বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

কাশবনে এক বিকেল

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সাঈদা জাহান খুকী
দিনটি ছিল শরতের এক সোনালি সকাল। দীর্ঘদিনের টানা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পর আমরা সেমিস্টার শেষে ছুটি পেয়ে যেন নতুন করে স্বস্তি অনুভব করছিলাম। ছুটির এই দিনগুলো বাসায় বসেই কাটাচ্ছিলাম, এরই মাঝে ফেসবুকে দেখলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের কাশবনের ছবি। ছবি দেখে ইচ্ছা হলো ঘুরতে যাওয়ার, আর সঙ্গে সঙ্গে বান্ধবীদের নিয়ে ঠিক করলাম দিনক্ষণ, আজই বিকেলে যাওয়া হবে। সারাবছর ক্লাস আর পড়ার চাপে খুব একটা ঘোরাঘুরির সুযোগ হয় না, তাই এই সুযোগটা আমরা একদমই হাতছাড়া করতে চাইনি। সবার মাঝে একটা অন্যরকম উচ্ছ্বাস কাজ করছিল। কে কোন পোশাক পরবে, কোন জুতা বা চুড়ি মিলিয়ে নেবে এসব নিয়েই সবার মধ্যে উত্তেজনা। বিকেল পর্যন্ত সময় যেন আনন্দে কেটে গেল। বিকেলের আগেই সবাই প্রস্তুত হয়ে নিলাম, তারপর দল বেঁধে হাঁটা শুরু করলাম আমাদের গন্তব্যে। হল থেকে বের হয়ে সাবধানে কে আর মার্কেটের রাস্তা পার হয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে দিয়ে আমরা পৌঁছলাম ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। পাড়ে পৌঁছে দেখি, আমাদের মতো আরও অনেকেই সেখানে সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন। নদীর পাড়ের একটি দোকান থেকে ঝালমুড়ি কিনে নিয়ে আমরা সন্তর্পণে নেমে গেলাম নৌকার ঘাটে। একটা নৌকা ভাড়া করে উঠে পড়লাম। নৌকা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল, নদীর বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আর তার মাঝে হালকা বাতাস আমাদের যাত্রা আরও মনোরম করে তুলেছিল। দূর থেকেই কাশবনের সৌন্দর্য আমাদের মনকে মোহিত করছিল, সবুজ গাছপালার মাঝে সাদা তুলোর মতো কাশফুলগুলো বাতাসে দুলছিল। নদীর ওপারে পৌঁছে আমরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুলগুলো যেন মাটির উপর নেমে আসা সাদা মেঘের টুকরো। নীরবতায় ভরা কাশবন আমাদের মনকে এক অদ্ভুত প্রশান্তি দান করল। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়ে আমরা যেন সময়ের হিসাব ভুলে গিয়েছিলাম। বারবার মাথায় ঘুরছিল অভিষেক ভট্টাচার্যের সেই কবিতার লাইন : 'বনবীথি ছেয়ে থাকা সাদা কাশফুল, শারদ বাতাস লাগি হয়েছে আকুল; তুষার আবিরে মাখা ঘন কাশফুল, নদীর দুকূল জুড়ে করে ঢুলুঢুল।' প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের মাঝে বসে আমাদের আড্ডা চলছিল, আর আমরা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বিকেলের সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ছিল, তখন বুঝলাম আমাদের ফিরে আসার সময় হয়ে গেছে। যদিও মন একদমই চাইছিল না ফিরতে, তবুও বাধ্য হয়ে ফিরতে হলো। ফুলগুলোর মাঝে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম, যেন এই বিশেষ মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারি। এই কাশবনে ঘুরতে আসার অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের সবার জন্য একেবারেই অনন্য। আমরা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গিয়ে যতটা মজা করেছিলাম, তা সত্যিই মনে রাখার মতো। হাসি, আড্ডা, আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার সেই মুহূর্তগুলো আমাদের বন্ধুত্বের সোনালি স্মৃতি হিসেবে চিরকাল থেকে যাবে।