বৃষ্টিভেজা বিকেল

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

তানিউল করিম জীম
বৃষ্টিভেজা এক বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের চত্বরে প্রাণবন্ত এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ থেকে তৈরি বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত মৎস্য পণ্যের এই প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল সাবির এগ্রো, সওদাই বাজার এবং আবিদ এগ্রো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।  বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করে। ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন প্রদর্শনীর প্রাণচাঞ্চল্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই প্রদর্শনী দেখতে আসেন। একদিকে চলছিল পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া মাছ থেকে তৈরি ফিস কাটলেট, ফিস স্ট্রিপ, ফিস বল, ফিস পাউডারসহ নানা পণ্যের প্রদর্শনী। অন্যদিকে সেখানে উপস্থিত দর্শনার্থীদের জন্য সরাসরি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছিল মুখরোচক সেইসব খাবার। বৃষ্টির মধ্যে  শিক্ষার্থীরা যখন পণ্যের বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন, ঠিক তখনই মেলা প্রাঙ্গণের এক পাশে তৈরি হচ্ছিল সুস্বাদু ফিস কাটলেট, ফিস বল এবং ফিস স্ট্রিপ। বৃষ্টির শীতল বাতাসে ভেসে আসা সেই তাজা রান্নার সুগন্ধ যেন সবার মন জয় করে নেয়। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা একে একে ভিড় করে সেসব খাবার খেতে, যেন বৃষ্টির বিকেলকে উপভোগ্য করে তুলতে বাকি নেই কিছুই। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রিতে খাবার বিতরণ করছিল, আর শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে তা উপভোগ করছিল। বৃষ্টির ছোঁয়ায় মনোরম পরিবেশে এমন অনুষ্ঠান যেন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহেদ রেজা তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের দেশে মাছের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও অনেকেই কাটা ও প্রসেসিং ঝামেলার কারণে মাছ খেতে অনীহা প্রকাশ করে। এ প্রদর্শনীতে যে ধরনের পণ্য দেখানো হয়েছে, তা মাছের প্রসেসিং শিল্পে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষত, যারা কর্মজীবী এবং সময়ের সংকটে থাকেন, তারা এই পণ্যগুলো কিনে সরাসরি রান্না করতে পারবেন, যা সময় এবং শ্রম বাঁচাবে। প্রদর্শনীতে আরও অংশ নেন ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এবং অনুষদের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ড. ফাতেমা হক বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ মৎস্য খাতের ভবিষ্যৎ। ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে, আজ সেগুলো বাস্তবে দেখার সুযোগ পেয়ে তাদের মধ্যে অনেক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। এমন উদ্যোগ তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীরা কেবল প্রদর্শনী উপভোগ করেনি, তারা বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য সম্পর্কে জানতে পেরে অনেকটাই আগ্রহী হয়ে ওঠে। আবিদ এগ্রোর একজন প্রতিনিধি জানান, আজকের মতো প্রতিক্রিয়া আমরা আশা করিনি। আমাদের ফিশ বল, ফিস স্ট্রিপ এবং অন্যান্য পণ্য শিক্ষার্থীরা এতটা পছন্দ করবে, তা ধারণার বাইরে ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত পণ্য বাজারে সফলতা পাবে। প্রদর্শনীর শেষে এক আলোচনায় ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, আমরা বইয়ে পড়েছি মাছের প্রক্রিয়াজাত পণ্য কীভাবে তৈরি হয়, তবে আজ সরাসরি এই পণ্যগুলো দেখে এবং খেয়ে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হলো। প্রক্রিয়াজাত মাছের এসব পণ্য ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় হবে বলে আমার বিশ্বাস।