শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

দেশে প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যোগ শুরু হওয়া গুচ্ছ পরীক্ষা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ করে। তবে এই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বেশিরভাগই সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি। এর ফলে একদিকে বাকৃবি হারাচ্ছে তার স্বকীয়তা, অন্যদিকে আসছে না গুচ্ছ পদ্ধতির আশানরূপ সাফল্য। এমতাবস্থায় কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন- মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

স্বকীয়তা হারাচ্ছে বাকৃবি

মো. বকুল আলী

স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ

দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ, সবুজ গালিচাময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ও গবেষণায় আমাদের বাকৃবিতে বিগত বছরগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে। কিন্তু সম্প্রতি 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুসারে, বাকৃবির অবস্থান ষষ্ঠ, যা খুবই দুঃখজনক। কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার রং হারাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষায় কখনও কোনো ভুল বা অনিয়মের গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলোর পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বারবার। একসময় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকার ভিত্তিতে দেশের শীর্ষ স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত। তবে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কম জিপিএ নিয়েও ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারছে, যা বাকৃবির স্বকীয়তা নষ্ট করছে। সুতরাং বাকৃবিকে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে অবশ্যই কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করি।

সেশনজটের অন্যতম কারণ

মো. ওমর ফারুক

পঞ্চম বর্ষ, ভেটেরিনারি অনুষদ

বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা বা গবেষণার মাতৃ প্রতিষ্ঠান বলা হয় বাকৃবিকে। কৃষিগুচ্ছের কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব স্বকীয়তা দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। প্রথমত এখানে আগে পরীক্ষা নেওয়া হতো সর্বোচ্চ মেধাবীদের বাছাই করে নেওয়ার পরে, যা এখন আর বিদ্যমান নেই। পরীক্ষা দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এতে অনেক সময় দেখা যায় যাদের চান্স পাওয়ার কথা নয়, তারাও চান্স পেয়ে যায়। এছাড়া কৃষিগুচ্ছের পরীক্ষা সবার শেষে অনুষ্ঠিত হওয়াতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে এর সম্মুখীন হচ্ছে, যা বিগত দিনে ছিল না। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের দিকটি বিবেচনা করে গুচ্ছ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যা বাস্তবিক অর্থে তেমন ফলপ্রসূ হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কেননা অনেক দূরদূরান্ত থেকেও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসে। এরপর ভর্তি, একাধিক মাইগ্রেশনের জন্য একাধিকবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের ভোগান্তির নজিরও আছে। তাই গুচ্ছের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি বলে আমার মনে হয়। তাই অন্যান্য স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখা, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে বাকৃবির উচিত কৃষিগুচ্ছ থেকে বের হয়ে এককভাবে পরীক্ষা আয়োজন করা।

সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি

সুমন গাজী

প্রথম বর্ষ, কৃষি অনুষদ

২০১৯ সাল থেকে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার চালু হওয়ার পর এপর্যন্ত পাঁচটি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ সমন্বিত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই সর্বমহলে প্রশ্ন ওঠে, বাকৃবির স্বকীয়তায় ভাটা পড়ল কিনা বা কৃষিগুচ্ছতে বাকৃবির থাকা উচিত কিনা। আমি বলব কৃষিগুচ্ছের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে। যেহেতু একবারই পরীক্ষা হয়, তাই শিক্ষার্থীদের ভিন্নমাত্রিক প্রস্তুতি নিতে হয় না। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ ও সুবিধামতো কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারে। এছাড়া জিপিএ স্কোর কম নিয়েও ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করে বাকৃবিতে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়, যা বাকৃবি এককভাবে পরীক্ষা নিলে ক্ষেত্রবিশেষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণেরও সুযোগ হতো না। বিপরীত দিকে গুচ্ছতে নিজস্ব প্রশ্ন কাঠামোতে ভর্তি-পরীক্ষা নিতে না পারায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের যাচাইয়ের সুযোগ কমে আসছে। ভর্তি পরীক্ষায় কারিগরি ত্রম্নটির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। গুচ্ছে নেতৃস্থানীয় নীতিনির্ধারক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও নিজস্ব মূল্যায়ন পদ্ধতি না থাকায় বাকৃবির স্বকীয়তা হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাকৃবির স্বকীয়তা-স্বতন্ত্র মান বজায় রাখতে কৃষিগুচ্ছে থাকা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। 

বিতর্কিত হয়েছে বারবার

মো. ফজলুল করিম সিয়াম 

প্রথম বর্ষ, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী কৃষিবিদ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাকৃবিতে আসে। তবে এর জন্য তাদের উত্তীর্ণ হতে হয় ভর্তি পরীক্ষায়। ২০১৯ সালে বাকৃবির অধীনে প্রথমবার অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পরীক্ষাটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলেও ২০২০-২১ সেশন থেকে তৈরি হয় বিতর্ক। যার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- পরীক্ষার প্রশ্ন নিরাপত্তা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার নিরাপত্তা ত্রম্নটি। সে বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো কেন্দ্রজনিত সমস্যা এবং প্রশ্নফাঁস ও কোনোরকম নোটিশ ছাড়া ফলাফল পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটে। পরবর্তী বছরগুলোতেও কৃষিগুচ্ছের প্রশ্নের মান নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। তাছাড়া বিশাল অঙ্কের এই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ব্যবস্থাপনার মতো সক্ষমতা কৃষিগুচ্ছের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এসব বিতর্কের অংশীদার হয়ে বাকৃবি নিজের সুনাম হারাচ্ছে। তাই প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাকৃবির উচিৎ কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে যত দ্রম্নত সম্ভব বেরিয়ে আসা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে