'আরম্ভিছে শীতকাল, পড়িছে নীহার-জাল,
শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন;
মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের ওপর
বিষাদে প্রকৃতিমাতা শুভ্র বাষ্পজালে গাঁথা
কুজ্ঝটি-বসনখানি দেছেন টানিয়া;
পশ্চিমে গিয়েছে রবি, স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা,
বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা।'
- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আকাশে কালো মেঘের দিন শেষ। গায়ে লাগছে শীতল হাওয়ার আলতো ছোঁয়া-এভাবেই শেষ হচ্ছে শরৎ। আর কার্তিকের হাত ধরেই ষড়ঋতুর বাংলায় হেমন্তের আগমন হবে। শীতকালের আলাদা এক ধরনের আমেজ থাকে। শীত মানেই স্থবিরতা হলেও প্রকৃতিতে আসে এক নতুনের ছোঁয়া।
বাংলার আশ্বিন মাসের অর্ধেক শেষ হতে না হতেই শীতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে কুয়াশা। এক হাজার ২৩০ একরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে ঘন কুয়াশা দেখে মনে হবে যেনো মাঘ মাসের কোনো এক সময়। ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এটি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, যাকে প্রতিটি ঋতুতে নতুন করে সাজতে দেখা যায়। কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে সবুজ রঙয়ের বাকৃবি নিয়ে লিখেছেন কাজী ফারাহ তাসফিয়া।
গত সোমবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা মেলে ঘন কুয়াশার। জুম আর্থের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ সময় বাকৃবি ক্যাম্পাসের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশার মধ্যেই বাকৃবির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠে দল বেঁধে মেঘের মতো সাদা বকদের খাবার খেতে দেখা যায়। একপাল গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে এসেছে রাখালরা। গরু ও বকের একসঙ্গে খাবার খাওয়ার দৃশ্য সত্যিই ভীষণ মনোমুগ্ধকর। সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদ থেকে কুয়াশার কারণে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল সোহরাওয়ার্দী হলের ভাই হল খ্যাত ফজলুল হক হল। সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠ থেকে প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না বঙ্গবন্ধু হল। এ ছাড়া কুয়াশার মধ্যে দিয়ে কর্মজীবী মানুষ ও 'কু ঝিক ঝিক' শব্দ করে ট্রেনের ছুটে চলা মাঘের শীতকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল।
বাকৃবির প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী জয় মন্ডল বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে কুয়াশার দৃশ্য মনকে একদম চাঙ্গা করে দেয়। বাকৃবি ক্যাম্পাস প্রকৃতিকন্যা হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতিকন্যার অপরূপ সেই সৌন্দর্য দেখেই বারবার মুগ্ধ হতে হয়।
আরেক শিক্ষার্থী মো. মিরাজ উদ্দিন বলেন, বাকৃবির সৌন্দর্যে প্রতিবারই আমি বিমোহিত হয়েছি। ষড়ঋতুর ছোঁয়া এখনো বাকৃবিতে দেখা যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্যের ছোঁয়া নিতে চাইলে অবশ্যই বাকৃবি ক্যাম্পাস ঘুরে যাওয়া উচিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং ময়মনসিংহ শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে এই ক্যাম্পাসের অবস্থান এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সের মেঘালয়া রাজ্যের সীমান্ত থেকে দূরত্ব মাত্র ৬৭ কিলোমিটার।
এ ছাড়া পাকিস্তান আমলে তৈরি হওয়া এই বাকৃবিতে প্রকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। যেমন- কৃষি মিউজিয়াম, বোটানিক্যাল গার্ডেন, আম বাগান, লিচু বাগান, নারিকেল বাগান, বিস্তৃর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ, ব্রহ্মপুত্র নদ, এশিয়ার সর্ববৃহৎ জার্মপস্নাজম সেন্টার, ডেইরি ফার্ম, ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল, বৈশাখী চত্বর, বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্বেকার তৈরি বিভিন্ন স্থাপত্য, বিভিন্ন ভাস্কর্য, মরণসাগর, তিন কোণা ও লম্বা আকৃতির শহীদ মিনার, এক গম্বুজবিশিষ্ট দেশের সর্ববৃহৎ মসজিদ ইত্যাদি।