বাকৃবিতে নতুন উদ্যমে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনগুলো যেন এখন এক স্মৃতিমাত্র। আন্দোলনের উত্তাপ, হল বন্ধের ঘোষণা, ক্লাস-পরীক্ষার অনিশ্চয়তা- সবকিছু মিলিয়ে বাকৃবি ক্যাম্পাসে একটা স্থবিরতা নেমে এসেছিল। শিক্ষার্থীরা তখনও জানত না কবে আবার তাদের স্বাভাবিক জীবন শুরু হবে। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর থেকে দৃশ্যপট একেবারে বদলে গেল। ক্যাম্পাসে ফিরল শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ, শুরু হলো ক্লাস, পরীক্ষা ও ল্যাবের কার্যক্রম।
সেদিনের সেই দিনগুলো মনে করতে গিয়ে জয়নাল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'কত দুশ্চিন্তা ছিল। পড়াশোনা বন্ধ, পরীক্ষা কবে হবে- এসব চিন্তায় পুরো সময়টা কেটে গেল। কিন্তু যখন শুনলাম ১ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে, মনে হলো যেন সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে।' জয়নালের মুখে ছিল একরকম শান্তির হাসি। এই হাসিই বলে দিচ্ছে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের মনে নতুন এক উদ্যমের জন্ম হয়েছে।
অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন বৈষম্য ও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের আন্দোলন সেই সময় বড় আকার নিয়েছিল। ১ জুলাই থেকে ক্লাস বন্ধের ঘোষণা আসে, আর ১৮ জুলাই হলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের মনে তখন অনেক প্রশ্ন, ভবিষ্যতের চিন্তা। কেউই জানত না কবে ফিরবে স্বাভাবিক ছন্দ। কিন্তু সবকিছু কেটে গিয়ে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার শুরু হয় নতুন অধ্যায়।
তৃণা, চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী, জানান, 'যখন শুনলাম সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তখন কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা কমেছিল। সেশনজটের ভয় আমাদের সবাইকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে আবারও সব ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও সেই সময় দ্রম্নত কাজ করেছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কৃষিবিদ ওয়াহিদা ইয়াসমিন তখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যেন শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট না হয়। তিনি জানান, 'বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও আমি কিছু কাজ আগেই করে রেখেছিলাম। খোলার পরপরই যাতে পরীক্ষা শুরু করা যায়, সেই প্রস্তুতি ছিল। এখন নিয়মিত পরীক্ষা চলছে এবং খুব শিগগিরই সব বর্ষের পরীক্ষা শেষ হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুলস্নাহ বলেন, 'শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন শিক্ষা কাকর্যক্রম বন্ধ ছিল। এর আগে করোনা মহামারির কারণেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতেই বাকৃবি প্রশাসন দ্রম্নততম সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন দ্রম্নততম সময়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের পরিবেশ এখন নতুন করে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরাই উদ্যোগ নিয়ে ডাইনিংয়ের মান উন্নত করার কাজ করেছে। এদিকে সেশনজট এড়াতে ফ্যাকাল্টির ডিনরাও সিলেবাস দ্রম্নত শেষ করার জন্য কাজ করছেন। ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় হলো পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্যই আমরা দ্রম্নত কার্যক্রম শুরু করেছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই এখন ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমি গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আরও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছি, যাতে করে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো কিছুতেই অপচয় না হয়। আন্দোলনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় আছে কি না সেটি জানার জন্য আমি নিজে হলগুলোও পরিদর্শন করছি। নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করছি শিক্ষার দিক দিয়ে বাকৃবি হবে দেশের সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়।'
এভাবে ধীরে ধীরে সবকিছু ঠিক হয়ে আসছে। আন্দোলনের সেই দিনগুলো এখন শুধু স্মৃতি। নতুন উদ্যমে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের লক্ষ্যের পথে- পড়াশোনা, পরীক্ষা এবং ক্যাম্পাসের প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দিচ্ছে বাকৃবি।