বৃষ্টির সাজে নব রূপে বাকৃবি

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

মো. আশিকুজ্জামান
'আমার ধুলো জমা ক্লান্ত বিবর্ণ শহরে বর্ষণ নামুক, প্রাণের ছোঁয়ায় যৌবন ফিরে পাক তৃষ্ণার্ত ভূমি! মেঘ তার ভেঙে যাবার বেদনায় কাঁদতে থাকুক। তবে কতদিন? যতদিন না প্রকৃতির তিয়াশ মিটে, আমার দেশ, আমার মাটির প্রাণ সঞ্চার পর্যন্ত।' গত কয়েকদিনের দমবন্ধ করা গরম থেকে যেনো এক নিমিষেই স্বস্তি নিয়ে এসেছে একটানা ঝুম বৃষ্টি। কবির ভাষাতেই আমার পুরো শহরজুড়ে আজ বৃষ্টি নেমে এসেছে, নবযৌবনের সতেজতায় ছেয়ে গেছে রুক্ষ প্রকৃতি। একরাশ সতেজতা নিয়ে গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে হঠাৎই ঝুমঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। ক্লাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছি প্রকৃতি আর বৃষ্টির মাখামাখি। প্রতিটি ফোঁটা যেনো প্রকৃতির বুকে ভালোবাসার ছোঁয়া এঁকে দিচ্ছে। প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বৃষ্টিমুখর একটি দিনের কথা লিখেছেন মো. আশিকুজ্জামান। এক হাজার ২৩০ একরের সবুজের মহাসমারোহে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাকৃবি বৃষ্টিতে সত্যিই এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে। জব্বারের মোড়, টিএসসি, নদের পার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠ, লাভ রোড, লন্ডন ব্রিজ, কে. আর মার্কেট, বৈশাখী চত্বর, কৃষিবিদ চত্বরসহ সব ক্যাম্পাসেই যেন এক নতুন ধরনের সজীবতা ফিরে আসে। কে. আর মার্কেট বা জব্বারের মোড়ের আওয়ালের দোকানে এক কাপ চায়ের সঙ্গে বিনামূল্যে বৃষ্টিবিলাস, একটি মাত্র ছাতার নিচে দল বেঁধে বন্ধুদের হেঁটে যাওয়া, ছাত্রদের হলের মাঠে বা কৃষিবিদ চত্বরে ফুটবলে মেতে ওঠা, কে.আর মার্কেটের ভূতের গলির তিন ভাজাপোড়া খাওয়া কিংবা প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাস- সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আবার, বৃষ্টির দিনে সম্পূর্ণ আবাসিক বাকৃবির হলে হলে চলে রুমমেটদের নিয়ে খিচুড়ি রান্নার মহা উৎসব। ভুনা খিচুড়ির গন্ধে মৌ মৌ করে পুরো হল। হঠাৎই আবার কোনো ছেলের কাছে উত্তরপাড়া থেকে আসে প্রেমিকার খিচুড়ি পার্সেল। এ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কয়েক দফা হাসাহাসি ও খুনশুটি চলতে থাকে। প্রেমিকার হাতের রান্না একা খাওয়ার সুযোগ নেই। বন্ধুদের নিয়েই তো এখন একটা পরিবার। ভাগাভাগি করে খাওয়া চলে উত্তরপাড়ার দারুন মজাদার খাবারের পার্সেলগুলো। দক্ষিণপাড়া থেকেও যে প্রেমিকার কাছে খিচুড়ি পার্সেল যায় না, ব্যাপারটা একবারে অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সেই খিচুড়ি নিয়েও বান্ধবীদের মধ্যে ভাগাভাগি চলে নাকি লেখক তা বলতে পারবে না? কারণ, লেখক দক্ষিণপাড়া নিবাসী। এই বৃষ্টি বিলাস নিয়ে প্রেমিক যুগল ছাড়াও হাজারও শিক্ষার্থীর হাজারও রকম অনুভূতি রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকেই না হয় কয়েকজনের অনুভূতি জেনে নেওয়া যাক। বাকৃবির শিক্ষার্থী সন্দীপ সাহা বলেন, ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেকটা যান্ত্রিক জীবন কাটাতে হয়। তাই বৃষ্টির দিন পেলে খুবই ভালো লাগে। যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার ভেতর একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। এ ছাড়া আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালার পরিমাণও বেশ ভালো। হল থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরতে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে টঙের চা পানের অনুভূতিটা তো আরও অসাধারণ। বাকৃবির আরেক শিক্ষার্থী রিসালাত আলিফ বলেন, ক্যাম্পাসে বৃষ্টির দিনগুলো সবারই প্রিয়। বৃষ্টির দিনে ভিজে কেউবা মেতে ওঠে আড্ডা-গানে, কেউবা বেরিয়ে পড়েন প্রিয়জনের সঙ্গে রিকশা ভ্রমণে। বৃষ্টিবিলাসে ক্যাম্পাসের মাধুর্য আরও বেড়ে যায়। ক্যাম্পাসের চা-এর দোকানে ভিড় জমে যায় বৃষ্টিবিলাসী চা প্রেমিদের? এমন দিন বাকৃবিতে বারবার ফিরে আসুক। আরেক শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল বলেন, তপ্ত গরমের পর সজীবতা নিয়ে আসল রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির পরশে আরও সজীব, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা বাকৃবির অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে যে কেউ হারিয়ে যাবেই। বৃষ্টির দিনের ক্যাম্পাসের চেহারা সত্যিই অন্যরকম। কাজের প্রতি সবারই যেন গা-ছাড়া ভাব। প্রকৃতিকে উপভোগেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।