বাকৃবি কৃষি জাদুঘর :কৃষিজ উপকরণে নিবিষ্ট সংগ্রহশালা

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের স্মৃতি সংরক্ষণে বিলুপ্তপ্রায় কৃষিজ উপকরণের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা, বাকৃবি কৃষি জাদুঘর যেন এক অনন্য উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস :২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. মুস্তাফিজুর রহমান কৃষি জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জাদুঘরের উদ্বোধন করেন এবং ২০০৭ সালের ৩০ জুন এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অবস্থান :বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের প্রশাসনিক ভবন থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সামনে জাদুঘরটি অবস্থিত। উদ্দেশ্য :আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন কৃষি যন্ত্রপাতি বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রাঙ্গণে স্থাপিত কৃষি জাদুঘর সেই সব বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। স্থাপত্য ও বিন্যাস : জাদুঘরটি পাঁচ একর আয়তনে অষ্টাভুজী ভবন। ভবনের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে উন্মুক্ত জমি ও ফুলের বাগান। জাদুঘরের ছয়টি প্রদর্শনী কক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে প্রায় সাত শতাধিক উপকরণ, যা বড় কাঁচের তাকে সাজানো রয়েছে। প্রবেশ লবিতে রয়েছে বিচিত্র মাছের অ্যাকুরিয়াম এবং সাতটি খনার বচন। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রদর্শনী কক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে বিভিন্ন পরিচিত ও অপরিচিত উপকরণ। তৃতীয় প্রদর্শনী কক্ষটিকে বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা যায়, যেখানে বাংলার গৃহস্থালিতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত উপকরণগুলো স্থান পেয়েছে। অন্য প্রদর্শনী কক্ষগুলোতে জমি চাষাবাদের যন্ত্রপাতি এবং পূর্বে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাদি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রদর্শনীর বিশদ বিবরণ :বাঁশ, বেত, কাঠ ও লোহার উপকরণ :টুকরি, মাথাল, ঝুড়ি, কাইলং, কুরুম, মুরগির খাঁচা, দা, কাঁচি, কুলা, কোদাল, লাঙল, মই প্রভৃতি প্রদর্শিত হচ্ছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রাংশ :সয়েল টেস্টিং কিট, সবজি বীজ শোধন যন্ত্র, সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, ধান মাড়াই যন্ত্র, স্প্রে মেশিন, পাওয়ার টিলার প্রভৃতি আধুনিক কৃষি যন্ত্রাংশও রয়েছে। তামা ও পিতলের উপকরণ :ডেক, থালা, গস্নাস, জগ, বাটি, কলসি, পুষ্পপত্র, পানের ডাবর, ডেকচি, গামলা, হাঁড়ি, মালসা, বালতি প্রভৃতি উপকরণ রয়েছে। মাটির উপকরণ :মটকা বা গজি, ডহি ঢাকনাসহ, পাতিল ঢাকনাসহ, সানকি, ভাতের থালা, মাটির তৈরি বাঘ, পিঠার ছাঁচ, মাটির ব্যাংক, ঝানঝরের তলা প্রভৃতি। মাটি ও সার জাতীয় উপকরণ :বেলে, দো-আঁশ, এটেল, বিজয়পুরের চীনা মাটি, পিট, রাইজোবিয়াম জীবাণু সার, গুটি ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, মিশ্রসার, জিপসাম। বিরল প্রজাতির ধান :বাইলাম, কাইশাবিন্নি, নাজিরশাইল, কটকতারা, পাইজং, বোরো, কুমড়ি, গোবিন্দ ভোগ, মোগাই বালাম প্রভৃতি ধানের প্রজাতি। ওষধি উদ্ভিদ ও ফলমূল :কাইজেলিয়া, বিলম্বী, আমলকি, হরতকি, বহেরা, জয়ফল, বেল শুঁটকি, অশ্বগন্ধা, নাগর মুখ, গোক্ষর কাঁটা প্রভৃতি। মাছ ধরার উপকরণ :লুই বা ওচা, বাইর বা ছই, তেরা, খালুই, চেং, বাইর, চরকা ছিপ, উড়াজাল, পলো, চান্দি বাইর, ডুবো ফাঁদ, উছা, ডোলা, মইয়া জাল, শাংলা জাল, নৌকা প্রভৃতি। বাদ্যযন্ত্র :একতারা, তরুই বাঁশের বাঁশি, দোতারা, লাউয়া, করতাল, খুনজুরি, জিপসি, তবলা, বেহালা, কাঠি ঢোল, হারমোনিয়াম। দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা :জাদুঘরটি প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী পরিদর্শন করে। এটি শহরের মানুষদের জন্য গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য উপভোগের সুযোগ করে দেয়। শুক্রবার ছাড়া বাকি সব দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। কৃষি জাদুঘর সম্পর্কে ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডক্টর আশরাফুজ্জামান বলেন, 'কৃষি সংশ্লিষ্ট বিশাল সংগ্রহশালা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। এখানে প্রায় সাত শতাধিক কৃষি উপকরণ রয়েছে, যা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।