিবেদনটি লিখছি, এই অবদানও কিন্তু একজন শিক্ষকেরই। শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন সেটির কান্ডারি। তিল তিল করে নীরবে নিভৃতে শিক্ষক তার আদর্শ দ্বারা জাতীয় আকাঙ্ক্ষার উপযোগী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলেন। সমাজ ও দেশের জন্য শিক্ষকের অবদান অপরিসীম। তাই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সবার ওপর।
৫ অক্টোবর। বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষককে স্মরণ করার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। তবে অক্টোবরের ৫ তারিখ ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে সারা বিশ্বেই পালিত হয়? শিক্ষকদের জন্য নিবেদিত এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের মনোভাব তুলে ধরেছেন বাকৃবির শিক্ষার্থী কাজী ফারাহ তাসফিয়া।
বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী খোশনূর ইয়াসমিন রত্না জানান, 'একজন শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষকের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। স্কুল-কলেজ থেকে ভার্সিটির লাইফ প্রায় অনেকটাই আলাদা। ভার্সিটির শিক্ষকদের ভূমিকাও অনেকটা ভিন্ন আঙ্গিকের। নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর শিক্ষাদান দিয়ে থাকেন তারা। একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার গঠন অর্থাৎ লাইফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পাশে থেকে সাজেশন দিয়ে থাকেন ভার্সিটির শিক্ষকরা। তাই শিক্ষক দিবসে আমাদের জীবনের সব শিক্ষককে জানাই শ্রদ্ধা আর শিক্ষক দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।'
বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মো. মিরাজ উদ্দিন বলেন, শিক্ষক দিবস শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ। আমার মতো একজন শিক্ষার্থীর ভাবনায় এই দিনটিতে শিক্ষকদের গুরুত্বকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান দেন না, তারা জীবন চলার পথে সঠিক দিকনির্দেশনা ও মূল্যবোধও শেখান। তারা কঠোর পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন। শিক্ষক দিবসে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো একটি ছোট প্রয়াস হলেও এর মাধ্যমে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি প্রকাশ পায়।
বাকৃবির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আদেল মোহাম্মদ কিবরিয়া জানান, 'একজন শিক্ষার্থীর জীবনে একজন শিক্ষকের প্রভাব কতখানি, তা পরিমাপ করা অসম্ভব। শিক্ষক হলেন, সেই সত্তা, যিনি একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ার পথ দেখিয়ে দেন। সে জন্য একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার শিক্ষক হলো আবেগের জায়গা, শ্রদ্ধার জায়গা এবং তার আদর্শ। তাই শিক্ষক দিবসে মানুষগড়ার এমন নিঃস্বার্থ কারিগরদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা'।
বাকৃবির আরেক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নূরেজান্নাতী জেবা বলেন, 'আমার জীবন ও ভবিষ্যৎ গঠনকারী শিক্ষকদের সম্মান করার একটি বিশেষ উপলক্ষ্য হলো- শিক্ষক দিবস। প্রত্যেক শিক্ষকই কোনো না কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, প্রতিকূলতা অতিক্রম করার পথনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আমিও আমার শিক্ষকদের কাছ থেকেই সমালোচনামূলক চিন্তা করার এবং প্রয়োজনে উদার ও মানবিক হওয়ার শিক্ষা পেয়েছি। আমার কাছে 'শিক্ষক দিবস' হলো তাদের পরিশ্রম ও অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি ক্ষুদ্র আয়োজনমাত্র।'
বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থী জয়শ্রী ভদ্র স্বর্ণা জানান, 'শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কারিগর যেমন কাঁচা মাটির তাল নিয়ে অতি সযত্নে একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করেন, শিক্ষকও তেমনি অতি সযত্নে আমাদের কাঁচা মনের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করেন এবং ধাপে ধাপে আরও শীর্ষে উঠার পথকে মসৃণ করে দেন।
বাকৃবির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী আল সাউদ সৌহার্দ্য বলেন, 'টিচার্স ডে উপলক্ষে সব শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ জ্ঞাপন করছি। আমার ফেভারিট টিচার এগ্রি ক্যামিস্ট্রির মহিউদ্দিন স্যার। কারণ, ইউনিভার্সিটিতে শুরুর ক্লাসগুলো থেকেই স্যারের পড়ানো আর টিচিং গাইডেন্স আমার ভালো লেগেছে। ভালো থাকুক শিক্ষক নামের মানুষ তৈরির সব কারিগর।'
বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের মো. আশিকুর রহমান জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছে। তবে লেকচারার শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং বন্ধুসুলভ আচরণ পড়াশোনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করে। ভেটেরিনারি অনুষদের ব্যবহারিক পড়াশোনায় এমন শিক্ষক থাকলে বেশ সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোপরি বাংলাদেশের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাই শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা। প্রতিবছর অক্টোবরের পাঁচ তারিখে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে 'শিক্ষক দিবস' পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস, শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্যের প্রশংসা করার জন্য উদ্যাপন করা হয়।'
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মাসুম বিলস্নাহ তরফদার বলেন, 'শিক্ষকদের অবদান শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের চরিত্র ও মূল্যবোধ গঠনেও তা অপরিহার্য। আমার শিক্ষাজীবনের কিছু শিক্ষকের ব্যবহার, জীবনযাপনের ধারা এবং দূরদর্শিতা আমাকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছে। তারা শুধু আমাকে জ্ঞান দেননি, বরং সঠিক পথে চলার পথও দেখিয়েছেন। তাই এই বিশেষ দিনে আমি আমার শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।'